পাউন্ড ছাপিয়ে সরকারকে অর্থ জোগান দেবে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড
বিশ্বে এ প্রথম কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের প্রয়োজনে তহবিল জোগাতে এগিয়ে এসেছে
নভেল করোনাভাইরাসে প্রাণহানি ঠেকাতে লকডাউনের মতো নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেয়ার কারণে টালমাটাল হয়ে পড়েছে ব্রিটেনের অর্থনীতি। বেকারত্ব ও মন্দা এড়াতে প্রণোদনাসহ নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে ব্রিটিশ সরকারকে। এমন পরিস্থিতিতে সংকট মোকাবেলায় ব্রিটিশ সরকারের অতিরিক্ত ব্যয়ে অর্থায়নে সম্মত হয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (বিওই)। বিশ্বে এ প্রথম কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের প্রয়োজনে তহবিল জোগাতে এগিয়ে এসেছে। ফলে বন্ড মার্কেট থেকে অর্থ না তুলেই ব্রিটিশ সরকার কর্মসংস্থান সুরক্ষা স্কিমের মতো প্রকল্পে অর্থায়ন করতে পারবে।
যুক্তরাজ্যে সাধারণত বন্ড মার্কেট বা করের মাধ্যমে সরকারিভাবে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে বন্ড মার্কেটের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। নভেল করোনাভাইরাস সংকট ঘনীভূত হওয়ায় গত মার্চের মধ্যভাগে বন্ড মার্কেট চাপে পড়ে যায়। তবে এতে তহবিল সংগ্রহে সরকারকে খুব একটা চাপে পড়তে হয়নি। এরই মধ্যে বিওই ২০ কোটি পাউন্ড মূল্যের মুদ্রা ছাপিয়ে বন্ড মার্কেটে ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যেন পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত ও বাজার সচল থাকে। এ অবস্থায় সরকারিভাবে বিওইর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের বিষয়টি আলোচনায় এলেও তা নাকচ করে দেন ব্যাংকটির গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি। তার পরও সরকারি কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ জোগানকেই নিরাপদ মনে করছেন। পরে সরকারের প্রস্তাবে এ সম্মতি দেয় বিওই।
ওয়েস অ্যান্ড মিনস ফ্যাসিলিটি নামে পরিচিত ওভারড্রাফট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে যুক্তরাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। এ অ্যাকাউন্টের সাধারণ সীমা ৩৭ কোটি পাউন্ড। এক সময় দৈনন্দিন খরচ মেটাতে এ সুবিধা ব্যবহার করত যুক্তরাজ্য সরকার। তবে ২০০৬ সালের পর তা জরুরি তহবিলে পরিণত হয়। ২০০৮ সালে অর্থের জন্য এ অ্যাকাউন্টের দ্বারস্থ হয়েছিল যুক্তরাজ্য সরকার। ওই সময় সরকার এ অ্যাকাউন্ট থেকে ২ হাজার কোটি পাউন্ড পর্যন্ত অর্থ সংগ্রহ করেছিল।
এবারও এ অ্যাকাউন্টের উত্তোলন সীমা বাড়ানোর কথা জানানো হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে ৯ এপ্রিল প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বিওইর তহবিল জোগান হবে স্বল্পমেয়াদি। এতে অর্থের জন্য অতিরিক্ত চাপ না পড়ায় বন্ড ও অর্থবাজার উপকৃত হবে।
অর্থের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হওয়া বড় ঘটনা বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, এ ঘটনা নগদের অতি চাহিদাকে ইঙ্গিত করে। তবে তারা এর ভালো-মন্দ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
ফ্যাথম কনসাল্টিংয়ের সিনিয়র অ্যাডভাইজার ও বিওইর সাবেক কর্মকর্তা টনি ইয়েটস বলেন, এ পদক্ষেপ সরকারের ওপর বিষম চাপের নির্দেশক। তহবিল জোগানে কেন্ত্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হওয়ায় যুক্তরাজ্য জিম্বাবুয়েতে পরিণত হবে না। কারণ এ সংকট শেষ হলেই কর বাড়িয়ে তা পুষিয়ে নেয়ার সক্ষমতা যুক্তরাজ্যের রয়েছে।
তবে বিওইর আরেক সাবেক কর্মকর্তা ও বিএনপি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের হেড অব ম্যাক্রো রিসার্চ রিচার্ড বারওয়েল বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে অর্থের জোগান দিয়েছে, তা আর ফেরত দেয়া হয়নি। সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের অস্থায়ী পদক্ষেপও স্থায়ী হয়ে যায়। তিনি বলেন, তহবিল জোগানের প্রস্তাব উপেক্ষা করার সুযোগ খুব কম। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত তহবিল জোগানের মাধ্যমে সর্বোচ্চটুকু নিশ্চিত এবং এ থেকে বের হওয়ার উপায় নিয়ে পরিকল্পনা করা।