ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’র সতর্কবাণী
যুক্তরাজ্য আগামী ৩ শতকের মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ধাবিত, তবে পুনরুদ্ধার এখনো সম্ভব
লকডাউনে আটকে পড়া ব্রিটেনের অর্থনীতি আগামী ৩ শতকের জন্য গভীর সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ সময়ে দেশটির জিডিপি করোনাভাইরাস মহামারির সময়ের চেয়ে ৩ গুণ বেশী দ্রুত গতিতে নিম্নগামী হতে পারে। সম্প্রতি ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে। চলতি বছর ব্রিটেনের উৎপাদন ১৪ শতাংশ হ্রাসের ধারায় রয়েছে — যা ১৭০৬ সালের পর থেকে সবচেয়ে বড়ো ধরনের বার্ষিক পতন বলে মনে করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গৃহীত জরুরী ব্যবস্হা গোটা আর্থিক খাতকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। ব্যাংকিং পতনের ফলে মন্দাকালীন সবচেয়ে খারাপ বছর ২০০৯ সালে জিডিপির পতন হয়েছে তুলনামূলকভাবে স্বল্প প্রকৃতির ৪.২ শতাংশ। কিন্তু চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক মেয়াদে চরম অবস্হা দেখা যাবে। কর্মকান্ড অস্বাভাবিক হ্রাস পেয়ে ব্রিটেনের প্রত্যেক পরিবারের জন্য মোটামুটি ৩০০ বিলিয়ন পাউন্ড থেকে ৯০০০ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত উৎপাদন হারাবে। আর এপ্রিল ও জুনের মাঝামাঝি এক চতুর্থাংশ হ্রাস পাবে। ব্যাংকের একটি ‘সচিত্র দৃশ্যপট ‘এর বিবরন তুলে ধরেছে।
বছরের প্রথম অর্ধেক সময় জুড়ে পুনরুদ্ধার শুরুর পূর্ব পর্যন্ত জিডিপির পতন ৩০ শতাংশের কাছাকাছি চলে যাবে। চলতি বছরের শেষ দিকে বেকারত্বের হার দ্বিগুন অর্থাৎ ৯ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে, যা একটি শতাব্দীর এক চতুর্থাংশে সর্বোচ্চ এবং বেকারভাতা গ্রহণকারী ৩০ লাখ মানুষের সংখ্যার চেয়েও বেশী।
কেবিনেট মিনিস্টার ব্রানডন লিউইস বলেন, সংখ্যাটি ‘ভাইরাসের ফলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে একটি প্রকৃত সচেতনতা সৃষ্টিকারী’। তবে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড, আজ যার সুদের হার রেকর্ড পরিমান নিম্নগামী অর্থাৎ ০.১ শতাংশ, এখনো আশাবাদী এবং একটি শক্তিশালী ভি-আকৃতির পুনরুদ্ধার সম্ভব বলে মনে করে। এটা ২০২১ সালে ১৫ শতাংশ হারে জিডিপির বৃদ্ধি প্রদর্শন করেছে। লকডাউন থেকে মু্ক্ত হওয়ার পর অর্থনীতিতে এ ধরনের প্রবৃদ্ধি সম্ভব হবে। আর ২০২২ সালে জিডিপি দাঁড়াবে ৩ শতাংশ।
তবে ব্যাংক এই মর্মে সতর্ক করে দিয়েছে যে, এসব কিছুই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ন্ত্রিত মেয়াদের ওপর বিশেষভাবে নির্ভর করবে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড -এর গভর্নর এন্ডু বেইলী বলেন, অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী যেভাবেই বিবর্তিত হোক না কেনো, ব্যাংকটি আর্থিক ও মুদ্রা বিষয়ক স্হিতিশীলতা প্রদানে প্রয়োজনীয় সব কিছুই করবে, যা দীর্ঘ মেয়াদী সমৃদ্ধি এবং দেশের জনগণের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন। এটা আমাদের সামগ্রিক ও আপোষহীন প্রতিশ্রুতি।
ব্যাংক আরো জানায় যে, ২০০৯ সালের আর্থিক মন্দার ফলে প্রায় বিধ্বস্ত ব্রিটেনের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে তাদের গৃহীত ব্যবস্হা সমূহ সফল হয় এবং বর্তমানে এটা ঋণ প্রদান অব্যাহত রাখতে যথেষ্ট শক্তিশালী, যা অর্থনীতিকে সহায়তা করবে এবং ক্ষয়ক্ষতি নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবে।
ব্যাংকিং পতনকালে লেবার পার্টির চ্যান্সেলর লর্ড ডার্লিং বলেন, আমরা একটি ব্যতিক্রমধর্মী সময়ে বসবাস করছি। এটা ১০ বছর আগের অর্থনৈতিক সংকটের চেয়ে অনেক, অনেক বেশী খারাপ। তিনি একটি ‘প্ল্যান ফর জবস’ অর্থাৎ ‘চাকুরির জন্য একটি পরিকল্পনা’র জন্য আহবান জানান এবং একটি ভি-আকৃতির পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে আশাবাদী বলে উল্লেখ করেন।
‘ইনস্টিটিউট ফর ফিসক্যাল স্টাডিজ’ -এর পরিচালক পল জনসন সম্ভাব্য শিথিল করে ব্রিটেনের কাজে ফেরার বিষয় এবং ফারলো অর্থাৎ বসে থাকা কর্মহীন শ্রমিকদের সহায়তা কর্তনের মধ্যে কৌশলিপূর্ণ অর্থনৈতিক ভারসাম্যের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়ে চ্যান্সেলর ঋষি সুনাককে সতর্ক করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, অতি তাড়াতাড়ি প্রত্যাহার ও গণহারে বেকারত্ব অনুসরণ করতে পারে।খুব ধীরগতিতে প্রত্যাহার করা হলে এবং জনগণের অর্থ ব্যয় বাড়লে, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাঁচিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। লন্ডন ফার্স্ট, দ্য সিটি অব লন্ডন চেম্বার অব কমার্সসহ নেতৃস্হানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে লেখা এক চিঠিতে ফারলো স্কীম সম্প্রসারণ এবং খন্ডকালীন চাকুরেদের সহায়তার জন্য এটাকে ‘আর্থিক স্হিতিস্হাপক’ করার আহবান জানিয়েছেন।
We have published our quarterly #MonetaryPolicyReport alongside an interim #FinancialStabilityReport. Together, they provide a scenario for the path of the UK economy in the light of Covid-19 and assess the financial system’s resilience to that scenario. https://t.co/3FIVG6rG2e pic.twitter.com/434WIhj8JX
— Bank of England (@bankofengland) May 7, 2020