লন্ডনে “পারিবারিক মাইগ্রেশন আইন” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
সাজু আহমদ: নতুন বছরের জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারীতে স্পাউস ভিসায় পরিবার আনতে আয়ের যে সীমারেখা রয়েছে,তা পরিবর্তনের ঈঙ্গিত পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ইমিগ্র্যান্টদের জন্য আইনের নতুন খড়গ নেমে আসছে। ভাড়া থাকতে হলে পাসপোর্ট অথবা আইডি দেখাতে হবে।
গত ৭ অক্টোবর বিলেতের লন্ডন মুসলিম সেন্টারে মুসলিম প্রফেসনাল ফোরাম আয়োজিত “পারিবারিক মাইগ্রেশন আইন : পারিবারিক বিভক্তি-পরিবর্তনের আহ্বান” শীর্ষক সেমিনারে ইমিগ্রেশন আইনে বিশেষজ্ঞ বক্তারা উপরোক্ত কথা বলেন।
পারিবারিক মাইগ্রেশন আইনের মানুষের মৌলিক অধিকার পারিবারিক জীবন যাপনে বিরাট বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। অপরদিকে এই আইন ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আইনকে লংঘন করলেও এ ব্যাপারে মুলধারায় রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মীরা নির্বাক বলে দাবী করেন বক্তারা।
স্পাউস ভিসা (পারিবারিক ভিসা) তে পরিবার আনতে হলে যে মানবাধিকার বিরোধী ১৮,৬০০ পাউন্ডের আয়ের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে-এর বিরুদ্ধে আপিল পরিচালনাকারী বিখ্যাত ইমিগ্রেশন আইনজ্ঞ মনজিত জিল কিউসি বলেন, নতুন বছরের জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারীতে হয়তো এ রায়ের ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। তবে এর জন্য বিভিন্ন বহুজাতিক কমিউনিটিকে-এই আইনের ফলে তাদের নিষ্পেষিত হওয়ার কাহিনীনগুলো আমাদের কাছে তুলে ধরতে হবে। তখন আমরা কোর্টে আরও যথাযথ ভাবে তথ্য প্রমাণ সহ মানুষের এ আইনের ফলে পারিবারিক জীবনে যে দুবির্ষহ অবস্থা চলছে তা তুলে ধরতে পারব,যা এই আইনের পরিবর্তনে সহায়ক হবে। তিনি আরও বলেন,এই আইনের ফলে আয়ের সীমা কম থাকার কারণে যারা বিয়ে করতে পারছেন না, অথবা যারা বিয়ে করে বউ বাচ্চা আনতে পারছেন না প্রবাস থেকে-তাদের নিয়ে কমিউনিটি ভিত্তিক বিভিন্ন জরিপ করা যেতে পারে যা আমরা কোর্টে তুলে ধরতে পারি।
ইজলিংটন নর্থ নির্বাচনী এলাকার এমপি জেরিমি করভিন বলেন,এই আইন ইউরোপীয়ান মানবাধিকার আইন বিরোধী। ইউরোপীয়ান আইন অনুযায়ী প্রত্যেকের স্বাধীনভাবে বিয়ে করার অধিকার রয়েছে। এক্ষেত্রে আয়ের কোন সীমাই থাকা উচিত নয়। তিনি আরও বলেন,৬০/৭০ এর দশকে এক সময় আমরা এদেশে ইমিগ্র্যান্টদের স্বাগত জানিয়েছি,কিন্তু আজ আমরা তাদের পারিবারিক অধিকার ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছি। ইউরোপীয় আইন আমরা ইচ্ছামত ব্যবহার করছি। ৬০/৭০ এর দশকে যদি ইমিগ্র্যান্টরা না আসত-তাহলে আমরা আজকে কোথায় পেতাম এত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নার্স সহ এতসব প্রফেশনাল।
জয়েন্ট কাউন্সিলর ফর দি ওয়েলফেয়ার অব ইমিগ্র্যান্টস্ এর হাবিবুর রহমান বলেন,সামনে নতুন বিধ্বংসী আইন আসছে। আপনাদের ঘর ভাড়া নিতে হলে পাসপোর্ট অথবা আইডি দেখাতে হবে। এ রকম ইমিগ্র্যান্ট বিরোধী আইনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ রকম আইন হলে বিলেত পিছনের দিকে ফিরে যাবে, হয়ে যাবে আফ্রিকার দেশগুলোর মতো। এক সময় যখন বিলেতে দেয়ালে লেখা হতো ‘আমরা কালো চাই না, আইরশ চাই না’ রকমের বর্ণাবাদী উক্তি।
মতবিনিময় সভায় মুসলিম প্রফেসনাল ফোরাম এর চেয়ারপার্সন মোহাম্মদ খালেদ নূর এর পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন-ইমিগ্রেশন জাজ বেলায়েত হুসেন, মাইগ্রেন্টস রাইট নেটওয়ার্ক এর রুথ গ্রোব হোয়াইট, সোসাইটির অব বাংলাদেশ সলিসিটরস এর সভাপতি শফিকুর রহমান, গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল এর সভাপতি ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, সলিসিটর নাজির আহমদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টার এর পরিচালক দেলোয়ার হুসেন খান প্রমুখ ।