করোনাভাইরাস প্রমাণ করেছে ‘বিশ্ব পাঁচের চেয়েও বড়ো’
২০১৩ সালে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তুর্কী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছিলেন, ‘বিশ্ব পাঁচের চেয়েও বড়ো’ অর্থাৎ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫ সদস্য দেশের চেয়েও পৃথিবীটা বড়ো। নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) সদস্য দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সমস্যার মানবিক বিপর্যয়, যুদ্ধ ও সংঘাতের ব্যাপারে এককভাবে এবং নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, এই অথর্ব ব্যবস্হা বিশ্বকে স্হবিরতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সেই বছরটি ছিলো সিরীয় গৃহযুদ্ধের মাত্র দ্বিতীয় বছর, যে যু্দ্ধে ৭০ লাখ সিরীয় গৃহহীন হয়েছে। ২০১৩ সালে ৫০ লাখ লোক অভ্যন্তরীনভাবে বাস্তুচ্যুত হয়, যার মধ্যে ৫ লাখ চলে আসে তুরস্কে। ঐ সময় অন্যান্য দেশ কর্তৃক তুরস্কে সিরীয় শরণার্থীদের সাহায্যের পরিমাণ ছিলো মাত্র ১৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।পরবর্তী ৭ বছরে তুরস্কে সিরীয় শরণার্থীর সংখ্যা ৪০ লাখে পৌঁছে।
আন্তর্জাতিক পদ্ধতি যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এতে সিরীয় যুদ্ধের শুধু অবনতিই হয়েছে। আর জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো এ সমস্যার কোন সমাধান খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ব তার নিজের সমস্যা নিয়েই উদ্বিগ্ন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে এবং অন্য দেশের গৃহযুদ্ধের মানবিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়।
বর্তমানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫ সদস্য দেশ, যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে আন্তর্জাতিক পদ্ধতির মূল কুশীলব হিসেবে নিজেদের দাবি করে, তারা এখন তাদের নিজেদের নাগরিকদের করোনাভাইরাস থেকে বাঁচানোর সংগ্রামে লিপ্ত।
কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত অনলাইন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনকালে এরদোগান বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির নেতাদের এ কথাটি স্মরণ করিয়ে দেন যে, শুধুমাত্র সংহতির মাধ্যমে বৈশ্বিক মহামারি থেকে উত্তরণ সম্ভব পারে। বিশ্ব যে ঐ ৫ টি দেশের চেয়ে বৃহত্তর তা নিয়ে তিনি ৬ বছর আগেই বলেছিলেন। সিরীয় যুদ্ধ ও অন্যান্য এলাকায় সংঘাতের ন্যায়, এই ৫টি দেশ তাদের নিজেদের দেশের নাগরিকদের জন্য দেশ চালাতে অক্ষম, তারা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অন্য দেশকে কীভাবে সাহায্য করবে!
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২টি ইউরোপীয় দেশের একটি হচ্ছে যুক্তরাজ্য। কিন্তু দেশটি ইউরোপের বাকী দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইউনিয়ন বা ঐক্যে থাকবে, অন্য কোন দেশকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সাহায্য করতে পছন্দ করে না।
প্রকৃত সত্যটি হচ্ছে এই যে, হাঙ্গেরী প্রকাশ্যে এই অভিমত ব্যক্ত করেছে যে, দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়ে ‘টার্কিক কাউন্সিল’ এবং চীন থেকে সহায়তা পেয়েছে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে। এতে স্পষ্টত: প্রতীয়মান হয় যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং একটি মহামারিতে কতোটা নাজুক হয়ে পড়েছে মানবিক ঐক্য। এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার কথা না হয় বাদ দেয়া গেলো।
ইতালী ইউরোপে করোনাভাইরাসের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দেশটি জার্মানিকে রেসপিরেটরের (ভেন্টিলেটর) জন্য আবেদন জানায়, কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অপর দেশটি এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। অতএব এটা কোন বিস্ময়কর বিষয় নয় যে, রাশিয়া যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ নয়, সে সামরিক বিশেষজ্ঞ টিমের ২২ টি কনভয় পাঠিয়েছে ইতালীতে।
প্রাচ্য, চীন ও রাশিয়ায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিরা যারা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা ইউনিয়ন থেকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে, তারাও জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতি থেকে আলাদা নয়। ভাইরাসের বিস্তারের বিষয়টি জানাতে চীনের ব্যর্থতা থেকেও স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় দেশটি কোন্ বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার প্রদান করে।