এখনই সময় জাকাত ও দান-সদকার

প্রতি বছর রমজান মাসে আমরা বেশি বেশি দান সদকা করি এবং জাকাত দেই। আমরা এটা মনে করি, দান সদকা ও সম্পদের উদ্বৃত্ত অংশ জাকাত দিলে আল্লাহ খুশি হন এবং দানকে কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে তিনি আমাদের পুরস্কৃত করেন। আমরা আরো জানি যে, রমজানে দান-সদকা করলে অথবা ভালো কোনো কাজ করলে সেই দান ও ভালো কাজের পুরস্কার আরো শত গুণ বৃদ্ধি করে তিনি আবার আমাদের ফিরিয়ে দেন।

যা হোক এ বিষয়ে আমি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিকের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আর সেটি হলো, দানের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা। আল্লাহ সুবহানু তা’আলা কেন আমাদের দান ও সদকা দিতে বলেছেন? দান বা সদকার সেই মূল উদ্দেশ্যটা কী? আর রমজান মাসেই বা কেন আল্লাহ মানুষকে এত বেশি বেশি দান-সদকা ও জাকাত দেয়ার কথা বলেছেন?
এর কারণ, রমজান হলো আত্মশুদ্ধির মাস। গরিবের দুঃখ-কষ্ট ধনীদের উপলব্ধি করার মাস। অন্য দিকে গরিবদের অসহায়ত্ব লাঘবের মাসও এটি। এই সময় তারা ধনীদের নিকট থেকে দান-সদকা পেয়ে কিছুটা সচ্ছল হন। এ ছাড়া সবাই আল্লাহর ইবাদত করে পরিশুদ্ধি লাভ করতে পারেন। আল্লাহ পুরস্কৃত করবেন অসহায় লোকদের দান-সদকার ও জাকাত দেয়ার কারণে।
আমরা যদি একটু পেছন ফিরে তাকাই, তাহলে চ্যারিটি, সদকা ও জাকাতের মূল তাৎপর্য বুঝতে পারব। চ্যারিটি বা জাকাত প্রথা চালু করার ক্ষেত্রে আল্লাহর উদ্দেশ কী। উদ্দেশ্য হলো, অভাবীদের অভাব দূর করার চেষ্টা করা। অভাবীরা ভালো কিছু খেতে পারেন না, ভালো পরতে পারেন না। অনেক সময় তাদের না খেয়েও থাকতে হয়। রমজানে গরিবদের যাতে আরো কষ্ট না হয়, তারা যাতে কিছুটা ভালো খেতে পারেন, সে জন্য তাদের প্রতি আমাদের দান করতে উৎসাহিত করেছেন। গরিবদের দান করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। সেই দান হতে পারে খাবার, ওষুধ বা অন্য কিছু। আসল বিষয় হলো, যারা খুব অভাবী, দান তাদের জন্য। বছরের অন্যান্য সময় তারা প্রচণ্ড রকমের অভাবে দিন কাটাবে, আর দান পাওয়ার আশায় রমজানের অপেক্ষায় থাকবেÑ এ ধারণা সঠিক নয়। এ কারণে আমাদের উচিৎ হবে সারা বছর দানকে উৎসাহিত করা। এ জন্য রমজান মাসের অপেক্ষায় না থাকা।

আজ আমরা যদি জাকাতের ডালা নিয়ে অসহায়দের পাশে এসে দাঁড়াই, তাদের সাহায্যের হাতকে প্রসারিত করি আল্লাহ আমাদের সম্পদ দশ গুণ, এমন কি সাত শ’ গুণ বাড়িয়ে দিবেন । আমরা যখন কাউকে এই দুঃসময়ে সাহায্য করি, আল্লাহ তখন আমাদের পৃথিবীর এবং কিয়ামতের সেই কঠিন সঙ্কটকালে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।

বর্তমান পৃথিবীর দিকে একবার তাকালে দেখা যাবে কোন মুহূর্তে দানের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। দান-সদকা ও জাকাতের ফজিলত বিশ্লেষণ করলে এটা সুস্পষ্ট হবে যে ধনীদের এখনই এগিয়ে আসা উচিত সদকা ও জাকাত নিয়ে। আল্লাহ বলেছেন, ‘আনফিকি আবনা আদামা ইউনফাকা আলাইক।’ অর্থাৎ, হে আমার আদম সন্তানরা, হে মানব জাতি, তোমরা শোন, ‘দান করো তোমাদের যা দেয়া হয়েছে সেখান থেকে। অন্যদের সাহায্য করো, তাহলে আমরাও তোমাদের সাহায্য করব। অন্যদের প্রতি দয়ার্ত হও, আমরাও তোমাদের প্রতি দয়া করব।’ এটাই হলো ইসলামের সৌন্দর্য। যখন অভাব-অনটন আসে, তখনই দানের প্রয়োজনীয়তার কথা এসে যায়। রমজানে দানের প্রতি বেশি বেশি উৎসাহিত করা হয়েছে এ কারণেই। প্রয়োজন এবং অভাব অনটনের সময় সদকা এবং জাকাত দেয়াটাই হলো দানের সৌন্দর্য। প্রয়োজনের সময় আর রমজানের জন্য অপেক্ষায় থাকার দরকার পড়ে না।
বর্তমানে সারা বিশ্ব এ অভাবনীয় দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতির কথা ইতোপূর্বে কেউ কল্পনাও করেনি। কেউ কখনো ভাবেনি কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। প্রকৃত অর্থে কয়েক মাস আগে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি কী ধরনের বিপদ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
মানুষ তার চাকরি হারাচ্ছে এবং খাবারের কষ্ট পাচ্ছে। এখন এমন অনেকেই আছেন তারা জানেন না, কোথায় গেলে তার এক বেলার আহার জোটবে। তাই দান সদকা ও জাকাত দেয়ার প্রয়োজন পড়ছে এই মুহূর্তে। এই মুহূর্তে আমরা যারা ধনী বা স্বচ্ছল আছি, আমাদের উচিত সাহায্যের হাত এখনই বাড়িয়ে দেয়া। ধনীদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ এসেছে এই মুহূর্তে। তারা এখন আর দান-সদকা এবং জাকাত দানের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারেন। রমজানের জন্য তাদের বসে থাকার সুযোগ নেই আর।
আজ আমরা যদি জাকাতের ডালা নিয়ে অসহায়দের পাশে এসে দাঁড়াই, তাদের সাহায্যের হাতকে প্রসারিত করি আল্লাহ আমাদের সম্পদ দশ গুণ, এমন কি সাত শ’ গুণ বাড়িয়ে দিবেন । আমরা যখন কাউকে এই দুঃসময়ে সাহায্য করি, আল্লাহ তখন আমাদের পৃথিবীর এবং কিয়ামতের সেই কঠিন সঙ্কটকালে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। -মুফতি ইসমাইল মেন্ক

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button