হোম অফিসের নির্দেশনায় হাজারো লোক যুক্তরাজ্য ত্যাগে বাধ্য হবেন
হাজারো লোককে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাজ্য ত্যাগে বাধ্য করা হতে পারে, কারন মে মাস শেষ হওয়ার আগেই তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে । ২৪ মার্চ হোম অফিস বলেছে যে, যাদের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে কিংবা আগামী ২৪ জানুয়ারী এবং ৩১ মে’র মধ্যে যদি কারো ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায় এবং যারা কোভিড – ১৯ এর কারনে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করতে পারবেন না,তাদেরকে মে’র শেষ দিকে তাদের ভিসার মেয়াদ বর্ধিত করতে হবে। এই নির্দেশনার আর কোন হালনাগাদ তথ্য নেই।
অভিবাসন আইনজীবিরা শুধুমাত্র এই মাসের শেষভাগ পর্যন্ত ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির নীতি বহাল রাখার মাধ্যমে লোকজনকে একটি ‘মানসিক চাপপূর্ণ ও অনিশ্চিত পরিস্থিতি’তে নিপাতিত করার জন্য ডিপার্টমেন্টকে অভিযুক্ত করেছে। তারা এই সময়সীমা জরুরীভাবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করার জন্য আহবান জানিয়েছেন।
যে সব ভিসাধারী ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না, কিন্তু যাদের ভিসার মেয়াদ ৩১ মে’র পরে উত্তীর্ণ হয়ে যাবে তারা উদ্বিগ্ন, কারন লকডাউনের দরুন ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্ট সেন্টারগুলো বন্ধ থাকায় তারা আবেদন করতে পারবেন না। একইভাবে যুক্তরাজ্যের বাইরে থেকে যারা আবেদন করবেন, এবং যাদের দেশের বাইরে থেকে আবেদন করার প্রয়োজন তাদের পক্ষেও এ কারণে আবেদন করা সম্ভব হবে না।
বেন হিক (৩৬) বলেন, তার পরিবার জটিলতার মধ্যে পড়েছেন ,কারণ তারা বুঝতে পারছেন না, তার চীনা স্ত্রী তিংটিং ঝেং (৩৬), যিনি গত ফেব্রুয়ারী মাসে করোনা ভাইরাসের কারণে চীনের ঊহান থেকে ব্রিটেন চলে আসেন, তিনি এবং তাদের পাঁচ বছর বয়সী শিশু কন্যা সুফেই ব্রিটেনে থাকতে পারবেন কী-না।
যুক্তরাজ্যে আগমনের পর ৬ মাসের ভিসা লাভকারী মিসেস ঝেং মহামারি শুরুর আগে এই মর্মে একটি স্বামী/স্ত্রীর ভিসার জন্য আবেদন করার পরিকল্পনা করেন যাতে তিনি তার স্বামী ও মেয়ের সাথে স্থায়ীভাবে ব্রিটেনে বসবাস করতে পারেন। কিন্তু যেহেতু এটা একটি ‘আউট-অব-কান্ট্রি’ অর্থাৎ দেশের বাইরে থেকে আবেদনের বিষয়, তাই এখন এটা তার পক্ষে করা সম্ভব নয়।
হোম অফিস বলেছে যে, যাদের ভিসার মেয়াদ মে’র শেষে উত্তীর্ণ হয়ে যাবে, তারা দেশের বাইরে থেকে করা প্রয়োজন, এমন ভিসার জন্য ব্রিটেনের অভ্যন্তরে থেকেও আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু মিসেস ঝেং -এর ভিজিট ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে আগস্টে। স্বামী/স্ত্রী ভিসাসহ অন্যান্য ভিসার ক্ষেত্রে অনেক পরিবার উদ্বিগ্ন, কারণ আবেদনের জন্য তাদের একটি আইনানুগ ইংলিশ টেস্ট প্রয়োজন এবং লকডাউনের দরুন টেস্ট সেন্টারগুলো কমপক্ষে আগামী জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে।
অভিবাসন আইনজীবী হারজ্যাপ ভাংগাল বলেন, অনেক লোকের শেষ সময়সীমা পেরিয়ে গেছে কিংবা নিকট অতীতে শেষ হতে চলেছে। এ অবস্থায় হোম অফিস তাদেরকে কোন ছাড় কিংবা কোন স্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, যদি তারা একটি টেস্ট ছাড়াই আবেদন করে, তবে তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান হওয়ার কিংবা তাদের তাদের কেসটি ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিলম্বিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। যদি আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়, তবে তাদেরকে ২ হাজার পাউণ্ড থেকে ৩ হাজার পাউণ্ডের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
রয়েছে ‘ওভার স্টেয়ার’ হওয়ার অর্থাৎ মেয়াদ শেষ হওয়া সত্বেও অবস্হানের বিপত্তি ও এভাবে অবৈধ হয়ে পড়া, চাকুরী হারানো এবং শেষ পর্যন্ত বহিষ্কৃত হওয়া ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার মতো মর্মান্তিক পরিণতির আশংকা। মিঃ ভাংগাল এই বলে সতর্ক করেন যে, এভাবে একটি উইন্ডরাশ ধরনের ইস্যু সৃষ্টি হতে পারে। আর হোম অফিস হয়তো এমন একটি সমস্যা কিংবা কেলেংকারির জ্ন্যই অপেক্ষা করছে। এর আগেই তিনি তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিষয়টি সুরাহার আহবান জানান।
ইমিগ্রেশন ল’ প্র্যাকটিশনার্সেজ এসোসিয়েশন (আইএলপিএ) -এর লিগ্যাল ডিরেক্টর সোনিয়া লিনেগান বলেন, মাত্র ৩ সপ্তাহের মধ্যে বর্তমান ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদনের সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ঐসব লোকজন চাইলেই একটি বিমান পেয়ে যাবে, হোম অফিস বাস্তব সম্মতভাবে এটা প্রত্যাশা করতে পারে না। লোকজনকে এ ধরনের চাপপূর্ণ ও অনিশ্চিত অবস্হায় ফেলা ঠিক নয়। জরুরি পরিস্হিতি হিসেবে আরেকটি দীর্ঘ মেয়াদ বৃদ্ধি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। মার্চে আইএলপিএ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ধিতকরনের জন্য সুপারিশ করেছিলো এবং আমরা এই অবস্হানেই আছি। হোম অফিসের জনৈক মুখপাত্র বলেন, আমরা ঐসব বিদেশী নাগরিকদের জন্য ২০২০ সালের ৩১ মে পর্যন্ত ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করেছি, যারা বৈধভাবে যুক্তরাজ্যে আছেন এবং দেশে ফিরতে অক্ষম। আমরা ইন-কান্ট্রি সুইচিং বিধানসমূহ সম্প্রসারিত করেছি। এসব নিয়মিত পুনর্বিবেচনার অধীনে রাখা হচ্ছে। তবে নিয়ন্ত্রনের বাইরে পরিস্হিতির জন্য কাউকে দন্ড প্রদান করা হবে না।