রোহিঙ্গাদের ইউরোপে পুনর্বাসনের আহ্বান বাংলাদেশের
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপের ১০ টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সহায়তা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ইউরোপের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে এ সহায়তা চান তিনি। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব একা বাংলাদেশের নয়। এ দায়িত্ব ভাগাভাগি করে রোহিঙ্গাদের ইউরোপের দেশগুলোতে পুনর্বাসনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীদের অনুদান কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে জোর দিয়েছে ঢাকা।
ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপের রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে ডেনমার্ক, ফ্রান্স, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, ইতালি, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি অংশ নেন। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে রাষ্ট্রদূতদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া শুধু বাংলাদেশের একার দায়িত্ব নয়। তাদের উন্নত জীবন ও জীবিকার জন্য এ বোঝা ভাগাভাগি করে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি ইউরোপের দেশগুলোতে অথবা কোনো তৃতীয় দেশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূতদের কাছে। প্রায় তিন বছর পার হয়েছে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিতে চাইলেও এখন পর্যন্ত একজনও যায়নি। মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য আরও চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান ড. এ কে আবদুল মোমেন। এ সময় রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে আবারও সাধুবাদ জানান ইইউ রাষ্ট্রদূতরা।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদূতদের বলেন, ইইউ বাংলাদেশের দীর্ঘ সময়ের এবং বিশ্বাসযোগ্য উন্নয়ন অংশীদার। তাদের কোনো বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে যাতে তারা সরকারকে সরাসরি তা জিজ্ঞেস করে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূতরা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে রাষ্ট্রদূতদের নিশ্চয়তা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকে ক্যাম্পে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক নিয়ে আলোচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দায়িত্বপ্রাপ্তরা ইন্টারনেট ও ৪-জি সেবা তাদের কার্যালয় ও আবাসস্থল থেকে পাবেন বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, মাদক চোরাচালান রোধ, নারী ও শিশু পাচার রোধ, মানুষকে উসকে দেওয়া রোধ এবং নীল ছবি তৈরি বন্ধের মতো নিরাপত্তার কারণে সরকার ক্যাম্প এলাকাতে ৪-জি সেবা সীমিত করেছে। তবে সেখানে ২-জি সেবা চালু রয়েছে, যা দৈনিক যোগাযোগের জন্য যথেষ্ট। ২-জি হ্যান্ডসেটের থেকে ৪-জি হ্যান্ডসেটের দাম ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি। ফলে রোহিঙ্গারা ৪-জি হ্যান্ডসেট কেনার সক্ষমতা রাখে না। যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের সরকার সবসময়ে সুরক্ষা দেবে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূতদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৩৩টি টিভি চ্যানেল, কয়েক শত পত্রিকা এবং অসংখ্য অনলাইন বাংলাদেশে রয়েছে। যা অনেক দেশে বিশেষ করে ইউরোপে নেই। ফলে এখানে মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। দায়িত্বশীল আচরণ ছাড়া স্বাধীনতা সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি করে।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতার নামে কেউ বন্দুক নিয়ে মার্কেটে বা স্কুলে গুলী চালাতে পারে না। অথবা মনগড়া গল্প দিয়ে কেউ মানুষকে উসকে দিতে পারে না। বাংলাদেশ সরকার সবসময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সুশাসন ও গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে। বৈঠকে রাষ্ট্রদূতরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বৈঠকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপগুলো রাষ্ট্রদূতদের জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়াকে আটকাতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোকে সাধুবাদ জানান রাষ্ট্রদূতরা। সেইসঙ্গে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের দেশগুলো থেকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেন। সামনের দিনগুলোতে ইইউ থেকে ৩৩৪ মিলিয়ন ইউরো সহযোগিতার প্রস্তাবের কথা জানান রাষ্ট্রদূতরা। এর এক তৃতীয়াংশ ১০৩ মিলিয়ন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে দেওয়া হবে। এ সহযোগিতায় জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উন্নয়ন সহযোগীদের মাধ্যমে অনুদান কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের উপর গুরুত্বারোপ করেন। দেশগুলোর করদাতাদের করের অর্থ কিভাবে খরচ হচ্ছে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা উচিত বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।