বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল বিশ্ব

পুলিশ বিভাগে সংস্কারের আশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রে কারফিউ প্রত্যাহার

পুলিশ হেফাজতে মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মহামারি উপেক্ষা করেই ছড়িয়ে পড়েছে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন। পুলিশ হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে হাজার হাজার মানুষ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিচ্ছেন। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তাও জোরদার করে প্রশাসন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক, শিকাগো এবং স্যান ফ্র্যান্সিসকোতেও ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে নর্থ ক্যারোলিনায় ফ্লয়েডের জন্মস্থানে মানুষেরা তাকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেনেও বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে আন্দোলনকারীরা অস্ট্রেলিয়ায় পুলিশ হেফাজতে আদিবাসীদের মৃত্যুর বিচারের দাবি করেছেন। এছাড়া ইউরোপের দেশ জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেনেও বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যুক্তরাজ্যেও করোনা প্রকোপের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব না মেনে আন্দোলনকারীরা বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন।
এদিকে, আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দেশজুড়ে যে প্রন্ডে বিক্ষোভ হচ্ছে তারই মধ্যে নিউইয়র্ক এবং শিকাগো কারফিউ তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের প্রশাসনও মনে করছে, পুলিশ বিভাগে সংস্কার প্রয়োজন। পুলিশ বিভাগে সংস্কার করা হবে, জনতাকে সেই আশ্বাস দিয়েই রোববার নিউইয়র্ক এবং শিকাগোতে কারফিউ শিথিল করেছে প্রশাসন।
গত সপ্তাহে আমেরিকার মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার প্রতারণার দায়ে জর্জ ফ্লয়েডকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এর প্রতিবাদে দেশজুড়ে প্রচন্ড বিক্ষোভ শুরু হয়েছে এবং সে বিক্ষোভ এখন ছড়িয়ে পড়েছে আমেরিকার বাইরে। আমেরিকার ভেতরকার বিক্ষোভ মোকাবেলার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট কয়েকদিন আগে থেকেই সেনা মোতায়েনের হুমকি দিয়ে আসছেন। তবে পেন্টাগনের একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার, সেনাপ্রধান জেনারেল মার্ক মিলি এবং অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার সেনা মোতায়েন না করার পরামর্শ দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের কথা জানিয়েছে দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট ও মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএস। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, “রাজপথের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে আনতে চাই। এইজন্য আমি ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করব এবং এখনই সেটা করতে চাই।” অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ‘ইনসারেকশন অ্যাক্ট-১৮০৭’ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সেনা মোতায়েনের ক্ষমতা দিয়েছে।
গত ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ হেফাজতে মারা যান জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক। সেইদিনই পুলিশ তাকে আটক করেছিলো। এরপর হাঁটু দিয়ে জর্জের গলা চেপে ধরেন পুলিশ। এভাবে অন্তত আট মিনিট তাকে মাটিতে চেপে ধরে রাখা হয়। এক প্রত্যক্ষদর্শীর তোলা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, জর্জ ফ্লয়েড নিঃশ্বাস না নিতে পেরে কাতরাচ্ছেন এবং বারবার একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তাকে বলছেন, ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’ এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয় মুহূর্তেই। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ডেরেক চাওভিনসহ চার পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। পাশপাশি সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চাওভিনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button