ব্রিটেনের প্রায় অর্ধেক লোক বিশ্বাস করে করোনাভাইরাস মানবসৃষ্ট, বিস্তৃত হচ্ছে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
ব্রিটিশ নাগরিকদের প্রায় অর্ধেক লোক বিশ্বাস করেন যে করোনাভাইরাস মানবসৃষ্ট একটি বিষয়। জরীপে এই ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বের’ বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৮ শতাংশ লোক মনে করেন যে, ফাইভ-জি প্রযুক্তি ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে এবং অনেকেরই দাবি, কোভিড-১৯ একটি চীনা অস্ত্র কিংবা এটা ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ কর্তৃক সৃষ্ট।
রিপোর্ট অনুসারে, ব্রেক্সিট সমর্থকগণ এবং রাজনৈতিক সিস্টেমে বিশ্বাসী নন এমন লোকজনই এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বে অধিক হারে বিশ্বাসী।
সমীক্ষা পরিচালনাকারী সংস্হা ‘হোপ নট হেইট’ এই বলে সতর্ক করে দিয়েছে যে, যদিও এই ধারণা পোষণকারীদের সকলেই এসব বিশ্বাস করেন না, তবু বিষয়টির প্রতি এতো ব্যাপক মনোযোগ প্রদানের বিষয়টি উদ্বেগজনক এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক ।
লেখক প্যাট্রিক হারম্যান্সসন বলেন, সব ধরনের ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বে’র বিরুদ্ধে ‘লড়াই করা প্রয়োজন’। তিনি বলেন, যে কেউ একটা কিছু শুরু করতে পারে যা খুব বিপজ্জনক বলে মনে না হতে পারে কিন্তু তা থেকে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সরাসরি ঘৃনাসুলভ ধারণা পরিচালিত হতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানীগুলোকে অন্যান্য চরমপন্থার মতো ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বের’বিষয়ে নজর দেয়া এবং কঠোরভাবে তা দমন শুরু করা দরকার।
৫ জন লোকের মধ্যে ১ জন এন্টি-ভ্যাকসিনেশন ষড়যন্ত্র মতবাদে বিশ্বাসী বলে ইংগিত দেন, যখন ১৮ শতাংশ মনে করেন যে,টিকাদান (ইনোক্যুলেশন) ক্ষতিকর প্রভাব গোপন করে। যখন জিজ্ঞেস করা হয় দুইটি বিবৃতির কোনটি তারা বেশী বিশ্বাস করেন, তখন উত্তরদাতাদের ৫৫ শতাংশ বলেন, করোনাভাইরাস একটি ‘প্রাকৃতিক অবস্হা’ এবং ৪৫ শতাংশ লোক বলেন, এটা ‘একটি মানবসৃষ্ট জিনিস’।
মিঃ হারম্যান্সসন আরো বলেন, কিছু উত্তরদাতা হয়তো তাদের জবাবে ‘ওয়েট মার্কেটস’ (কাঁচা বাজার), মহামারির প্রতি রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া, বিমানে ভ্রমণ ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে থাকতে পারেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও করোনাভাইরাস নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ প্রচুর ।প্রথম দিকে করোনাভাইরাস একটি চীনা জীবাণু অস্ত্র হিসেবে মতবাদ প্রচারিত হলেও এখানে সেটাকে ছাড়িয়ে গেছে ‘ফাইভ-জি’। প্রতি সপ্তাহে এটা রুপান্তরিত হচ্ছে এবং এটা এখন জাতিসংঘ ও নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার ধরনের স্টাফের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছে।
এ মুহূর্তে আমরাও এন্টি ভ্যাকসিনেশন ধারণাসমূহ ও এজেন্ডা ২১-এর সাথে একীভূত হতে দেখছি যাতে বিশ্ব পরিকল্পিতভাবে জনশূন্য হচ্ছে।
জরীপ অনুযায়ী ,ব্রিটিশ জনসংখ্যার ৮ শতাংশ মনে করেন যে, ‘ফাইভ-জি প্রযুক্তি করোনাভাইরাসের বিস্তারের জন্য দায়ী’— একটি ভিত্তিহীন দাবি যা ইতোমধ্যে ব্যাপক মাস্তুল ভাংচুর ও প্রকৌশলীদের ওপর হামলার কারণ সৃষ্টি করেছে। অন্য ১৯ শতাংশ এটা বাতিল করেন না।
ফাইভ-জি একটি মতবাদ যাকে একটি বিপুল জনগোষ্টী প্রত্যক্ষ করছে (৩৭ শতাংশ ) এবং দাবি করছে যে, করোনাভাইরাস চীনের উদ্ভাবিত একটি জীবাণু অস্ত্র (৩৫ শতাংশ) এবং এটা জাতিসংঘ কিংবা নিউ ওয়ার্ল্ড (২১ শতাংশ) কর্তৃক বিশ্বকে জনসংখ্যাশূণ্য করার পরিকল্পনার একটি অংশ।
ষড়যন্ত্র তত্ত্ব উগ্রবাদীগণ কর্তৃক নতুন রিক্রুটদের আকর্ষণের জন্য একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে— এই মর্মে কাউন্টারটেরোর পুলিশের সতর্কবাণীর পর এই পরিসংখ্যান এসেছে।
কর্মকর্তারা বলেন, লকডাউনকালীন সময়ে লোকজন অনলাইনে অধিক সময় ব্যয় করছে এবং এ অবস্হায় তাদের মিথ্যা তথ্য যাচাইয়ের ক্ষমতা কমে যায়।
দমন সংস্হার জাতীয় সমন্বয়কারী চীফ সুপারিনটেনড্যান্ট নিক এডামস্ বলেন, করোনাভাইরাস বিস্তারে ফাইভ-জি প্রযুক্তির সংশ্লিষ্ট মিথ্যা দাবি ‘ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ’ করা হচ্ছে।
‘হোপ নট হেইট’ জানিয়েছে, জরীপের বিভিন্ন প্রশ্নে ইসলাম-বিরোধী মানসিকতা অত্যন্ত প্রবল বলে পরিলক্ষিত হয়েছে, যেক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ লোক বিশ্বাস করেন যে, মুসলিম জনসংখ্যা অমুসলিমদের চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাদের বিশ্বাস, ইসলাম ব্রিটিশ আইনের স্হলে শরিয়া চালু চেষ্টা করছে।
এটা উগ্রডানপন্হী গ্রুপসমূহ কর্তৃক লোকজনের মনোযোগ আকর্ষণ ও তাদের ঘৃণা সংশ্লিষ্ট চক্রান্তমূলক মতবাদ নিয়ে আলোচনা এবং এর প্রতি সমর্থন আদায়ের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবে তারা অরক্ষিত লোকজনকে উৎসাহিত ও উগ্রমতবাদে দীক্ষিত করে সন্ত্রাসবাদে জড়িত করতে পারে।
আলাদা গবেষাণায় বলা হয়েছে,করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য মুসলিমদের দায়ী করার তত্ত্ব জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। পুলিশ কর্তৃক মসজিদগুলো খোলা রয়েছে বলে দাবি সংক্রান্ত অনেকগুলো ভুয়া ভিডিও অপসারণের মারাত্মক ষড়যন্ত্র পর এটা হালে পানি পাচ্ছে।
‘হোপ নট হেইট’ জানিয়েছে, জরীপের বিভিন্ন প্রশ্নে ইসলাম-বিরোধী মানসিকতা অত্যন্ত প্রবল বলে পরিলক্ষিত হয়েছে, যেক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ লোক বিশ্বাস করেন যে, মুসলিম জনসংখ্যা অমুসলিমদের চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাদের বিশ্বাস, ইসলাম ব্রিটিশ আইনের স্হলে শরিয়া চালু চেষ্টা করছে।
এছাড়া জরীপে আরো দেখা যায় যে, ১৩ শতাংশ লোক এন্টি সেমিটিক ধারণায় বিশ্বাসী এবং তাদের বিশ্বাস, ইহুদীরা ‘অন্যায়ভাবে ব্যাংকিং পদ্ধতীকে নিয়ন্ত্রণ করছে’।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মতবাদের অনুসারীদের অধিকাংশ ‘ব্রেক্সিট’ অর্থাৎ ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের ত্যাগের’ পক্ষে ভোট দেন এবং এর বিরোধী বড়ো সংখ্যক লোকজন গণভোটে ইইউ-তে থাকার পক্ষে ভোট দেন।
মিঃ হারম্যান্সসন বলেন, প্রবল বিশ্বাসীরা সাধারণত: স্বল্প উপার্জনকারী, তাদের শিক্ষাও কম এবং অধিকাংশ সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচনে এদের কমই ভোট দিয়েছেন কিংবা কোন দলকে সমর্থন করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ষড়যন্ত্র মতবাদ সমূহ একটি বড়ো ইস্যুর একটি লক্ষণ যেক্ষেত্রে লোকজন রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না এবং নিজেদের পশ্চাতপদ বলে মনে করে।