১১ বছর ২৩ দিন পর আবার ঢাকায় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ
মিজানুর রহমান: সেদিন ছিল শনিবার। ২৮ শে মার্চ, ২০০৯ ইং। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের শেষ ফ্লাইটটি ঢাকা ছেড়ে যায়। সেই সময় ২৭৬ সিটের বোয়িং-৭৭৭ দিয়ে ঢাকা-লন্ডন রুটে ফ্লাইট পরিচালিত হতো। মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক বিমান সংস্থাগুলোর বাজার তখন তুঙ্গে। অন্তত ঢাকা রুটে। ব্রিটিশ এয়ারের দামী ফ্লাইটে সাধারণের খুব একটা যাতায়াত ছিল না। তবে এক্সিকিউটিভ এবং ভিআইপিরা ক্যারিয়াটি ব্যবহার করতেন বরাবরই।
লন্ডন হলে তো কোনো কথাই নাই, ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে যেতেও ফ্লাইটটি ব্যবহার করতেন তারা। বিশেষত্ব ডিরেক্ট ফ্লাইট, ফ্লাইং আওয়ার ১০ ঘন্টার কম এবং লাক্সারি সার্ভিস। কিন্তু এতকিছুর পরও ‘নট প্রফিটেবল’ বলে অল্প ক’টা শব্দ ব্যবহার করে জারি করা এক নোটিশে ঢাকাকে গুড বাই জানায় ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে যাতায়াতকারী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। সেই থেকে আজ (২১ এপ্রিল ২০২০), পাক্কা ১১ বছর ২৩ দিন। এই সময়ের মধ্যে ঢাকার আকাশে এক মুহুর্তের জন্য ডানা চাপতে হয়নি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজকে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আঞ্চলিক ফ্লাইং জোন ব্যবহার করে স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনা করলেও ঢাকার ফ্লাইং জোনে তাদের ঢোকা হয়নি। কিন্তু আজ করোনার এই কঠিন মুহুর্ত, বিশেষ পরিস্থিতি তাদের ঢাকায় নিয়ে এসেছে। প্রায় অপরিচিত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দিনের শুরুতে বোয়িং নিয়ে অবতরণ করেছেন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মধ্য বয়সী এক পাইলট এবং কো-পাইলট। ঢাকাস্থ বৃটিশ হাই কমিশন তাদের সফল অবতরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
চীন ছাড়া দুনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল ফ্লাইট বন্ধের প্রেক্ষিতে ঢাকায় আটকে পড়া ব্রিটিশ নাগরিকদের উদ্ধারে এসেছে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্যারিয়ার। বিকালে প্রায় ৩০০ যাত্রী নিয়ে স্পেশাল ফ্লাইটটি ঢাকা ছাড়বে। ওই ফ্লাইটের বেশিরভাগ যাত্রী ছুটি কিংবা প্রয়োজনে এসে বাংলাদেশে, স্পষ্টত সিলেটে আটকা পড়েছিলেন। আটকে পড়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ওই ব্রিটিশ নাগরিকদের দুপুরে বাংলাদেশ বিমান যোগে ঢাকায় আনা হয়েছে। দূতাবাসের আয়োজনে বাংলাদেশ বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটটি পরিচালিত হয়েছে। এখন বাকি শুধু ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা। এটা সম্পন্ন হলেই তারা ককাঙ্খিত লন্ডনগামী ফ্লাইটে উঠবেন। বৃটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস আগেই জানিয়েছে, প্রস্তাবিত শিডিউল মতে, ঢাকা থেকে ব্রিটিশ নাগরিকদের উদ্ধারে ধারাবাহিক ফ্লাইট পরিচালনার অংশ হিসাবে ২১, ২৩, ২৫ ও ২৬ শে এপ্রিল প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ ফ্লাইট পরিচালিত হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন নাগরিকদের উদ্দেশ্য দেয়া সর্বশেষ ভিডিও বার্তায় বিশেষ ফ্লাইট চূড়ান্ত হওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, আমি খুবই আনন্দিত এ আয়োজন করতে পেরে। ফ্লাইট পরিচালনার ব্যয় যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। ঢাকা কিংবা সিলেট যেখান থেকেই নাগরিকরা যাত্রা শুরু করুন না কেন, জনপ্রতি তাদের ভাড়া পড়ছে ৬০০ পাউন্ড। স্থায়ীভাবে ব্রিটেনে বসবাস করা ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্যই ওই স্পেশাল ফ্লাইটের আয়োজন বলে উল্লেখ করেন ব্রিটিশ দূত।
এদিকে আগে প্রচারিত এক বার্তায় হাই কমিশনার ডিকসন বলেন, বিভিন্ন দেশে আটকা নাগরিকদের ব্রিটেনে ফিরিয়ে নিতে ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস বিশ্বব্যাপী বেশ বড় আকারের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ফিরিয়ে আনার ওই কার্যক্রমে সেই সব এলাকাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে যেখানে ব্রিটেনের নাগরিকদের বেশ বড় সংখ্যা আটকা পড়েছেন অথবা আটকা ব্রিটিশ নাগরিকরা সেখানে চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাদের ব্রিটেনে দ্রুত ফেরা ছাড়া সুরক্ষার উপায়ই নেই।
First flight taking 🇬🇧 visitors home from 🇧🇩has just taken off from Dhaka with a full load of 269 passengers. Many thanks to Government of 🇧🇩 and Biman for excellent cooperation in Sylhet and Dhaka. 3 more flights this week. pic.twitter.com/jnYs2OgAMM
— Robert C Dickson (@RCDicksonUK) April 21, 2020