হিন্দুত্ববাদীদের ইসলামবিরোধী প্রচারণার কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি আমিরাতি প্রিন্সেসের
সোশ্যাল মিডিয়ায় হিন্দুত্ববাদীদের ইসলামবিরোধী প্রচারণার বিরুদ্ধে এবার মুখ খুলেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রিন্সেস হেন্দ আল কাসিমি। তিনি এ ধরণের প্রচারনা না করার জন্য টুইটার ব্যবহারকারীকে সাবধান করে দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় প্রিন্সেস বলেন, ‘শাসক পরিবার ভারতীয়দের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ, তবে তার জন্য আপনাদের অভদ্রতা গ্রহণযোগ্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘সমস্ত কর্মচারীদেরকে তাদের কাজের জন্য বেতন দেয়া হয়, কেউ এমনিতে কাজ করে না। যে দেশ থেকে তুমি তোমার রুজি ও রুটি অর্জন করছো, সেই দেশকেই তোমরা ঘৃণা করছ। তোমাদের উপহাস নজর এড়িয়ে যাবে না।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে ৫৩ টি মুসলিম দেশ থেকে ভারতীয়রা বছরে ১২০ বিলিয়ন ডলার অর্জন করেন।
সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ইত্যাদির মতো উপসাগরীয় দেশগুলোতে ডানপন্থী ভারতীয় প্রবাসীদেরকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার জন্য মুসলমানদের দোষারোপ করতে দেখা যায়, যার ফলে তারা ইসলামের সমালোচনা শুরু করে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘করোনার জিহাদ’ বলে প্রচার করতে থাকে। উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে প্রচুর ভারতীয়কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের পোস্টের জন্য বিতাড়ন করার সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তাদের কথিত ইসলামফোবিক পোস্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।
মার্চ মাসে নয়াদিল্লিতে তাবলিগী জামায়াতের একটি ধর্মীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার অভিযোগ ওঠে। গত সপ্তাহে, প্রিন্সেস হেন্দ সৌরভ উপাধ্যায় নামের একজনের টুইটের স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন যার অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। প্রিন্সেস হেন্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছিলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে কেউ প্রকাশ্যে বর্ণবাদী এবং বৈষম্যমূলক মন্তব্য করলে তাকে খুঁজে বের করা হবে এবং তাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে।’
একটি হিন্দু-জাতীয়তাবাদী দ্বারা পরিচালিত একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রিন্সেস হেন্দকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি ‘হিন্দুফোবিয়ার’ নিন্দা করবেন কিনা, তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে, তিনি হিন্দুদের সাথে বেড়ে উঠেছেন এবং বেশিরভাগ আমিরাতি হিন্দী বলতে পারে। তিনি বলেন, ‘এখানে কেউ হিন্দুদের ঘৃণা করে না।’ পৃথক পোস্টে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ভারত ‘ভাল বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন এবং বলিউডের সিনেমা ও ভারতীয় খাবারের প্রতি তার ভালবাসা প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, দুবাইয়ে হিসাবরক্ষক হিসাবে কাজ করা এক ভারতীয় নাগরিকের মুসলিম বিরোধী পোস্ট ভাইরাল হবার পর তাকে আরব আমিরাত সরকার দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে। আমিরাতে কর্মরত আরেক ব্যক্তির পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভের সৃষ্টি করলে তাকেও আমিরাত সরকার বহিস্কার করে। কুয়েতে বার্গার কিংয়ের একটি শাখা তাদের এক ভারতীয় গোঁড়া হিন্দু কর্মচারীর বৈষম্যমূলক পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পরে তাকে বরখাস্ত করেছে।
ভারতীয়দের এই মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব ও কর্মের নিন্দা জানিয়েছেন জহরানী আবিদী, আবদুর রহমান নাসার, প্রিন্সেস হেন্দ আল কাসেমি সহ আরও অনেক উচ্চপদস্থ আরব ব্যক্তিবর্গ। কুয়েতের আইনজীবী এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পরিচালক মেজবেল আল শারিকা জেনেভাতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ভারতীয় মুসলমানদের বিষয়টি উত্থাপন করার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি সহিংসতার প্রমাণাদি জোগাড় করার জন্য ভারতীয় মুসলমানদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন। সউদী আলেম আবিদ জহরানী জিসিসি এবং মধ্য-প্রাচ্যে কাজ করা ব্যক্তি যারা মুসলমান ও ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে সেই সমস্ত ব্যক্তির তালিকা তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন।
Anyone that is openly racist and discriminatory in the UAE will be fined and made to leave. An example; pic.twitter.com/nJW7XS5xGx
— Princess Hend Al Qassimi (@LadyVelvet_HFQ) April 15, 2020
UAE law applies on nationals and non-nationals in terms of hate speech. pic.twitter.com/bWN3StUkRN
— Princess Hend Al Qassimi (@LadyVelvet_HFQ) April 20, 2020
I knew India, the country of Gandhi, a country which suffered enough. The whole world is on its nerves with Covid19, but the hate should stop. Namaste 🙏 https://t.co/HvXgOP0oq8
— Princess Hend Al Qassimi (@LadyVelvet_HFQ) April 20, 2020