করোনাভাইরাস: শপিং ডেলিভারি ও টেইকএওয়ে কতটা নিরাপদ?
যেহেতু করোনাভাইরাস মানুষের হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়ায়, তাই শপিংয়ে যাওয়া বা অন্যান্য লোকজনের সাথে মেলামেশা ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে সামাজিক দূরত্ব অর্থ্যাৎ কমপক্ষে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক দোকানপাট তা প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন করছে।
‘লন্ডন স্কুল অব হাইজীন এন্ড ট্রপিকাল মেডিসিন’ এর অধ্যাপক স্যালি ব্লুমফিল্ড বলেন, সুপারমার্কেট গুলো ভাইরাস স্হানান্তরের জন্য একটি আইডিয়াল সেটিং সরবরাহ করতে পারে। অনেক লোক বিভিন্ন সামগ্রী এমন একটি সময়ের কথা স্মরণ করুন মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে যখন মৌলিক নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য সুপারমার্কেটে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধাজ্ঞা ছিলো না, তা এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রাত্যাহিক জীবণযাত্রা নিয়ন্ত্রণে সরকারের গৃহীত নতুন শপিং সংক্রান্ত পদক্ষেপ প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন, যেখানেই থাকুন জনগণের উচিত ‘খাদ্য ডেলিভারি সার্ভিসসমূহ ব্যবহার করা’।
কিন্তু কথা হচ্ছে, খাবার কেনা কিংবা গ্রহণের অথবা টেউকএওয়ে গ্রহণের সবচেয়ে নিরাপদ পন্হা কী? চেক আউট বেল্ট, ক্যাশ কার্ড, কারপার্ক টিকেট মেশিন বাটন, এটিএম পেমেন্ট বাটন, পেপার রিসিভ ইত্যাদি স্পর্শ ও স্হানান্তর করছেন।
এসব ঝুঁকি এড়ানোর বিভিন্ন পন্হা রয়েছে:
* শপিংয়ের আগে ও পরে সাবান ও পানি কিংবা এলকোহলভিত্তিক হ্যান্ড সেনিটাইজার দিয়ে ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত ধুতে হবে।
* উপরিভাগ দূষিত থাকতে পারে, এটা ধরে নিয়ে শপিং ট্রলি, বাস্কেট, প্যাকেজ ও পণ্য স্পর্শ ও নাড়াচাড়া করার পর হাত দিয়ে মুখমন্ডল স্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।
* স্পর্শহীন অর্থ পরিশোধ পদ্ধতিসমূহ ব্যবহার করতে হবে।
* খাদ্যের মাধ্যমে যে কভিড-১৯ ছড়ায় এর কোন প্রমাণ নেই। রান্নার মাধ্যমে ভাইরাস ধ্বংস হয়। ইউকে ফুড স্ট্যান্ডার্স এজেন্সী ওয়েবসাইট কীভাবে বাড়িতে খাদ্য নিরাপদে রাখা যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছে।
কিন্তু যখন এ ধরনের কোন ঝুঁকি নেই অর্থ্যাৎ ‘জিরো রিস্ক’, তখন প্যাকেজিং ও অন্য লোকের দ্বারা হস্তান্তরের বিষয়টি প্রধান উদ্বেগের বিষয় এ কথাগুলো বলেন অধ্যাপক ব্লুমফিল্ড।
এ প্রসঙ্গে ‘অনলাইন ফর ফুড বিজনেস’ এর পরামর্শ হচ্ছে: ফুড প্যাকেজিং কোন নির্দিষ্ট ঝুঁকি সৃষ্টি করে বলে জানা যায়নি। যা- ই হোক,কিছু স্বাধীন বিশেষজ্ঞগণ অধিকতর পরামর্শ দিয়েছে এ প্রসঙ্গে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ব্লুমফিল্ড বলেন, টিনজাত কিংবা প্যাকেটকৃত পণ্যসামগ্রী এগুলো ব্যবহারের আগে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত স্টোর বা মজুত করে রাখা হয় কিংবা স্প্রে করা হয় এবং ব্লিচের মাধ্যমে প্লাস্টিক অথবা কাঁচের পাত্র মোছা হয় (বোতলের নির্দেশন অনুযায়ী যত্নের সাথে দ্রবীভূত করা হয়)।
ফ্রেশ পণ্যের মোড়ক খোলার জন্য ,যে কাজটি কাউকে না কাউকে করতে হয়, পানির ধারায় ধুতে ও শুকোতে হয়।
ডেলিভারি শ্লটগুলো বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়া, একটি সুপার মার্কেটে ভ্রমনের চেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ন। এক্ষেত্রে অন্যান্য কেনাকাটাকারীদের সংস্পর্শ এড়ানো সম্ভব হয়।
ফুড সেইফটি এক্সপার্ট ও ব্লগার ডঃ লিসা অ্যাকারলির পরামর্শ হচ্ছে, আপনার সামনের দরোজায় এই বলে একটি নোট বা বিজ্ঞপ্তি সেঁটে দিন যে,ড্রাইভার বেল বাজিয়ে যেনো পেছনে সরে যায়। এতে আপনি একাকী নিরাপদে খাবারটি কুড়িয়ে নিতে সক্ষম হবেন।
সামগ্রীর উপরিভাগের ভাইরাসের ভীতি দূরীকরণে ওয়ার উইক মেডিকেল স্কুল এর ডাঃ জেমস গিলের পরামর্শ হচ্ছে, সহজভাবে দ্রবীভূত অর্থাৎ মেশানো গৃহস্হালীর ব্লিচ দিয়ে পণ্যের উপরিভাগ মুছে ফেললে এক মিনিটের মধ্যে ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।
সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাণু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যালিসন সিনক্লেয়ার বলেন, কোন বন্ধু বা স্বেচ্ছাসেবীকে দিয়ে আপনার জন্য মুদীপণ্য সংগ্রহ করানোর চেয়ে একটি অনলাইন ডেলিভারি সার্ভিস কম ঝুঁকিপূর্ণ।
অনেক বিশেষজ্ঞ এই মহামারির সময় ওয়ানটাইম অর্থাৎ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। অনেক স্হানীয়। রেস্তোরাঁ তাদের ব্যবসাকে টেইকএওয়ে হিসেবে পরিবর্তিত করেছেন,নামীদামি চেইন ও রেস্তোরাঁগুলোর কিচেনসমূহ সম্ভবত: পেশাদার ও স্বাস্হ্যসম্মত খাদ্য তৈরী করে থাকে, তাই তাদের সদ্য তৈরী টেইকএওয়ে খাবারগুলো খুব কমই ঝুঁকি বিদ্যমান।
অধ্যাপক ব্লুমফিল্ড বলেন, প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে দূষণ সবচেয়ে নামিয়ে আনা যেতে পারে একটি পরিষ্কার ডিশে সামগ্রী ঢেলে প্যাকেটের একটি পরিত্যাক্ত ব্যাগে ফেলে দেয়ার মাধ্যমে। এরপর খাওয়ার আগে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
একটি টিন বা পাত্র থেকে চামচের মাধ্যমে খাদ্য বের করে নিন এবং একটি ছুরি কিংবা কাঁটা চামচ দিয়ে খাবেন, আঙ্গুল দিয়ে নয়। বর্তমান পরিস্হিতিতে ঠান্ডা কিংবা কাঁচা খাদ্য সামগ্রীর চেয়ে গরম ও সদ্য তৈরী খাবার অনেক ভালো।
ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সীর মতে, খাদ্য থেকে ঝুঁকি অত্যন্ত কম এবং ঝুঁকির কারণে রেডি-টু-ইট অর্থাৎ তৈরী খাবার এড়িয়ে চলার কোন যুক্তি নেই, যদি সেগুলো যথাযথভাবে তৈরী ও নাড়াচাড়া হস্তান্তর করা হয়।
অধ্যাপক ব্লুমফিল্ড আরো বলেন, যত্ন ও সতর্কতার সাথে রান্নার বিষয়টি পুনঃনিশ্চিত করতে হবে। উদাহরণ স্বরুপ, একটি পিজাকে একটি মাইক্রোওয়েভে কয়েক মিনিট রাখা যায়।