করোনাভাইরাস:
ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ আগামী বছর ট্যুইশন ফি বাবদ ২.৫ বিলিয়ন পাউন্ড হারাবে
ইউনিভার্সিটি এন্ড কলেজ ইউনিয়ন (ইউসিইউ) এই মর্মে সতর্ক করে দিয়েছে যে, শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সীমিত করণের মাধ্যমে করোনাভাইরাস মহামারি থেকে উদ্ভূত ব্রিটেনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর আর্থিক বিপর্যয় রোধ করা যাবে না। রিপোর্টে ভবিষ্যদ্বানী করা হয় যে, এই খাত আগামী বছর শুধু ট্যুইশন ফীর ক্ষেত্রে প্রায় আড়াই বিলিয়ন পাউন্ড হারাতে পারে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৩০ হাজার চাকুরীচ্যুতির ঘটনা ঘটতে পারে। যদি কোভিড-১৯ অব্যাহত থাকে তবে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় শিক্ষার্থীরা চলে যেতে পারে।
সরকার সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সংখ্যা সীমিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খাতের সাথে আলোচনা করছে, যাতে শিক্ষার্থী ভর্তি হ্রাস পাওয়ার ফলে সৃষ্ট সম্ভাব্য মরিয়া হয়ে প্রতিযোগিতা ও দেউলিয়াত্ব এড়ানো যায়। কিন্তু লন্ডন ইকোনোমিক্স থেকে ইউসিইউ পরিচালিত রিপোর্টে দেখা গেছে, যদি আগামী বছর অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় তবে এই ভর্তি সীমিতকরণ অকার্যকর হয়ে পড়বে।
কনসালট্যান্সির পূর্বাভাসে দেখা যায়, এমনকি অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও যুক্তরাজ্য ও বিদেশ থেকে আন্ডার গ্র্যাজুয়েটদের প্রবেশ হ্রাস পাবে।
ইউসিইউ-এর জেনারেল সেক্রেটারী জো গ্রাডি বলেন, আমার বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন একটি ভ্যাকসিন (কোভিড-১৯) আবিষ্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত এবং এগুলো যুক্তরাজ্যের জাতীয় এবং শহর ও নগরসমূহ ব্যাপী আমাদের পুনরুদ্ধারের জন্য প্রাণদায়ী হাতিয়ার হয়ে ওঠবে।
এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, সরকার শিক্ষার্থী সংখ্যা হ্রাসের ফলে অর্থ হারানোর ব্যাপারে গ্যারান্টি দেবে। এটা নজিরবিহীন সময় এবং এই প্রয়োজন মুহূর্ত জরুরী গ্যারান্টি ছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ছায়া শিক্ষামন্ত্রী রেবেকা লং-বেইলী সরকারী সহায়তার আহবান সমর্থন করে বলেন, যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবশ্যই করোনাভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে, এনএইচএস -এ শিক্ষার্থীদের সরবরাহ এবং ভাইরাসের ব্যাপারে বিশ্বমানের গবেষণা পরিচালনা করতে হবে।
রিপোর্টে বলা হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ফী বাবদ দেড় বিলিয়ন পাউন্ড, ইউকে-ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ৬০০ মিলিয়ন পাউন্ড এবং ইইউ শিক্ষার্থী থেকে ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড হারাতে পারে। ‘ইউকাস’ এডমিশন্স সার্ভিসের একটি সহ শিক্ষার্থীদের অভিপ্রায় ভিত্তিক সমীক্ষা থেকে এটা জানা গেছে।
লন্ডন ইকোনোমিক্স -এর একজন অংশীদার গ্যাভান কনলন বলেন, মহামারির দরুন এনরোলমেন্ট (তালিকাভুক্ত) ও আয়ের ক্ষেত্রে একটি ‘কঠিন বাস্তবিক ক্ষতি’ সাধিত হবে, যার জন্য সরকারী সহায়তা প্রয়োজন।
তবে ‘হাইয়ার এডুকেশন পলিসি ইনস্টিটিউট -এর পরিচালক নিক হিলম্যান বলেন, তিনি মনে করেন শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বিষয়ে প্রতিবেদনের পূর্বাভাসসমূহ বিশেষভাবে যুক্তরাজ্যে ১৬ শতাংশ হ্রাস – বেশী মাত্রায় হতাশাব্যন্জক।
তিনি বলেন, আমি উচ্চ শিক্ষায় কোভিড-১৯ এর মারাত্মক ক্ষতির বিষয়টির অবমূল্যায়ন করছি না, তবে আমাদের উচ্চশিক্ষার বিদ্যমান বৈচিত্রের দরুন আমরা অবশ্যই জানতে চাইবো বোর্ড ব্যাপী প্রতিটি একক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমন ধারায় ফেলা ঠিক হবে কি-না।
উল্লেখ্য, লন্ডন ইকোনোমিক্স -এর পূর্বাভাস সমূহে বাসস্হান, ক্যাটারিং অর্থাৎ খাদ্য সরবরাহ এবং কনফারেন্স আয়ের ৭৯০ মিলিয়ন পাউন্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যা ইউনিভার্সিটি ‘ইউকে গ্রুপ অব ভাইস -চ্যান্সেলর্স’ তাদের সাম্প্রতিক আবেদনে চিহ্নিত করেছেন। তারা যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে প্রদত্ত এই আবেদনে কমপক্ষে ২ বিলিয়ন পাউন্ডের উত্তরন তহবিল প্রদানের আহবান জানিয়েছেন।
ইউইউকে -এর প্রধান নির্বাহী আলিস্টেয়ার জার্ভিস বলেন,চাকুরী, আঞ্চলিক অর্থনীতি, স্হানীয় কমিউনিটি ও শিক্ষার্থীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির ব্যাপারে ইউনিয়নের এই হুঁশিয়ারি সঠিক।
তিনি আরো বলেন, সরকারকে অবশ্যই সহায়তা প্রদানে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যা এসব অত্যন্ত মারাত্মক চ্যালেন্জ মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিশ্চিত করবে এবং তা শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা প্রদান, গবেষণা চালিয়ে যাওয়া এবং অর্থনীতি ও কমিউনিটিগুলোকে পুনরুদ্ধারে আমাদের শক্তিকে সক্ষম করবে।