‘আমরা করোনাভাইরাসকে পরাজিত করবোই’
জাতির উদ্দেশে ব্রিটেনর রাণীর দেওয়া সম্পূর্ণ ভাষণ
‘হয়তো আমাদেরকে আরো সহ্য করতে হবে, তবে ভালো দিন ফিরে আসবেই’
ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত এক মর্মস্পর্শী ভাষণ প্রদান করেন। ৬৮ বছরের রাজত্বকালে জাতির উদ্দেশে এটি তার চতুর্থ ভাষণ। রাণীর এ ভাষণটি গতকাল রোববার রাত ৮টায় টিভি, রেডিও ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একযোগে প্রচারিত হয়। তিনি বলেন, যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়চিত্ত থাকি তবে আমরা করোনাভাইরাস মহামারি থেকে উত্তরন লাভে সক্ষম হবো। এই বিরল ভাষণে রাণী জাতীয় স্বাস্হ্যসেবা এনএইচএস -এর স্টাফদের কঠোর পরিশ্রমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ব্রিটেনের আত্মশৃংখলা ও শান্ত সুন্দর মর্যাদাপূর্ণ দৃঢ়সংকল্পের গুনাবলী আমাদেরকে একটি কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে উত্তরণের পথে নিয়ে যাবে। রাণীর সম্পূর্ণ ভাষণটি এখানে দেওয়া হলো:
“আমি আপনাদের উদ্দেশে কথা বলছি এমন এক সময়ে, যা আমার জানামতে একটি ক্রমবর্ধমান চ্যালেন্জপূর্ণ সময়। এটা আমাদের দেশের জীবণ যাত্রা বিঘ্নকারী, তা এমন বিঘ্ন যা অনেকের জন্য দুর্ভোগ, আর্থিক সংকট এবং আমাদের সকলের দৈনন্দিন জীবণে অসংখ্য চ্যালেন্জ নিয়ে এসেছে।তিনি বলেন, এনএইচএস-এর সম্মুখভাগে থাকা লোকজনসহ সেবা কর্মীগণ এবং যারা আবশ্যকীয় ভূমিকা পালন করছেন, যারা নিঃস্বার্থভাবে প্রাত্যাহিক দায়িত্বপালন করছেন ঘরের বাইরে আমাদের সকলের সহায়তার লক্ষ্যে, আমি তাদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি নিশ্চিত, জাতি আমার সাথে আপনাদের এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করবে যে, আপনারা যা করছেন তা প্রশংসনীয়ভাবে অবগত এবং আপনাদের কঠোর শ্রমের প্রতিটি ঘন্টা অধিকতর স্বাভাবিক সময়ে ফিরে যাওয়ার লক্ষ্যে আমাদেরকে আরো ঘনিষ্ট করছে।
যারা বাড়িতে আছেন, এভাবে অরক্ষিতদের সুরক্ষায় সহায়তা করছেন এবং দুঃখ-বেদনা শেয়ার করছেন ঐসব পরিবারের যারা ইতোমধ্যে প্রিয়জনকে হারিয়ে শোকাহত, আমি তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই।
আমরা সম্মিলিতভাবে এই ব্যাধি মোকাবেলা করছি এবং আমি আপনাদের এই মর্মে নিশ্চিত করতে চাই যে, যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়চিত্ত থাকি, তবে আমরা এটা থেকে উত্তরণ লাভে সক্ষম হবো।
আমি আশা করি, আগামী বছরগুলোতেও প্রত্যেকে এই চ্যালেন্জ মোকাবেলায় কীভাবে সাড়া দিয়েছেন,তা নিয়ে গর্ব করতে সক্ষম হবেন। এবং যারা আমাদের পরে আসবে তারা বলবে, ব্রিটেনের এই প্রজন্মের বাসিন্দারা ছিলো এতোই শক্তিশালী। আত্মশৃংখলা ও শান্ত সুন্দর মর্যাদাপূর্ণ দৃঢ় সংকল্পের গুণাবলী এবং সহমর্মিতা এখনো এদেশেই বৈশিষ্ট।
এক নতুন গর্ববোধ আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতকে ব্যাখ্যা করবে। এমন এক সময় যখন যুক্তরাজ্য সম্মিলিতভাবে এগিয়ে এসেছে তার সেবাদানকারী ও আবশ্যকীয় কর্মীদের প্রতি প্রশংসা জানাতে, তারা আমাদের জাতীয় চেতনার একটি বহিঃপ্রকাশ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এবং রঙধনুকে এর প্রতিক হিসেবে সন্তানেরা অংকন করবে।
কমলওয়েলথ সহ গোটা বিশ্বব্যাপী আমরা লক্ষ্য করছি, লোকজন একে অপরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে, তা খাদ্যের পার্সেল ও ওষুধ সরবরাহ, প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নেয়া কিংবা ত্রাণকার্যের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে রুপান্তরের মধ্যে দিয়ে। এবং যদিও সেলফ্ আইসোলেশন অনেক সময় কঠিন হতে পারে, অনেক ধর্মের অনেক লোকজন এবং তাদের কেউ না, এটা আবিষ্কার করছেন যে, এ পরিস্হিতি প্রার্থনা ও ধ্যানে নতজানু স্হিত ও প্রতিফলনের একটি সুযোগ প্রদান করেছে। এটা ১৯৪০ সালে আমার বোনের সহায়তায় করা প্রথম সম্প্রচারের কথা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
আমরা ছেলে মেয়েরা এখানে উইন্ডসর থেকে শিশুদের উদ্দেশে কথা বলছিলাম, যাদেরকে তাদের বাড়িঘর থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য।
আজ আবার অনেকে তাদের আপনজন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ব্যাথা অনুভব করবে। কিন্তু এখন আগের মতোই আমরা জানি, গভীরে নিমগ্ন হওয়াই সঠিক কাজ। এর আগে আমরা চ্যালেন্জসমূহ মোকাবেলা করেছি কিন্তু এটা ঐগুলো থেকে ভিন্ন।
এখন সময় হচ্ছে বিশ্বের সকল জাতিকে একটি সাধারণ প্রচেষ্ঠায় যোগদান, আরোগ্যের জন্য বিজ্ঞানের মহান অগ্রগতিসমূহ এবং আমাদের সহজাত সহমর্মিতার ব্যবহার। আমরা সফল হবো এবং সেই সফলতা হবে আমাদের সকলের।
আমাদের স্বস্তির বিষয় হচ্ছে এই যে, হয়তো আমাদেরকে আরো সহ্য করতে হবে, তবে ভালো দিন ফিরে আসবেই।
আমরা আবার আমাদের বন্ধুদের সাথে মিলিত হবো, আমাদের পরিবারের সাথে আবার মিলিত হবো।
তবে এখন আমি আপনাদের সকলের প্রতি আমার ধন্যবাদ ও উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।”