সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে অক্সফোর্ডের তৈরি করোনার টিকা
করোনা প্রতিরোধে প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে গেলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। বলা যেতে পারে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রে সাফল্যে পথে আরও একধাপ এগিয়ে তারা। মানুষের শরীরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনা প্রতিষেধক পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পাশাপাশি পরীক্ষাগারে বানরের উপরেও এটি প্রয়োগ করে দেখা হয়েছিল। এই উদ্দেশ্য হল, এই প্রতিষেধকটির প্রয়োগে শরীরে কোনোরকম ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় কিনা, তা দেখে নেওয়া।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ভাল ফল মিলেছে এই পরীক্ষায়। পরীক্ষাগারে বানরের উপর প্রতিষেধকটি প্রয়োগের পাশাপাশি করোনাভাইরাসও প্রবেশ করানো হয় ওদের শরীরে। দেখা গিয়েছে, ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে এই প্রতিষেধকটি।
তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, এই প্রতিষেধকটির প্রয়োগে ওই বানরদের শরীরে কোনো ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলেই জানিয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এর ফলে মানুষের উপরেও এই প্রতিষেধকটি প্রয়োগের ভরসা পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
অনেক সময় কোনো প্রতিষেধকের প্রয়োগের ফলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে অন্যান্য একাধিক মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়। তাই মানুষের শরীরে এই প্রতিষেধকটির কোনো ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কিনা, সেটাই এখন দেখে নিতে চান বিজ্ঞানীরা। খুব শীঘ্রই সেই পরীক্ষা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। অর্থাৎ, করোনার প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি পর্ব শুরু করে দিলেন বিজ্ঞানীরা।
সারা বিশ্বে ত্রাশ সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস কেড়েছে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে লকডাউন চলছে বিশ্বের শতাধিক দেশে। তবে শুধুমাত্র সতর্কতা বা লকডাউনে রোখা যাবে না করোনা সংক্রমণ। জাতিসঙ্ঘ জানিয়েছে, প্রতিষেধক ছাড়া করোনাভাইরাসকে রোখা অসম্ভব!
করোনা মোকাবিলায় প্রায় ১০০টি প্রতিষেধকের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। এর মধ্যে ৪টির ক্ষেত্রে অগ্রগতি ও সাফল্য সবচেয়ে বেশি। এগুলির বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন আর চিকিৎসায় প্রয়োগ শুরু হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। এই ৪টির করোনা প্রতিষেধকের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি প্রতিষেধক ChAdOx1 nCoV-19।
গত ২৩ এপ্রিল মানুষের উপর তাদের তৈরি করোনা প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ৫১০ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপর পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে ChAdOx1 nCoV-19-এর কার্যকারিতা।
২৩ এপ্রিল স্বেচ্ছাসেবকের উপর প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর পরবর্তী ১৫ দিন তাদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। আশা জাগিয়ে প্রতিষেধকের প্রভাবে কোনও রকম ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি বলেই জানিয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এ বার দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় মানুষের শরীরে প্রতিষেধকের ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দিকটি ভাল করে দেখে নিতে চাইছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।