মুসলিম বিশ্ব থেকে ভারতে বছরে যায় ১২০ বিলিয়ন ডলার, তবুও ভারত কেন মুসলিমবিদ্বেষী?
উপসাগরীয় দেশগুলোতে প্রায় ৮৫ লাখ ভারতীয় বাস ও চাকরি করে, তাদের একটি বড় অংশ হিন্দু। জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর (বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত) সাথে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খুবই ভালো হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
কুয়েতভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্ট আবদুর রহমান নাসর টুইটে বলেন, প্রতিবছর উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে ৫৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ভারতে হস্তান্তরিত হয় এবং বছরে সব মুসলিম দেশ থেকে ১২০ বিলিয়ন ডলার যায় ভারতে। এসব দেশে ভারতীয়দের (প্রধানত হিন্দু) সাথে ভালো আচরণ করা হয়।
তিনি বলেন, এর বিনিময়ে তারা ভারতে মুসলিমদের সাথে কেমন আচরণ করছে?
কুয়েতের নাগরিক, আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপ মেজবেল আল-শারিকা টুইটে বলেন, তিনি জেনেভাস্থ জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ভারতীয় মুসলিমদের জন্য বিনা পয়সায় লড়বেন।
কূটনৈতিক উত্তেজনা
গত সোমবার আরব বিশ্বে উত্তেজনা বাড়ার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কুয়েত ভারতীয় মুসলিমদের প্রতি আচরণ নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে এবং হস্তক্ষেপ করার জন্য ওআইসির প্রতি আহ্বান জানায়।
কুয়েত মন্ত্রিসভার সচিবালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে এবং তাদের অধিকার লঙ্ঘন করছে, তারা কি মনে করছে যে বিশ্বের মুসলিমরা এসব অপরাধের বিরুদ্ধে নীরব থাকবে এবং তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে, অর্থণৈতিকভাবে ও আইনগতভাবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না?
এর আগে ১৮ এপ্রিল ওআইসি এক বিবৃতিতে ভারতে ইসলামফোবিয়ার ক্রমবর্ধমান স্রোত বন্ধ করতে জরুরিভিত্তিকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নয়া দিল্লির প্রতি আহ্বান জানায়।
বিশেষ উদ্বেগের দেশ
ভারতে ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার খ্যাতিমান কণ্ঠ প্রিন্সেস আল-কাসেমি গত সপ্তাহে গালফ নিউজে এক কলামে বলেন, বিশ্বের আরেকটি হিটলারের প্রয়োজন নেই, বরং বিশ্বের প্রয়োজন মার্টিন লুথার, নেলসন ম্যান্ডেলা বা গান্ধীর মতো নায়ক।
তিনি লিখেন, তোমার ভাইকে হত্যা করায় তোমাকে নায়ক বানাবে না, এমন কাজ তোমাকে স্বৈরাচার বানাবে, খুনিতে পরিণত করবে। একটি ছোট ও মৃদু আন্দোলন শুরু হয়েছে, এটি আরববিশ্বজুড়ে প্রতিধ্বনিত হবে।
কাতারের দোহা ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড হিউমেনিটেরিয়ান স্টাডিজের পরিচালক সুলতান বারাকাত করোনাভাইরাস মহামারির জন্য ভারতীয় মুসলিমদের দায়ী করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, আরব বিশ্বে যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভারতীয় বাস করছে। তারা কখনো বৈষম্যের শিকার হয়নি। আবার উপসাগরীয় এলাকা বাস করে কাজ করছে, এমন লোকের ইসলামফোবিক মন্তব্য আরো বেশি কষ্টদায়ক।
অবশ্য বিজেপির মুখপাত্র জিভিএল নরসীমা রাও আলজাজিরাকে বলেন, এই ইস্যু আরব দেশগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। কারণ এটি প্রপাগান্ডার অংশ, আসল নয়। তিনি বলেন, এগুলো হলো বৈরী লোকদের ভারতবিরোধী ও হিন্দুবিরোধী প্রপাগান্ডা।
রাওযের আশাবাদ দৃশ্যত ক্ষণস্থায়ীই হয়েছে।
মঙ্গলবার ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম ধর্মীয় স্বাধীনতার মারাত্মক লঙ্ঘনের জন্য বিশেষ উদ্বেগজনক দেশ হিসেবে ভারতকে চিহ্নিত করার জন্য পররাষ্ট্র দফতরের প্রতি আহ্বান জানায়।
ভারত যদিও মার্কিন প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে একে পক্ষপাতপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেছে, কিন্তু তবুও তা ভারতের মুসলিমদের টার্গেট করা নিয়ে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক উদ্বেগ অগ্রাহ্য করা দেশটির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের জন্য কঠিন করে তুলবে।