করোনাভাইরাস মহামারি
ব্রিটেনে স্পাউস ভিসার আয়ের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ার আশংকায় দম্পত্তিরা
করোনাভাইরাস মহামারির ফলে আয়ের আবশ্যকীয় শর্ত (১৮৬০০ পাউন্ড) পূরণে ব্যর্থ হওয়ার আশংকায় ব্রিটেনের অভিবাসন প্রত্যাশী দম্পত্তিরা। যেসব ব্রিটিশ নাগরিক তাদের নন-ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলির নাগরিক) স্বামী বা স্ত্রী থেকে কয়েক মাস বিচ্ছিন্ন থেকেছেন, তারা তাদের এই বিচ্ছিন্ন অবস্হা স্হায়ী হওয়ার আশংকা ব্যক্ত করেছেন। কোভিড-১৯ সংকটের ফলে সৃষ্ট ব্যাপক বেকারত্ব ও ফারলোয়িংদের (কর্মহীনদের সহায়তা স্কীম) দরুন তারা ভিসার জন্য অযোগ্য হয়ে পড়তে পারেন।
৪০ বছর বয়সী ভিকি স্কার্থ গত অক্টোবর শ্রীলংকা থেকে যুক্তরাজ্যে ফিরে আসেন তার স্বামী বিক্রমকে ৩ বছরের জন্য স্পন্সর করার লক্ষ্যে, যাতে স্বামী ও ৬ বছরের পুত্রসহ এডিনবার্গে বসবাস করতে পারেন। তিনি একটি চাকুরী যোগাড় করেন যাতে তার আবশ্যকীয় বার্ষিক আয় হয় কমপক্ষে ১৮৬০০ পাউন্ড। কিন্তু মহামারির কারণে গত ফেব্রুয়ারী মাসে তাকে বরখাস্ত করা হয় এবং তখন থেকে তিনি কোন কাজ পেতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ভিকি স্কার্থ বলেন, আমি নিজেকে একটি অসম্ভব অবস্হায় দেখতে পাচ্ছি। আমি আমার চাকুরী হারাই এবং এ মুহূর্তে আর কোন চাকুরী পাইনি। আমার কোন চাইল্ড কেয়ার প্রভিশন নেই। আমার জীবনে এই প্রথম শূণ্যতায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম, সম্পূর্ণ অবহেলিত বোধ করলাম।
তিনি আরো বলেন, আমি এজন্য ক্রুদ্ধ হলাম যে, আমার পরিবারের জন্য সঠিক কী সে ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমি যা চেয়েছিলাম তা হচ্ছে একত্রে থাকা-আমাদের তো একটি পারিবারিক জীবনের অধিকার রয়েছে।
পল গুডউইন ৮ বছর আগে অনিতা নামে জনৈক জাম্বিয়ান নারীকে বিয়ে করেন এবং গত বছর ডার্বিতে চলে যান এবং একজন অপারেশন্স ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। তিনি ফারলোভুক্ত হন এবং তখন থেকে এই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন যে, তিনি যুক্তরাজ্যে তার স্ত্রীকে স্হায়ী করার আর্থিক শর্ত পূরণে সক্ষম হবেন না।
তিনি বলেন, দুই সন্তান ও দু’জন বয়স্ক ব্যক্তিসহ দুটো গৃহস্হালীর ব্যয় নির্বাহ করা সব সময়ই কঠিন।তবে এখন সেটাকে পর্বত ডিঙ্গানোর মতো মনে হচ্ছে। আমরা অপরাধী নই, আমরা শুধু একটি পরিবারে একত্রে বসবাস করতে চাই।
গতমাসে করোনাভাইরাস মহামারির সময় ভিসার জন্য সর্বনিম্ন আয়ের আবশ্যকীয়তার শর্ত স্হগিত করা হবে কি-না, এ ব্যাপারে পার্লামেন্টে প্রদত্ত একটি লিখিত প্রশ্নের জবাবে অভিবাসন মন্ত্রী কেভিন ফস্টার বলেন, ১৮৬০০ পাউন্ডের আয়সীমা অর্জনের ‘অনেকগুলো উপায়’ আছে। তার পরামর্শ হচ্ছে, এক্ষেত্রে নগদ সঞ্চয়সহ দম্পত্তির বিনিয়োগের আয়, ভাড়া দেয়া সম্পত্তি কিংবা পেনশনও বিবেচ্য বিষয় হতে পারে। প্রচারকারী সংগঠন ‘রিইউনাইট ফ্যামিলিজ ইউ কে’ বলে এসব পরামর্শ উদ্ভট।
তিনি বলেন, সত্যি বলতে কি, এ যেনো গোলিয়েথের লড়াই। এরা ব্রিটিশ নাগরিকদের স্বামী বা স্ত্রী ও সন্তান। বলপূর্বক আলাদাকরণের আঘাত বিশেষভাবে একটি বৈশ্বিক মহামারিকালে অবিশ্বাস্যভাবে চ্যালেন্জিং এবং এর চেয়ে শোচনীয় বিষয় হচ্ছে, লকডাউনের পরে সেটা শেষ হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, লোকজন কাজ পেতে সক্ষম হবে না এবং যারা ইতোমধ্যে তাদের স্বামী কিংবা স্ত্রীর জন্য আবশ্যকীয়তা পূরণের চেষ্টায় পাগলপারা হয়ে কাজ করছে তারাও অনেকে শেষ পর্যন্ত সেই অর্থ আয়ে সক্ষম হচ্ছে না। এ অবস্হায় হোম অফিসের উচিত আয় আবশ্যকীয়তার পরিমাণ হ্রাস করার জন্য একটি ব্লান্কেট পিরিয়ড নিয়ে আসা কিংবা এগুলো সম্পূর্ণভাবে বাদ দেয়া।
১৯ টি ওভারসীজ ভিসা আবেদন কেন্দ্র চলতি সপ্তাহের শেষে খোলার কথা। যে সব এলাকায় স্হানীয় নিষেধাজ্ঞায় অনুমতি মিললে সে সব এলাকায় এসব খোলা হবে। কিন্তু যে সব দেশের সীমান্ত এবং ফ্লাইট বন্ধ থাকবে, সে সব দেশের স্বামী বা স্ত্রীর পক্ষে অদূর ভবিষ্যতে তাদের পুনর্মিলনের সম্ভবনা অনিশ্চিত।
অনেক দম্পত্তি জানান, তথ্যের ঘাটতি হতাশার একটি সুনির্দিষ্ট উৎস।অনেকের পাসপোর্ট ও কাগজপত্র বন্ধ হয়ে যাওয়া ভিসা আবেদন কেন্দ্রে পড়ে আছে, তারা তা পাচ্ছেন না।
হোম অফিসের জনৈক মুখপাত্র বলেন, মহামারিকালে তারা স্পৌজ অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রী ভিসা প্রক্রিয়াকরণে একটি সহানুভূতিশীল ও বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
তিনি আরো বলেন, সর্বনিম্ন আয়ের আবশ্যকীয়তাসহ পারিবারিক অভিবাসনের আবশ্যকীয়তার বিষয়টি বিবেচনাধীন এবং আমরা শীঘ্রই পরবর্তী নির্দেশনাবলী প্রকাশ করবো। বিদেশে কিছু ভিসা আবেদন কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লোকজনের পাসপোর্ট ফেরত দেয়া যায় এবং লোকজন তাদের ভিসার জন্য বায়োমেট্রিক তথ্য কিংবা সহায়ক ডকুমেন্টসমূহ সরবরাহ করতে পারে।