করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইংল্যান্ডের ৪০০০ কয়েদিকে সাময়িক মুক্তি
৮৮ কয়েদি ও ১৫ জেল কর্মকর্তাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ নিশ্চিত
এমএফএ জামান: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জেল থেকে ৪০০০ জন কয়েদিকে সাময়িক সময়ের জন্য মুক্তির ঘোষণা দিয়েছে বৃটিশ সরকার। সম্প্রতি করোনাভাইরাসে ৩ জন কয়েদি মৃত্যুবরণের পর সরকারের আইন মন্ত্রনালয় এই জরুরী পদক্ষেপ হাতে নেয়। এছাড়া জেল কর্তৃপক্ষ ৮৮ জন কয়েদি এবং ১৫ জন জেল কর্মকর্তাদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ নিশ্চিত করে।
কনজারভেটিভ সরকারের আইনমন্ত্রী রবার্ট ব্যাকেল্যান্ড বলেন, আমরা জরুরী অবস্থা জারীর পর দেশের নিরাপত্তা এবং ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের উপর চাপ কমাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সমগ্র ইংল্যান্ডে বর্তমানে বিভিন্ন জেলে প্রায় ৮৩০০০ হাজার কয়েদি অবস্থান করছে। এদের মধ্য থেকে যারা সমাজের জন্য কম বিপদজনক তাদেরকে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মুক্ত করে দিবো। যদিও আমাদের সরকার দেশ এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কিন্তু মহামারী করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। কারণ এই বিরাট সংখ্যার কয়েদিরা যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে তাহলে এদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। এতে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা প্রদানে ব্যঘাত ঘটবে। কিন্তু জরুরী অবস্থার মধ্যে আমরা জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এইসব মুক্ত কয়েদির উপর নজরদারী অব্যাহত রাখবো। যেসব কয়েদি বাইরে থাকবে তাদেরকে ইলেকট্রনিক ট্যাগ দেয়া হবে, এরফলে তারা কখন-কোথায় অবস্থান করছে আমরা তা সনাক্ত করতে পারবো। এই সময়ে বাইরে থাকা কয়েদিগণ দেশ ও জাতির স্বার্থে সংকটময় মুহুর্তে সুস্থ এবং শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবে বলে আমি আশা করি।
ইংল্যান্ডের আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা দেশের জেলগুলোতে করোনা মহামারী রোধে শুধু স্বল্প ঝুকিপূর্ণ অপরাধীদের শর্তানুযায়ী মুক্ত করবো। তবে এটি সাময়িক সময়ের জন্য এবং তাদেরকে জেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। ইতিমধ্যে কয়েকজন কয়েদি এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সবার জীবন রক্ষার্থে আমরা এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
কিন্তু কোন উচ্চ-ঝুঁকিযুক্ত অপরাধী যেমন যারা সহিংসতা বা যৌন অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, জাতীয় সুরক্ষা উদ্বেগ বা শিশুদের জন্য বিপদগ্রস্ত কেউ – এই মুক্তির জন্য বিবেচিত হবে না।
‘‘কয়েদিদের জীবন রক্ষায় সরকারের এই পদক্ষেপকে আমরা সাধূবাদ জানাই। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর সময়ে সবার দিকে বিশেষ করে বন্দীদের জীবনটাকেও মূল্য দিতে হবে। অতীতে ইংল্যান্ডের কারাগারগুলি কখনই এই ধরণের জটিলতা বা জরুরী অবস্থার মুখোমুখি হয়নি।’’
কয়েদিদের সাময়িক মুক্তির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে প্রিজন রির্ফম ট্রাস্টের ডাইরেক্টর পিটার ডাওসেন বলেন, কয়েদিদের জীবন রক্ষায় সরকারের এই পদক্ষেপকে আমরা সাধূবাদ জানাই। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর সময়ে সবার দিকে বিশেষ করে বন্দীদের জীবনটাকেও মূল্য দিতে হবে। অতীতে ইংল্যান্ডের কারাগারগুলি কখনই এই ধরণের জটিলতা বা জরুরী অবস্থার মুখোমুখি হয়নি। তাই ভবিষ্যতে এধরণের অবস্থার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।
ইন্ডিপেন্ডেট এডভাইসরি প্যানেল অন ডেথস ইন কাস্টডির চেয়ারম্যান জুলিয়েট লিওন বলেন, আমরা আইনমন্ত্রী রবার্ট ব্যাকেল্যান্ডের সিদ্ধান্তকে ধন্যবাদ জানাই কারণ খুবই অল্প সময়ের মধ্যে তিনি সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন। আর এই সুস্পষ্ট ও ধারাবাহিক পরিকল্পনাটি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার সংস্থা, কারাগারের গভর্নর এবং স্টাফ ইউনিয়নের পরামর্শের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।
কারাগার থেকে বন্দীদের সাময়িক মুক্তির ঘোষণায় বলা হয়েছে, জনগণকে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে মা ও শিশু ইউনিটের বন্দী থাকা গর্ভবতী মহিলাদের জেল থেকে মুক্তি দেয়া হবে আর এতে তাদের অনাগত শিশুরা করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পাবে।
সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লে অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মেনী সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সাময়িকভাবে বন্দীদের কারাগার থেকে শর্তানুযায়ী মুক্তি দেয়া হয়েছে। নর্দান আয়ারল্যান্ডে ২০০ জন, ফ্রান্সে ৫০০০ জন, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় ৩৫০০ জন বন্দীদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরেকটি রিপোর্টে বলা হয়েছে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে ইরানে প্রায় ৮৫,০০০ হাজার বন্দীদের সাময়িকভাবে মুক্তি এবং ১০,০০০ হাজার বন্দীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে।