আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদে এক সাথে হাজার রোজাদারের ইফতার
এক সাথে হাজার মানুষ খাওয়া-দাওয়া করে বিয়ে বাড়িতে, কমিউনিটি সেন্টারে বা মেজবানে। এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এক সাথে হাজার মুসল্লির মেঝেতে বসে ইফতার করার দৃশ্য বেশ বিরল। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদে এই দৃশ্য এখন প্রতি সন্ধ্যায়। প্রতি বছর পবিত্র রমজানে আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদের মুসল্লিদের জন্য ইফতারের আয়োজন করে মসজিদের খতিব আওলাদে রাসুল (সা:) মাওলানা সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল মাদানী এবং শাহি জামে মসজিদ মুসল্লি পরিষদ। আর এ আয়োজনে ধনী, গরিব, আতরাফ, মিসকিন, পথিক সবাই এক কাতারে বসে ইফতার করেন। সবার উদ্দেশ্য সম্মিলিত ইফতার, সাম্য, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধন। ঠিক কতজন ইফতার করেন এমন প্রশ্নের জবাবে শাহি জামে মসজিদ মুসল্লি পরিষদের সহসাধারণ সম্পাদক মাওলানা জয়নাল আবেদীন নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১২০০ লোক ইফতার করে এ মসজিদে। রোজার শেষের দিকে এ সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় দেড় হাজারে। এখানে ইফতার করতে আসেন দেশের নামী দামি বিত্তবানরা। তারা সাথে করে নিয়ে আসেন প্রচুর ইফতার। রোজাদারদের সাথে ইফতার করে শিল্পপতিরাও আনন্দ পান। সে এক অন্য রকম দৃশ্য চট্টগ্রামের প্রাচীন এ মসজিদে। আসরের নামাজের পর থেকে রোজাদাররা সেখানে আসতে শুরু করে। এখানে ইফতারে অংশ নেন কান্ত পথিক, অবসন্ন দিনমজুর, পরিশ্রান্ত বিুক, নিম্নবিত্ত এবং উঁচু তলার মানুষ। স্থানীয় ব্যবসায়ীও বৃহৎ এই জমায়েতে ইফতার করতে পছন্দ করেন। বহদ্দারহাটের গ্লাস ব্যবসায়ী কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এত রোজাদারের সাথে একত্রে ইফতার করে আলাদা তৃপ্তি অনুভব করি। তাই এলাকায় থাকলে শাহি জামে মসজিদে ইফতারের চেষ্টা করি।’ শাহি জামে মসজিদের খতিবের একান্ত সচিব হাসান মুরাদ নয়া দিগন্তকে জানান,‘ইফতারে ৯ রকমের খাবার থাকে। তার মধ্যে ছোলা, ডালের পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপি, সমুচা, খেজুর এবং একগ্লাস করে শরবত। এক সময় ইফতারি কিনে পরিবেশন করা হলেও বর্তমানে ১২ জন বাবুর্চি দিয়ে রান্না করা হচ্ছে। এ ছাড়া ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক ইফতার বণ্টনের কাজ করছে নিয়মিত।’ মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান হয় বিকেল ৫টা থেকে। মসজিদের ইমামরা প্রায় এক ঘণ্টা ধর্মীয় নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে হাজারো রোজাদার নিয়ে মুনাজাত হয় ; এরপর সবাই শরিক হন ইফতারে। ১৯৯৬ সাল থেকে মসজিদের খতিব মাওলানা সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল মাদানির নেতৃত্বে ইফতার মাহফিল চলে আসছে। এক সময় ২০০-৩০০ মানুষ একত্রে ইফতার করলেও বর্তমানে প্রায় ১৫০০ লোক ইফতার করছে। আন্দরকিল্লা মোড়ে ভিক্ষা করেন মো: ইসমাইল। প্রায়ই এ মসজিদে ইফতার করেন তিনি। ইসমাইল বলেন, সারা দিন রোজা রেখে ভিক্ষা করতে মন চায় না। তাই মসজিদে গিয়ে ইফতার করি।’