ব্রিটেনে ঘরে ঘরে পারিবারিক ঈদের নামাজ!
করোনার জন্য জন সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকায় ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশনা মেনে ব্রিটেনের মুসলমানরা এ বছর ঘরেই ঈদের নামাজ পড়েছেন। কয়েকটি মসজিদে ঈদের নামাজের ব্যবস্থা ছিলো হোয়াটসঅ্যাপে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। দেশটিতে এই প্রথম ঈদের জামাত হচ্ছে না বলে জানান দেশটির ধর্মীয় নেতারা। রোববার ঈদের দিন বন্ধ ছিলো ব্রিটেনের সব মসজিদ ও ঈদ জামাতের স্থান। কোথাও ছিলো না সবার প্রিয় ‘ঈদ ইন দ্যা পার্ক ’ সেলিব্রেশন, এর পরিবর্তে কোনো কোনো বাড়িতে হয়েছে ‘ঈদ ইন দ্যা বেক গার্ডেন’।
মুসলমানরা নিজ পরিবার নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন বাসায় বা বাড়ির গার্ডেনে। রং বেরংয়ের পোশাক পরে রাস্তায় ছিলো না ছোট্ট বাচ্চাদের চলাচল, ছিলো না সেই চিরপরিচিত ঈদ আলিঙ্গনের দৃশ্য। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের একমাত্র মাধ্যম ছিলো টেলিফোন কল, ওয়াটসআপ, জুম, ম্যাসেঞ্জার, হাউস পার্টিসহ সোস্যাল মিডিয়া।
পরিবারকেন্দ্রিক এই ঈদে স্বজনের সাথেও ছিলো না সাক্ষাত বা আড্ডার সুযোগ। সেমাই পায়েশ সামনে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে ছিলেন শুধুই পরিবার সদস্যরা, ছবি তোলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেই ছিলো ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের একমাত্র অবলম্বন। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে কেউ এসে কলিংবেল টিপেনি কারো দরজায়। শান্তি, সমৃদ্ধির চেয়ে ঈদ মোনাজাতে শুধুই শোনা গেছে কোভিড-১৯ নামক ঘাতক শত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহ কাছে করুনা প্রার্থনা।
পারিবারিক আয়োজন ছাড়াও ঈদ উপলক্ষে ব্রিটেনের বিভিন্ন কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন অনলাইনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রোববার ঈদের দিন লন্ডনের মেসেজ কালচারাল ফোরাম নামে বাংলাদেশী একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন অনলাইনে ইসলামি নাশিদের আয়োজন করে। মুসল্লিরা বাসায় বসে পরিবার নিয়ে ওই অনুষ্ঠান উপভোগ করে। আবার বল্টনের ভারতীয় কমিউনিটির একটি ইসলামি সংগঠন অনলাইনে ইসলামি গান ও ইসলামি লেকচারের আয়োজন করে। একই ভাবে লন্ডনে ও বার্মিংহামে বিভিন্ন সংগঠন অনলাইনে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ঈদ খুশি ও আনন্দের হলেও অনেক ব্রিটিশ মুসলিমের জন্য এ দিন ছিলো দুঃখের ও শোকের। করোনার কারণে অনেকে প্রিয়জনের সাথে দেখা করতে না পেরে ভীষণ কষ্টে বাসায় সময় কাটিয়েছেন। অনেকের রক্তের সম্পর্কের স্বজনের সাথে নিজ দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু করোনার কারণে সব ফ্লাইট বন্ধ থাকায় সে পরিকল্পনায় ভাটা পড়ে। আবার অনেকের প্রিয়জনের কবর ব্রিটেনে হলেও করোনার কারণে কবর জিয়ারতে যেতে পারেননি। খুশির পরিবর্তে তাদের মনের গহীন থেকে শুধুই বেরিয়ে এসেছে কান্না ও শোক। ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’- কবির এই গানের কলি যেন একটু পরিবর্তিত হয়ে অনেকের ভেতরেই গুঞ্জরিত হচ্ছিল ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো শোকের ঈদ’। কারণ এই ঈদে অনেক পরিবারই ছিলো স্বজনহারা। কিছুদিন আগে যাদের কোনো না কোনো সদস্যকে কেড়ে নিয়েছে ঘাতক অদৃশ্য শত্রু কোভিড-১৯।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী করেনাভাইরাসের কারণে এবার ব্রিটেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রথমবারের মতো খোলামাঠে বা মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। সউদী আরবের গ্রান্ড মুফতি ও ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ এবার ঘরে বসেই ঈদের নামাজ আদায়ের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, মহামারি ঠেকাতে এবারের ঈদে বড় জমায়েত থেকে দূরে থাকাই সমীচীন হবে।
ভারতে ইসলামের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মীয় এই শিক্ষাকেন্দ্র তাদের এক নির্দেশিকায় মুসলিমদের এবার নিজেদের ঘরের ভেতরেই ঈদ পালন করতে বলেছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রতিবারের মতো সবাইকে নিয়ে যাতে ঈদ উদযাপন না-করা হয়, সে জন্য ‘হ্যাশট্যাগ নো ঈদ সেলিব্রেশন’ কিংবা ‘হ্যাশট্যাগ নো নিউ ক্লোদস ইন ঈদ’ সোশ্যাল মিডিয়াতেও শেয়ার করা হচ্ছে। মিশর ও সউদী আরব এবারের ঈদের ছুটিতে কারফিউ ঘোষণা করেছে, তুরস্কও বলেছে অন্যবারের মতো ঈদ পালন করা যাবে না। করেনাভাইরাসের এ বৈরীসময়ে প্রায় ১০ সপ্তাহ যাবৎ ব্রিটেনের মসজিদগুলোতে নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সম্ভব হচ্ছেনা।