গা শিউরে ওঠা তথ্য দিয়ে নার্স বললেন ‘ঘরে থাকুন’
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মর্মান্তিক পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন একজন নার্স। পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) পরিহিত অবস্থায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে সেলফি তুলে মর্মান্তিক কিছু কথা ফেসবুকে লিখেছেন জ্যাক স্যাভোয়ী নামের একজন নার্স।
জ্যাক সোভেয়ী লিখেছেন, তিনি এ ধরনের পোস্ট আর কখনোই লিখতে চান না। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে মানে হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি যে ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন, তা কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না। কিন্তু এখনো করোনাকে বিশাল সংখ্যক মানুষ যে পাত্তা দিচ্ছেন না, তা খেয়াল করেই এটি লিখতে হলো।
তিনি আরো লিখেছেন, যেদিন থেকে আমাদের দেশে মানে যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে লাগলো, আমি অনলাইন থেকে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ে দেখলাম, কিভাবে নিজেকে আরো সুরক্ষিত রাখা যায় সে ব্যাপারে। কারণ একজন আইসিইউ নার্স হিসেবে আমার সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
তিনি আরো লিখেছেন, আমি মানসিকভাবেও প্রস্তুত হতে থাকি। পিপিই যেভাবে পরিধান করা দরকার, নিয়ম মেনে সেটাও করছি। তবে এখানে কাজ করতে এসে এর আগে কখনো মানসিকভাবে এতোটা ভয় পাইনি।
তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীরা স্বাভাবিক নয়। সাধারণ মানুষের মতো কোনো আচরণ তারা করে না। আর এই অস্বাভাবিক আচরণ তাদের যায় না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের করোনা নেগেটিভ প্রমাণ হয়।
তিনি আরো বলেন, ছবিতে আমাকে যে পিপিই পরে থাকতে দেখছেন, করোনা আক্রান্ত রোগী এই পরিস্থিতিতে সাধারণত কোনো মানুষকে দেখছে। যখন আমরা থাকছি না, তখন রোগী একাই থাকছে। সে কারণে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে করোনা রোগীরা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত স্বাভাবিক আচরণ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, আমার হৃদয় বারবার ভেঙে যাচ্ছে। ভীষণ খারাপ লাগছে তাদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে। সেই সঙ্গে তাদের চোখেমুখে সারাক্ষণ একটা উৎকণ্ঠা লক্ষ করছি। একমাত্র এই রোগীদের ক্ষেত্রেই তাদের পরিবারের লোকজনকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার তাদেরকে একপর্যায়ে লাইফসাপোর্টে নেওয়া হলেও আরেক ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে।
এই অসময়ে মানসিক শক্তি অনেক বেশি দরকার। কিন্তু করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেই মানসিক শক্তি নিজের থেকেই তৈরি করে নিতে হচ্ছে। আর তাকে এতে সহায়তা করছে নার্স ও ডাক্তাররা।
‘‘নার্স থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্মীরা করোনা আক্রান্ত রোগীদের কেবিনে প্রবেশ করতেই এক ধরনের ভয় পাচ্ছে। আমি এবং আমার সহকর্মীরা ক্লান্ত। আমাদের মধ্যেও ভয় কাজ করছে। তার পরেও আমরা এই জনস্বাস্থ্য সঙ্কটের মধ্যেও কাজ করে যাব।’’
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জ্যাক স্যাভোয়ী। তিনি বলেন, নার্স থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্মীরা করোনা আক্রান্ত রোগীদের কেবিনে প্রবেশ করতেই এক ধরনের ভয় পাচ্ছে। আমি এবং আমার সহকর্মীরা ক্লান্ত। আমাদের মধ্যেও ভয় কাজ করছে। তার পরেও আমরা এই জনস্বাস্থ্য সঙ্কটের মধ্যেও কাজ করে যাব। পরিস্থিতি নির্বিশেষে আমরা প্রতিটি দিনই রোগীদের জন্য লড়াই করব। তবে দয়া করে বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হয়ে নিজে এবং অন্যদের আক্রান্ত করে আমাদের লড়াইকে আরো কঠিন করে তুলবেন না।
তিনি অনুরোধ করেছেন, নিজে ঘরে থাকুন, কাছের মানুষদেরও ঘরে রাখতে চেষ্টা করুন এবং যারা আক্রান্ত হয়েছে এবং যারা আক্রান্তদের বাঁচাতে লড়াইয়ে নেমেছে- তাদের সবার জন্য দোয়া করুন।
জ্যাকের ফেসবুক পোস্টের নিচে একজন মন্তব্য করেছেন, জ্যাক তুমি এবং তোমার সহকর্মীরা আসলেই নায়ক। তোমরা যা করছ তার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। তোমার পরিবারের জন্য হলেও নিরাপদ থাকো।