বিশ্বের এয়ারলাইন্সগুলো হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে
২০২৩ সালের আগে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরবে না বিশ্বের এভিয়েশন খাত
প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাস সঙ্কটে বিশ্বের ছোট বড় সব এয়ারলাইন্সগুলি হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করছে। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন বিষয়ক সংস্থা বলছে, চলতি বছর আন্তর্জাতিক পর্যটন কমতে পারে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত। এ জন্য এয়ারলাইন্সগুলো হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ প্রায় ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে। ৩২ হাজার কর্মী ছাঁটাই করতে পারে আইরিশ রায়ান এয়ার, জার্মানির লুফথানসা, ফ্রান্সের এয়ারফ্রান্স।
ইউরোপের বৃহত্তম এয়ারলাইন্স লুফথানসা ১৮ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে। ভার্জিন আটলান্টিক ছাঁটাই করবে ৩ হাজার কর্মী। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এয়ারপোর্ট থেকে মূল্যছাড় প্রত্যাশা করছেন কিছু ইউরোপীয় এয়ারলাইন্স। তবে টিকে থাকার লড়াইয়ে রাশিয়ার অ্যাভিয়েশন খাত পর্যাপ্ত সরকারি সাহায্য পাচ্ছে।
এদিকে, কোভিড সংক্রমণের জেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও প্রায় ৯৬ শতাংশ যাত্রিবাহী বিমান পরিষেবা কমেছে। তবে, সরকার ২,৫০০ কোটি ডলার আর্থিক অনুদান দেওয়ায়, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মী ছাঁটাই করতে পারবে না মার্কিন কোনও এয়ারলাইন্স। তাই অক্টোবরে ৩০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করেছে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স। ১২ হাজারের উপর কর্মী ছাঁটাই হবে। আমেরিকান এয়ারলাইন্সও ৩০ শতাংশ, অর্থাৎ ৫ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে। কাতার এয়ারওয়েজ, এয়ার এশিয়াও কর্মী ছাঁটাই করবে।
গালফ উপসাগরীয় বিমান সংস্থা এমিরেটস এবং এতিহাদ এয়ারওয়েজ আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের কর্মীদেরকে হ্রাসকৃত বেতন দেবে। দুবাইয়ের এমিরেটস এয়ারলাইনস রোববার কর্মচারীদের জানিয়েছে যে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও তিন মাস বেতন কর্তন করা হবে। প্রাথমিকভাবে কর্মচারীদের বেতন ৫০ শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে বেতন আরও হ্রাস করা হতে পারে বলে ঘোষণায় বলা হয়েছে। আর্থিক ক্ষতি মোকাবেলার সম্ভাব্য সকল বিকল্প পর্যালোচনা করার পরে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এমিরেটসে ১ লাখ ৫ হাজার কর্মী রয়েছে। এর আগে জুনিয়র কর্মচারীদের অব্যাহতি দিয়ে বাকিদের জন্য গত এপ্রিল থেকে তিন মাসের জন্য ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেতন হ্রাস করা হয়েছিল।
আবুধাবির ইতিহাদ এয়ারওয়েজ সেপ্টেম্বরের পর্যন্ত কর্মচারীদের বেতন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ হ্রাস করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সংস্থাটির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সবার চাকরি রক্ষা এবং নগদ সংরক্ষণের সকল বিকল্প বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত এপ্রিল মাস থেকেই কর্মচারীদের বেতন হ্রাস করেছিল সংস্থাটি।
ইতিহাদ গত সপ্তাহে কিছু কেবিন ক্রু ছাঁটাই করেছিল। তবে নতুন করে আর কোনও ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়নি। মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিমান সংস্থাটি বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে লোকবল কমিয়েছে। গত মাসে একটি সূত্র জানিয়েছিল যে, ইতিহাদ ১ হাজার ২০০ কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করার পরিকল্পনা করছে। অন্যান্য এয়ারলাইন্সের মতো, আরেক উপসাগরীয় বিমান পরিবহণ সংস্থা কাতার এয়ারওয়েজ জানিয়েছে যে, তারা ২০ শতাংশ কর্মচারী ছাঁটাই করতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, ২০২৩ সালের আগে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরবে না বিশ্বের এভিয়েশন খাত। কোভিড-১৯ লকডাউনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এ খাতের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৩১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।