বিশ্ব বিখ্যাত দাঈ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মুকিত আর নেই

সৈয়দ মবনু: বিশ্ব বিখ্যাত দাঈ, তাবলীগ জামায়াতের ইউরোপের জিম্মাদার, বিমান ইঞ্জিনিয়ার হাজী আব্দুল মুকিত সাহেব আজ ১১ এপ্রিল ২০২০ খ্রিস্টাব্দে সকাল-১০:৩০ মিনিটে ইংল্যান্ডের ডিউজবাড়ী হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তিনি তাবলিগীদের কাছে ‘ইঞ্জিনিয়ার সাব’ আবার বিশ্বের তাবলিগীদের কাছে তিনি ‘বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার হাজীসাব’ বলে পরিচিত ছিলেন। অনেকের কাছে শোনেছি, ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের তাবলিগের কেন্দ্রীয় মারকাজ কাকরাইল মসজিদের ডিজাইনার নাকি তিনি। এই মসজিদের বৈশিষ্ট্য মধ্যখানে কোন পিলার নেই, চারদিক এমনভাবে খোলা যে প্রচুর মানুষ জমা হলেও অক্সিজেন্সের অভাব হয় না, আবার মসজিদের যেকোন অংশ থেকে বক্তাকে দেখা যায়। কাকরাইল মসজিদের ইতিহাসে লেখা আছে, ১৯৬০-এর দশকে হাজী আব্দুল মুকিতের তত্ত্বাবধানে তিন তলা এ মসজিদটি পুনঃনির্মাণ করা হয়। (হাসান মোহাম্মদ : ২০১২। “তাবলীগ”। সম্পাদনা পরিষদ। বাংলাপিডিয়া (দ্বিতীয় সংস্করণ)। বাংলাদেশ: এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ।) । আবার কেউ কেউ বলতেছেন, তিনি কাকরাইল মসজিদের ডিজাইনার নয়, তিনি হলেন ইংল্যান্ডের ডিউজব্যারি মসজিদের ডিজাইনার। আমার কাছে এবিষয়গুলো সঠিক কোন তথ্য নেই।
ইঞ্জিনিয়ার হাজী আব্দুল মুকিত সাহেবের সাথে আমার প্রথম দেখা এবং পরিচয় ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে কাকরাইল মসজিদেই মাওলানা হরমুজুল্লাহ সাহেবের রোমে। মাওলানা হরমুজুল্লাহ সাহেব আমাকে পরিচিত করে দিয়েছিলেন ‘ইঞ্জিনিয়ার সাব’-এর সাথে। তিনি তখন আমার বাবা-চাচাদের কেমন আছেন? এমনভাবে জিজ্ঞাস করেছিলেন, অনুভব হয়েছিলো তিনি তাদেরকে জানেন। এতবড় একজন তাবলিগের মুরুব্বী আমার বাপ-চাচাকে চিনেন, ছোটমনে ভাবতেও ভালো লেগেছিলো। সেদিন আমরা বড় এক প্লেটে বসে ভাত খেয়েছিলাম, তা আজও মনে আছে। তখন এই প্লেটে আরও ছিলেন মাওলানা হরমুজুল্লাহ, তৎকালিন তরুন আলেম মাওলানা জুবায়ের সাহেব প্রমূখ। মাওলানা জুবায়ের সম্ভবত তখন কাকরাইল মাদরাসার দায়িত্বে ছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার হাজী আব্দুল মুকিত সাহেব আমাদের পরিবারের সবাইকে চিনার মূলসূত্র পরে আবিস্কার করলাম, তাঁর গ্রামের বাড়ি আমাদের সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার চান্দের নগরে। তাঁর বাবার নাম ছিলো ইসরাইল পুরকাস্থ। সম্ভবত হাজী সাহেবের দাদা হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছিলেন। তারা বংশে পুরকাস্থ ছিলেন। তাদের পরিবারের অনেকের সাথেই পরবর্তিতে আমার গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। অনেকের সাথে ছিলো প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কও। তাঁর বড় ছেলে মাওলানা আব্দুল মজিদ, হাটাজারীতে পড়েছেন।
হাজী সাহেব আজীবন দ্বীনের দায়ী হিসাবে তাবলিগে দ্বীনের সাথে কাজ করেছেন। কালেমার দাওয়াতই ছিলো তাঁর জীবনের মূল কর্মসূচী। মানুষের প্রতি তাঁর মনে নবীওয়ালি অনেক দরদ ছিলো। মানুষকে কীভাবে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করা যায় তা ছিলো তার মূল পেরেশানি। দ্বীনের কাজের মধ্যে রেখেই মহান আল্লাহপাক তাঁকে নিয়েগেছেন তাঁর কাছে। আমরা দোয়া করি, আল্লাহ যেন হাজী সাহেবকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button