দুই বছর পর মুক্ত খালেদা জিয়ার ঈদ উদযাপন
ঈদের দিনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে দোয়া-মোনাজাত, নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করা এক প্রকার রীতিই ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিশিষ্টজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভক্ত-অনুসারিরা দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে একে একে তাঁর সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। অনেক নেতাকর্মীই এই অনুষ্ঠানটির জন্য ঢাকায় ঈদ করে পরে গ্রামে ফিরতেন। প্রিয় নেত্রীকে কাছ থেকে এক পলক দেখে, তার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে আনন্দে উদ্বেলিত হতেন। বেগম জিয়াও শুভেচ্ছা বিনিময়ের সাথে সাথে পরিচিতজনদের পরিবারের খোঁজখবর নিতেন।
কিন্তু দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি থাকায় গত চারটি ঈদে বন্ধ ছিল এই আয়োজন। এবার কারামুক্ত অবস্থায় ঈদ পেলেও অসুস্থতা এবং করোনা পরিস্থিতির কারনে নিজের বাসাতেই কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন দেশের অন্যতম এই জনপ্রিয় নেত্রী। ইচ্ছা থাকলেও দেখা করতে পারছেন না নেতাকর্মীদের সাথে। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসা রান্না করা খাবার খেয়ে, ছেলে, ছেলেদের বউ ও নাতনীদের সাথে স্কাইপিতে কথা বলেই কাটছে বিএনপি চেয়ারপারসনের এবারের ঈদ।
পরিবারের সদস্য ও বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদের দিন সকালেই ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন তেলাওয়াত করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এরপর কিছুটা সময় শুয়ে-বসেই কাটান। বোন সেলিমা ইসলাম ও ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতিমা বাসা থেকে ফিরনি, পায়েস, সেমাইসহ বেগম জিয়ার পছন্দের খাবার রান্না করে নিয়ে আসেন। তাদের সাথে বিএনপি চেয়ারপারসন ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। একত্রে বসেই খাবার খান এবং পারিবারিক পরিবেশে কিছু সময় কাটান। পরবর্তীতে ভাই শামীম ইস্কান্দারও আসেন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে। এর মাঝে স্কাইপিতে কথা বলেন ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর বউ শর্মিলা রহমান সিথীর ও নাতনীদের সাথে। বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার পরিবার লন্ডনে রয়েছেন। সময়ের ব্যবধানের কারণে তাদের সাথে কথা হয় দুপুরের দিকে। স্কাইপিতে বেগম জিয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও নাতনীদের সাথে কথা বলেন, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বিকেল ৫টা পর্যন্ত পরিবারের সদস্য ছাড়া দলের কোন নেতাকর্মী বেগম জিয়ার সাথে সাক্ষাত করার বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, সকালে পরিবারের সদস্যরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা বাসা থেকে খাবার রান্না করে বেগম জিয়ার জন্য এনেছিলেন। এছাড়া ছেলে, ছেলের বউ ও নাতনীদের সাথে স্কাইপিতে কথা বলেছেন এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। তবে বিকেল পর্যন্ত দলের কেউ দেখা করেননি। এরকম কোন সিদ্ধান্তের কথা তিনি জানেন বলেও জানান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা প্রতিবছর ঈদের দিনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করি। এবার তিনি অসুস্থ থাকার কারণে আসতে পারেননি। তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, যেমন ছিলেন তার চেয়ে অবস্থা খারাপ হয়নি, স্থিতিশীল রয়েছে।
এদিকে পরিবারের একজন সদস্য জানান, বেগম জিয়া করোনায় এবং ঘুর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কথা মনে করে বেশ উদ্বিগ্ন। এসব পরিবারে যে ঈদের আনন্দ নেই সেটি তিনি অনুভব করেন এবং সমবেদনা জানান। একইসাথে সকলকে নিরাপদে থাকার এবং সামর্থবানদের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।