যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতরা ভোটাধিকার হারালেন
যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিধান রেখে ভোটার তালিকা (দ্বিতীয় সংশোধন) বিল-২০১৩ পাস করা হয়েছে। রোববার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।
এই বিলটি রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আইন হিসেবে কার্যকর হবে। বিরোধীদলীয় সদস্যরা বিলটির ওপর জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব জমা দিলেও অনুপস্থিতির কারণে তা উত্থাপিত হয়নি।
গত ২ সেপ্টেম্বর বিলটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর আইনমন্ত্রী গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপন করেছিলেন। এরপর তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
পাস হওয়া বিলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) সাজাপ্রাপ্তদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এ বিধান কার্যকর হলে কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশ কলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার ১৯৭২ (পি ও নম্বর ৮ অব ১৯৭২) অথবা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট ১৯৭৩ (অ্যাক্ট নম্বর ১৯ অব ১৯৭৩) এর অধীনে কোনো অপরাধে দণ্ডিত হলে তিনি ভোটার তালিকাভুক্ত হতে পারবেন না। আর আগে ভোটার তালিকাভুক্ত হলে তার নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়া এবং জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় পর্যায়ের যেকোনো নির্বাচনে ভোট প্রদান একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের সাংবিধানিক ও আইনি অধিকার। এ ধরনের অধিকার প্রাপ্তি ও প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন দেশের প্রতি তার আনুগত্য। যেসব নাগরিক বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় বিরোধিতা করেছে ও যুদ্ধাপরাধসহ গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে এবং যাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এসব অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে, তাদের ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়া ও থাকা সমীচীন নয়। সে উদ্দেশ্যে ভোটার তালিকা আইন ২০০৯ সংশোধন করা প্রয়োজন।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখন পর্যন্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামের সাবেক আমিরসহ ছয় নেতাকে দণ্ড দিয়েছেন।
তারা হলেন- আবুল কালাম আযাদ, আব্দুল কাদের মোল্লা, দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী, মো. কামারুজ্জামান, গোলাম আযম ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ।
এদের মধ্যে কাদের মোল্লা ও গোলাম আযম ছাড়া বাকি চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আর কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন এবং গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
নিয়ম অনুযায়ী, পলাতক আবুল কালাম আজাদ রায় ঘোষণার এক মাসের মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে আপিল না করায় তিনি আর আপিল করার সুযোগ পাবেন না। ফলে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায় বহাল থাকবে।
দণ্ডপ্রাপ্ত বাকি পাঁচজন ইতিমধ্যে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। এর মধ্যে কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও আপিলের রায়ে তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে।