বেসরকারি রকেটে দুই নভোচারীর ঐতিহাসিক সফর

ইতিহাসে এই প্রথম বেসরকারি কোম্পানির রকেটে করে মহাকাশে গেলেন নাসার দুই নভোচারী। টেক বিলিয়নেয়ার এলন মাস্কের মালিকানাধীন বেসরকারি রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স এই ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। স্পেসএক্সের নতুন এই সক্ষমতা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কর্মী পরিবহনে রাশিয়ার রকেট এবং ক্যাপসুলের উপর নাসার নির্ভরতা কমাবে। এই বিষয়টিকেই স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উৎক্ষেপণ দেখতে ফ্লোরিডায় যেয়ে তিনি বলেন, ‘কক্ষপথে আমাদের নভোচারীদের পৌঁছাতে অন্য দেশের দয়ার উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন অতীতের নেতারা। কিন্তু আর নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমরা আরেকবার আমেরিকান নভোচারীদের আমেরিকার রকেটে করে পাঠাচ্ছি- যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভাল- ঠিক এখানে আমেরিকার মাটি থেকেই পাঠানো হচ্ছে।’

দুই নভোচারী ডগ হার্লি এবং বব বেনকেন শুধু নতুন একটি ক্যাপসুল ব্যবস্থাই পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছেন না বরং তারা নাসার জন্য নতুন একটি ব্যবসায়িক মডেলের সূচনা করতে যাচ্ছেন। আশা করা হচ্ছে যে, স্পেসএক্স কোম্পানিটি বাজার প্রসারিত করবে। এরিমধ্যে এরোস্পেস জায়ান্ট বোয়িং এ কাজটির জন্য নাসার সাথে চুক্তি করেছে।
এ বিষয়ে স্পেসএক্সের মালিক এলন মাস্ক জানান, তার যন্ত্র নভোচারীদেরকে কক্ষপথে নিয়ে যাচ্ছে, এটা দেখে তিনি আবেগাপ্লুত। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এটা এমন একটা কাজ যা মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে, বিশেষ করে তাদের যাদের অনুসন্ধানী আত্মা রয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে এমন অনুসন্ধানী আত্মাদের সূতিকাগার।’
আবহাওয়াবিদরা বলেছিলেন যে, ফ্লোরিডার কেনেডি মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উড্ডয়নের সময় অনুকূল অবস্থা বজায় থাকার সম্ভাবনা ৫০-৫০। কিন্তু ভাগ্য সহায় থাকায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকার সুযোগটি লুফে নেয় স্পেসএক্স কন্ট্রোলাররা।
মহাকাশ স্টেশনের বিখ্যাত ৩৯-এ প্যাড থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে আটলান্টিকের দিকে উড্ডয়ন করে। আড়াই মিনিট পর মহাকাশ যানটির নিচের অংশ আলাদা হয়ে সাগরে থাকা একটি ড্রোন জাহাজে অবতরণ করে। আর এর মাত্র ছয় মিনিট পর আরোহীরা নিরাপদে কক্ষপথে প্রবেশ করে। এর মাঝে তারা ক্যাপসুলে থাকা কিছু যন্ত্রপাতি এবং প্রক্রিয়া পরীক্ষা করে দেখবেন। যার মধ্যে কিছু ফ্লাইং ম্যানুয়ালও রয়েছে।
যদিও ড্রাগন ক্যাপসুলটি পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় এবং এটি নিজে নিজেই পথ খুঁজে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছাতে সক্ষম, তবুও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে তৈরি থাকতে এটি কিভাবে হাতে চালানো যাবে সেটি জানাটাও জরুরি। কক্ষপথে তাদের প্রথম কাজটি হবে তাদের মহাকাশযানটির একটি নাম দেয়া- মঙ্গল যাত্রা থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের অতীতের মহাকাশচারীদের ঐতিহ্য অনুযায়ী এই রীতি চলে আসছে। পৃথিবীতে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে এর নাম ‘এনডেভার’ বলে ঘোষণা করা হবে।
হার্লি এবং বেনকেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কতদিন থাকবেন সেটি এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে যে এক থেকে চার মাসের মতো তারা সেখানে থাকবেন। আশা করা হচ্ছে যে আটলান্টিকে তাদের ফিরে আসাটাও উড্ডয়নের মতোই ঝামেলাহীন হবে এবং সেটি নিশ্চিত করতে নাসা ও স্পেসএক্স একযোগে কাজ করবে।
আইএসএস এ ছয়টি অভিযানের মাধ্যমে ক্রু পৌঁছানোর বিষয়ে কোম্পানিটির সাথে নাসার ২.৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি রয়েছে। এগুলোর প্রথমটি অগাস্টের শেষের দিকে বা তার পর পরই শুরু হবে। তখন একটি ড্রাগনে করে দুই জনের পরিবর্তে চারজন করে আরোহী থাকবে। -বিবিসি

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button