কর্মী সংকটে শাহবাগীরা

কর্মী সংকটে পড়েছে শাহবাগী ব্লগাররা। অল্প সংখ্যক কর্মী আর গুটি কয়েক দর্শক নিয়ে কর্মসূচি পালন করছে ব্লগাররা। শাহবাগীদের লোকসংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে গতকাল মঙ্গলবার প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন এবং গণজাগরণ মঞ্চের ডাকা হরতালে শোডাউনে ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে রোজার মাস হওয়া সত্ত্বেও শাহবাগী নাস্তিক ব্লগাররা নির্দ্বিধায় পানীয়সহ সকল খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ করছে। দিনের বেলা খাদ্য খেয়ে স্লোগান দিচ্ছে তারা। শাহবাগের গণগ্রন্থাগারের সামনে এবং জাদুঘরের সামনের দোকান থেকে খাবার খাচ্ছে তারা। তাদের অনেককেই প্রকাশ্য দিবালোকে সবার সামনে মিনারেল ওয়াটার এবং খাবার খেতে দেখা যাচ্ছে। এদিকে শাহবাগের কথিত গণজাগরণ মঞ্চের সমর্থনকারী দু’টি সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে মারমারির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার গণজাগরণ মঞ্চের হরতালের সমর্থনে রাস্তায় গাড়ি চলাচলে বাধা দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই মারামারির ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর দেড়টার দিকে গণজাগরণ মঞ্চের হরতালে শাহবাগে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর একটি দল হঠাৎ করে রাস্তার দিকে এগিয়ে গিয়ে গাড়ি চলাচলে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। আর তাদের এই কর্মকান্ডে বাধা দিতে গেলে মেসবাহ ও শিমুল নামে গণজাগরণ মঞ্চের দু’কর্মীকে ধরে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক উদয়ের নেতৃত্বে মারধর করা হয়।
এ সময় মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার শাহবাগে উপস্থিত ছিলেন। তিনি উভয়পক্ষকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানালেও দু’পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা চলতে থাকে। সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা ছবি তুলতে গেলে উভয়পক্ষের কর্মীরা তাদেরও বাধা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দু’পক্ষকে শাহবাগ মোড় থেকে সরিয়ে দেয় শাহবাগ থানা পুলিশ।
এ সময় মেসবাহ বলতে থাকেন, ‘গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন অহিংস। তারা (বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী) গতকাল (সোমবার) গাড়ি ভাংচুর করেছে, পুলিশের ওপর হামলা করেছে। আমি তাদের বাধা দেয়ায় আক্রোশের শিকার হই। আজও (মঙ্গলবার) তারা রাস্তায় গাড়ি ভাঙতে যাচ্ছিল, আমি তাদের বাধা দিলে তারা আমার গায়ে হাত তোলে। এ প্রসঙ্গে ইমরান এইচ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, গণজাগরণ মঞ্চ কোনো একক সংগঠনের নয়। মঞ্চের সঙ্গে একাধিক সংগঠন সম্পৃক্ত রয়েছে। মঞ্চের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো সংগঠন তাদের নিজস্ব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়নি। তারা তাদের নিজস্ব কার্যক্রমের সঙ্গে মঞ্চের কোনো সম্পর্ক নেই। গত সোমবার জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযমের রায় প্রত্যাখ্যান করে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। বেশকিছু গাড়ি ভাংচুর করে। তখন তাদের বাধা দিলে সহকারী পুলিশ কমিশনার স্নিগ্ধ আকতারকেও মারধর করে কর্মীরা।
এদিকে আগেরবারের আন্দোলনে শাহবাগজুড়ে লোকসংখ্যার ভিড় দেখা গেলেও এবারের আন্দোলনে লোকসংখ্যা চোখে লাগার মতই না। আগে যখন কোন আন্দোলন কর্মসূচি থাকতো তখন হাজার হাজার লোক সমাগম থাকলেও বর্তমানে তার আংশিকও নেই। আগের কর্মসূচির মতোও শাহবাগীদের বিশেষ পšা’া অবলম্বন করতে দেখা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে হওয়ায় সপ্তাহের বিশেষ দিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ দিন উপলক্ষে ক্যাম্পাসসহ শাহবাগ এলাকায় লোক সমাগম বেশি দেখা যায়। ওই বিশেষ দিনে কর্মসূচি ডেকে লোক দেখানো জনবল দেখিয়ে  ফায়দা হাসিল করার পরিকল্পনা করে শাহবাগীরা। কিন্তু বর্তমানে তাদের সে চেষ্টাও ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে কর্মসূচি ডেকে লোক সমাগম বাড়াতে বড় ধরনের হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন বলেন, ভালো কাজ করলে লোকজন সে দিকে যাবেই। কিন্তু ভালো কাজের নাম ভাঙিয়ে অসৎ কাজ করলে লোক জনের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। যার বহিঃপ্রকাশ শাহবাগে ঘটেছে।
এ বিষয়ে শাহবাগের আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পা দিত্য বসু বলেন, রমযান মাসের কারণে লোকসংখ্যা কম দেখা যাচ্ছে। আবার অনেকে দ্বিধাদ্বন্দে আন্দোলনে আসছে না। তবে গণজাগরণের প্রতি জনগণের আস্থা উঠে গেছে এটা তিনি অস্বীকার করেন।
এদিকে অল্প সংখ্যক কর্মী নিয়ে গতকাল সকালে কর্মসূচি শুরু করে শাহবাগীরা। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে প্রগতিশীল বাম সংগঠনের নেতারা ১০/১২জন কর্মী নিয়ে কর্মসূচি পালনের জন্য শাহবাগ মোড় অবরোধ করার চেষ্টা করে। এসময় কর্তব্যে থাকা পুলিশ তাদেরকে বাধা দেয়। তারা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে কর্মসূচি করার জন্য তোর জোর শুরু করে। একপর্যায়ে পুলিশের সাথে জোরে না পেরে শাহবাগের জাদুঘরের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কের মাঝখানে কর্মসূচি পালন করে বামরা। সকাল ১০টার দিকে শাহবাগীরা হরতাল সমর্থনে ৩০/৩৫জনের একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি কাটাবন রাস্তা ঘুরে শাহবাগের শিশুপার্ক হয়ে টিএসসি হয়ে আবার শাহবাগে এসে শেষ হয়। এসময় তারা হরতাল সমর্থনে স্লোগান দিতে থাকে। মিছিল শেষে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগে আসে শাহবাগী আন্দোলনের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। এসময় তিনি জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের রায় যতক্ষণ ঘোষণা করা হবে না ততক্ষণ শাহবাগে অবস্থান করারও ঘোষণা দেন এবং রায় বিবেচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি দেয়ারও ঘোষণা দেন।
এদিকে শাহবাগীদের নিরাপত্তার জন্য কয়েক’শ পুলিশ মোতায়েন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ(ডিএমপি)।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button