‘কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে শরণার্থীদের যুক্তরাজ্যে অস্হায়ীভাবে থাকার অনুমতি দেয়া হোক’
দাতব্য সংস্হা ও গীর্জাসমূহের নেতৃবৃন্দ আশ্রয় প্রার্থীদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহবান জানিয়েছেন এবং মহামারিতে তাদের ‘মারাত্মক পরিস্হিতির’ শিকার হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। আশ্রয় প্রার্থীরা লন্ডনের ডালস্টনের একটি রেডক্রস সেন্টার থেকে জরুরী খাদ্য গ্রহণ করে থাকে।
ডজন খানেক দাতব্য সংস্হা ও গীর্জার নেতৃবৃন্দের একটি কোয়ালিশন বলেছে, মহামারির সময়ে সকল আশ্রয় প্রার্থী ও শরণার্থীদের শোষণ, অসহায়ত্ব ও গৃহহীনতা থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য অবশ্যই তাদেরকে অস্হায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দিতে হবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে প্রদত্ত একটি খোলা চিঠিতে তারা এই মর্মে সতর্ক করে দেন যে, অনিরাপদ অভিবাসন স্ট্যাটাসের হাজারো লোক অধিকাংশ সরকারী সহায়তা থেকে বঞ্চিত, চিকিৎসা সুবিধা থেকে বাধাগ্রস্ত এবং নিপীড়িত হওয়ার ঝুঁকিতে পতিত হওয়ায় ‘মারাত্মক পরিস্হিতি’র শিকার ।তারা আরো বলেন যে, অনেকের মেডিকেল দক্ষতাসহ মহামারি মোকাবেলায় সহায়তা করার দক্ষতা রয়েছে। কিন্তু তাদেরকে কাজকর্ম থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
তারা সতর্ক করে দেন যে, দাতব্য সংস্হাসমূহ থেকে জরুরী সহায়তা নিঃশ্বেষ হয়ে যাচ্ছে এবং চলাচলের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ অনেককে ‘শোষণের পরিস্হিতি’তে আটকে দিয়েছে। তারা হুঁশিয়ার করে বলেন: আমরা গৃহহীনতা, শোষন ও ক্ষুধার মমর্ন্তুদ কাহীনি শুনতে পাচ্ছি। বর্তমান নীতিমালার অধীনে অনিরাপদ অভিবাসন মর্যাদাকারীদের ‘সরকারী অর্থ না পাওয়ার’ দিকে ঠেলে দিয়েছে এর অর্থ হচ্ছে অনেক বেনিফিট পেতে তারা বাধাগ্রস্ত।
কাউন্সিলসমূহ তাদেরকে নির্দিষ্ট সহায়তা প্রদানে বিরত, যখন হাউজিং একটি বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে এনএইচএস ও হোম অফিসের মধ্যে ডাটা শেয়ারিং তাদেরকে সহায়তা পেতে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিয়েছে, বিশেষভাবে আক্রান্ত লোকজনকে টেস্টবিহীন ও হাসপাতালের সেবা থেকে বঞ্চিত অবস্হায় ফেলে দিয়েছে।
ইতোমধ্যে জেসুইট রিফিউজী সার্ভিস, প্রাক্সিজ ,উইমেন ফর রিফিউজী উইমেন এবং পাবলিক ইন্টারেস্ট ল’ সেন্টারসহ কুড়িটিরও বেশী সংস্হা ও সংগঠন কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি পত্রে এসব অনিরাপদ অভিবাসন মর্যাদাকারী লোকজনকে হাউজিং ও স্বাস্হ্যসেবা প্রদানের আহবান জানিয়েছেন। অন্যথায় তারা ঝুঁকির মুখে পড়বেন বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।
তারা চিঠিতে এসব লোকজনকে সাময়িক অবস্হানের অনুমতি প্রদান সরকারী অর্থ সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং হেলথ বডি ও হোম অফিসের মধ্যে ডাটা শেয়ারিং স্হগিত করার আহবান জানিয়েছেন।
এ অবস্হায় উইমেন ফর রিফিউজী উইমেন কর্তৃক সহায়তা প্রাপ্ত জনৈক অভিবাসীকে এক রাত একটি নৈশ বাসের বাইরে এবং দুই রাত লন্ডনের একটি পার্কে কাটাতে বাধ্য করা হয়, যদিও অনেকগুলো দাতব্য সংস্হা ও হোমলেসনেস সার্ভিস তাকে সহায়তার চেষ্টা করেছে।
সরকার কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য ফী প্রত্যাহার করেছে ,কিন্তু চিঠিতে এই মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয় যে, অনেকে হাসপাতালে যেতে বিরত রয়েছে এই শংকায় যে, যদি কোভিড -১৯ এর ক্ষেত্রে পরীক্ষায় তাদের নিগেটিভ হয় তবে হয়তো কোন প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য তাদের কাছে ফী চাওয়া হবে এবং তাদের ডাটা হোম অফিসে প্রদান করা হবে।
দাতব্য সংস্হা প্রাক্সিস -এর চীফ এক্সিকিউটিভ স্যালি ডাঘলিয়ান বলেন, ভ্যালু আইটেম অর্থাৎ আবশ্যকীয় পণ্যসমূহ সুপারমার্কেটগুলো থেকে নিঃশ্বেষ হয়ে যাচ্ছে ,কমিউনিটি প্রকল্পসমূহের গরম খাবার সরবরাহ বন্ধ এবং ফুড ব্যাংকগুলো চাহিদা মেটাতে পারছে না। লোকজন ক্ষুধার্ত এবং মৌলিক চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা।
যে সব লোকের অবস্হানের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছে তারা হোম অফিসের কঠোর আবশ্যকীয়তা পূরণের সম্মুখীন হচ্ছেন, যখন বিনামূল্যে লিগ্যাল এডভাইস পাওয়া কিংবা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দাখিল প্রায় অসম্ভব।
জনৈক সরকারী মুখপাত্র বলেন, আমরা অত্যন্ত স্পষ্ট যে ,করোনাভাইরাসের উপসর্গ রয়েছে এমন যে কেউ বিনামুল্যে চিকিৎসা পাবে, এক্ষেত্রে অভিবাসন মর্যাদা বিবেচ্য নয় এবং এনএইচএস ট্রাস্টগুলোকে এ বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে যে, তাদের ক্ষেত্রে কোন ধরনের অভিবাসন পরীক্ষার প্রয়োজন হবে না।
তবে যারা যুক্তরাজ্যে তাদের পারিবারিক জীবন প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন, তাদেরকে অবশ্যই আইনের ভিত্তিতে তা করতে হবে, আর এটা এজন্য যে, এ ক্ষেত্রে আমাদের সরকারী অর্থ প্রদানের বিধান নেই, যদি তাদের এখানে অবস্হানের কোন বৈধ অধিকার না থাকে।