রমজানে লন্ডনবাসীর নতুন চ্যালেঞ্জ ‘এথিকাল ইফতার’
রমজান মাসে লন্ডনে গ্রিন ইফতারের আয়োজন করা হয় প্রতি বছর। এ বার তা অনলাইনে সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা হল। করোনা অতিমারি এক সামাজিক বিচ্ছিন্নতার জন্ম দিয়েছে। এই বিপন্নতা ও বিচ্ছিন্নতার সময় যাতে লন্ডনবাসী মুসলিমরা পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে মানসিকভাবে তাই এই বন্দোবস্ত।
এই নয়া আয়োজনের নাম দেয়া হয়েছে ‘এথিকাল ইফতার চ্যালেঞ্জ’। নিরাপদ অবস্থানে যাতে মুসলিম পরিবারগুলে ইফতার করেন সে দিকে লক্ষ্ রেখে এই উদ্যোগ। তাদের উৎসাহিতও করা হচ্ছে এথিকাল ইফতারে। ইচ্ছুকরা প্রতিবেশীদের খাদ্যসামগ্রী উপহার দিতে পারে। এমনকি খাদ্য ব্যাংকেও দিতে পারে খাবার।
উদ্বৃত্ত খাবার বাঁচানো, প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো ও গোশত কম খাওয়া–এই বিষয়গুলো রয়েছে এথিকাল ইফতার প্রকল্পের তালিকায়। ইফতারে প্রকৃতির স্পর্শ রাখার চ্যালেঞ্জ এটা, এমনটাই দাবি তাদের। প্রকৃতিবান্ধব এই উদ্যোগে বলা হয়েছে, বাড়ির বাগানে ইফতার করা এবং বাড়িতে চাষ করা ফল-সব্জি দিয়ে ইফতারের কথা।
ইংল্যান্ডে করোনা বিপজ্জনক আকার ধারণ করেছে। দেশের রাজধানী লন্ডন অন্যতম হটস্পট। এমন আবহে মুসলিমরা মসজিদে দলবদ্ধভাবে ইফতার করতে পারছে না এই পবিত্র রমযান মাসে। এথিকাল ইফতার চ্যালেঞ্জ তাদের সেই বেদনা খানিক লাঘব করবে বলে এই উদ্যোক্তাদের ধারণা। এ ছাড়া এমন ক্রান্তিকালে সামাজিক দূরত্ব মেনে ইফতার করা নৈতিক দায়িত্বও। মুসলিমরা সেই গুরুদায়িত্ব পালনেও সমর্থ হবে এইভাবে।
এই চ্যালেঞ্জের উদ্যোক্তারা উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র রুমি কেভ-এ প্রায় ১৫০ জনের জন্য গ্রিন ইফতারের আয়োজন করে প্রতি বছর। অংশগ্রহণকারীরা বাড়ি থেকে চাদর নিয়ে আসে এবং তিন দফা প্লাস্টিকমুক্ত নিরামিষ আহার সহ ভেষজ চা ও পানীয় উপভোগ করে। ইসলামের রত্ন হিসাবে দুই বোন সাকিনা লে নয়ার ও রাবিয়া মালি প্রতি বছর এখানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তাঁরাও এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন। আসলে তাঁদের ভাবনাতেই এই চিন্তা প্রথমে আসে। এই দুই বোন আরবি ও ইংরেজিতে ধর্মীয় গান লেখেন ও গেয়ে থাকেন। আধ্যাত্মবাদ ও সৃজনশীলতাকে মিলিয়ে দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য।
ইন্সটাগ্রামে এই দুই বোন জানতে চেয়েছিলেন, কোভিড-১৯-এর এই সামাজিক ও প্রশাসনিক কড়াকড়ির মধ্যে কে, কীভাবে রমজান কাটাবেন। লে নয়ার জানালেন, অধিকাংশ মানুষই প্রিয়জনরা কাছে না থাকায় একাকী ইফতার করতে হবে ভেবে বিষাদগ্রস্ত ও উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি বললেন,”আমি পরিবারের সঙ্গে আছি বলে নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হল।” তখনই তার মাথায় এই ভাবনা উদয় হয়। তার মতে, নবীর কথা মতো দল বেঁধে ইফতার খাওয়ার যে পরম্পরা তা অক্ষুন্ন থাকবে এভাবে। লোকজন ছবি শেয়ার করবে। ভার্চুয়ালি গড়ে উঠবে একটা সমাবেশ। এ ছাড়া অর্থ দান করে হোক বা খাদ্যব্যাঙ্কে খাবার দিয়েই হোক, রাসূল সা.-এর আদর্শ এভাবে জীবিত থাকবে। -পূবের কলম