সরকার ব্রিটেনের অভিবাসীদের জন্য করোনাভাইরাস সংকট সৃষ্টি করছে
হাউস অব কমন্স – এ দাঁড়িয়ে উইন্ডরাশ স্ক্যান্ডালের জন্য ক্ষমা চাওয়ার সপ্তাহ খানেক পর আবান্দা নামক এক নারী প্রশ্ন তুলেছেন, কোবিড-১৯ মহামারির সময় তারা টিকে থাকবেন কিভাবে। আবান্দা বলেন, আমাদের সমস্যা মোকাবেলার জন্য কোন উপায় দেখছিনা। আবান্দা একজন আশ্রয় প্রত্যাখ্যাত নারী যিনি অভিবাসীদের পক্ষে কথা বলছেন।
তিনি আরো বলেন, আমার মনে হচ্ছে,আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। কয়েকদিন পর, অভিবাসিদের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করে। হোম অফিস কিছু আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য সহায়তা বর্ধিত করে।
কিন্তু আর্থিক সহায়তার মান সপ্তাহে ৪০ পাউন্ডের নিচে রয়েছে, যা আইনানুগ ‘সিক পে’ অর্থ্যাৎ অসুস্হতার মজুরীর অর্ধেকের চেয়ে কম।এটা এমন একটি পরিমাণ যে ব্যাপারে মন্ত্রীদের প্রশ্ন করা উচিত, এটা দিয়ে টিকে থাকা যাবে কি-না। বিশেষভাবে যখন গুরুত্বপূর্ণ অভিবাসী সেবাসমূহ হ্রাস পেয়েছে।
আবান্দা তার বন্ধুদের ব্যাপারেও উদ্বিগ্ন, যারা যাদের কোন ডকুমেন্ট অর্থাৎ কাগজপত্র নেই এবং এখনো কাজ করছেন কারণ তাদের সহায়তা লাভের খুব অল্প রাস্তাই খোলা আছে।
তিনি ঐসব লোকজনের ব্যাপারেও উদ্বিগ্ন যারা চিকিৎসা সেবা অনুসন্ধানে ভীত কারণ তারা এমন একটি দেশে বাস করছে যেখানে মানুষের মৌলিক সেবাসমূহের ধমনীতে বিদ্বেষের বিষ প্রবাহিত। কিছু দাতব্য সংস্হা এখন শুধু কোভিড-১৯ সংক্রমণের ব্যাপারে নয়, অনাহারের ঝুঁকির বিষয়ে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
কয়েক দশকের বর্ণবাদী, অমানবিক বাগাড়ম্বর ও নীতিসমূহের পর, সেগুলো কোভিড-১৯ সাড়াদানের ক্ষেত্রে উদ্বেগের তালিকার সবচেয়ে নিম্ন স্তরের লেকজনকে অস্বীকার করছে। অর্থ্যাৎ যতক্ষণ না এনএইচ- কে সাহায্য করতে সেগুলোর খসড়া করা হচ্ছে।
পরিচ্ছন্নতা কর্মী, সেবা কর্মী ,সুপার মার্কেটের স্টাফ ও ডেলীভারি ড্রাইভারগুলোর মতো লোক, যাদের অনেকেই অভিবাসী, এনএইচসির কর্মী তাদের জীবণের ঝুঁকি নিয়ে জনগণকে নিরাপদ রাখছেন তারা হচ্ছে ‘কী ওয়ার্কার’ অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিক -কর্মী ,যাদেরকে সরকার গত মাসে ‘স্বল্প – দক্ষ ‘বলে খারিজ করে দেয়।
এই সংকট মুহূর্তে, সরকার অভিবাসীদের জন্য পিসমীল প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে কিংবা কিছুই করেনি। বর্তমানে সংস্হাসমূহের একটি গ্রুপ জিজ্ঞেস করছে সরকার বৈরী পরিবেশ ও এনআরপিএফ (‘নো রিকোর্স টু পাবলিক ফান্ডস অর্থ্যাৎ সরকারী অর্থের সহায়তা নেই)এর স্হগিত করছে না কেনো।
কোয়ালিশন সরকারের অধীনে চালুকৃত নতুন কঠোর শ্রম আইন, এনআরপিএফ নির্দিষ্ট অভিবাসন আইনের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে যা অভিবাসিদের রাষ্ট্রীয় সহায়তা লাভে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
আলবেনিয়া থেকে আগত জনৈক আত্মসংস্হানকৃত প্রস্তুতকারক পেইগের স্বামীর জন্য এর মানে হচ্ছে, সে মহামারির সময়ে আয় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোন রাষ্ট্রীয় সহায়তা লাভের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। পেইগ বলছে, এ বিষয়ে সরকার সম্পূর্ণ নিশ্চুপ রয়েছে। একইভাবে জেইনও উদ্বিগ্ন ।
সৃজনশীল শিল্পে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে তার কাজ ৭দিন সময়ের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। এনআরপিএফ-এর অর্থ হচ্ছে যে’ইউনিভার্সেল ক্রেডিট ‘অর্থাৎ সার্বজনীন ঝণ -এর জন্য আবেদন করতে পারবে না, স্হানীয় কাউন্সিল থেকে কেন সহায়তা পাবে না,এতে মনে হয়, তাকে এমন একজন বলে দাবি করা হচ্ছে, যে আত্মকর্মসংস্হানকৃত।
এটা এমন এক সময় যখন এগুলো অভিবাসন বিরোধী নীতিমালার প্রকৃত ক্ষতিকর প্রভাব প্রকাশ করছে। যখন আমাদেরকে ‘ঘরে থাকতে’ বলা হচ্ছে তখন আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য খাবারের জায়গা, গাদাগাদিপূর্ন বসবাসের জন্য স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা স্হান ব্যবহারে বাধ্য করা হচ্ছে। অভিবাসীরা কীভাবে আহার যোগাড় করবে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
ভাইরাস হয়তো অভিবাসন স্ট্যাটাস দেখবে না, কিন্তু সরকারের নীতি তা দেখছে। এ বৈরী পরিবেশে চিকিৎসকদের অভিবাসন আইন প্রয়োগকারী হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে। এতে তাদের অভিবাসিদের ডাটা বা উপাত্ত ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
আয়ারল্যান্ড এমন একটি ব্যবস্হা রেখেছে যার ফলে অভিবাসীরা বিনা শংকায় স্বাস্হ্যসেবা পেতে সক্ষম হচ্ছে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিসার মেয়াদ বর্ধিত হচ্ছে।
পর্তুগালে সরকার এমন ব্যবস্হা করেছে, যাতে সকল আশ্রয় প্রার্থী ও ডকুমেন্টাহীন যাদের আবেদনপত্র নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে, তারা রাষ্ট্রীয় সহায়তা পেতে পারে। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার এটা করছে না, তারা পছন্দ করছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।