রাজনীতি সুন্দর না হলে কিছুই অর্জন সম্ভব হবে না : খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, রাজনীতি সুন্দর না হলে কোনো কিছুই অর্জন সম্ভব হবে না। রাজনীতি হতে হবে জনকল্যাণের, ঐক্যের। বিভেদ বা ঘৃণার নয়। অতীতমুখী ও স্লোগানের রাজনীতি বন্ধের সময় এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ব্যবসায়ী পরিষদ আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
বেগম জিয়া বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে এ সরকারের কাল্পনিক উন্নয়নের কথা শুনতে শুনতে দেশের মানুষের কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, একদলীয় শাসন দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
মহাজোট সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “গত পাঁচটি বছর ধরে উঁচুগলায় উন্নয়নের কাল্পনিক প্রচারণা শুনতে শুনতে সবার কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সবকিছু ডুবে যাচ্ছে সংকট ও অনিশ্চয়তার আবর্তে।”
নবগঠিত ব্যবসায়ী পরিষদকে এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্প তথা অর্থনৈতিক অঙ্গনের সমস্যা-সংকট-সম্ভাবনার একটা ছবি আমরা পেলাম। এটা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরাসরি জানতে পেরে খুব ভালো হলো। আমাদের জাতীয় অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে আপনাদের অর্থাৎ ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের ভূমিকা বিরাট। তাদের অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ। তাই সবার কথাই আমি মনযোগ দিয়ে শুনেছি। আগামীতে আল্লাহ্ যদি সুযোগ দেন তাহলে আমরা সেই কথাগুলোকে কাজে লাগাবার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্।”
তিনি বলেন, “এমন সময়ে এ সভা চলছে, যখন আমাদের জাতীয় জীবনে ঘনিয়ে এসেছে গভীর সংকট। সামনের দিনগুলো অনিশ্চয়তার এক গভীর অন্ধকারে ঢাকা। সামাজিক শান্তি, স্থিতি, জনগণের নিরাপত্তা ও জাতীয় ঐক্য আজ হুমকির মুখে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির বিকাশের জন্য এমন পরিস্থিতি কোনো শুভ ইঙ্গিত বয়ে আনে না। এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী আপনারা নন। দায়ী হচ্ছে হিংসাশ্রয়ী, সংকীর্ণ এক ভুল রাজনীতি। যে অপরাজনীতির শিকার হতে হচ্ছে সারা জাতিকে। এতে আমাদের বর্তমান হচ্ছে সংঘাতময় ও অস্থির। ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ছে সম্পূর্ণ অনিশ্চিত।
ব্যবসায়ীদের সমাবেশে এসে আমি রাজনীতির কথা কেন বলছি? বলছি একারণে যে, আধুনিক যুগে রাজনীতিই থাকে জাতীয় নেতৃত্বের আসনে। এ রাজনীতিই অর্থনীতিসহ সমাজের অন্য প্রায় সব অঙ্গন ও তৎপরতাকে স্পর্শ ও প্রভাবিত করে। এ রাজনীতি যদি ঠিক না হয় তাহলে কোনো কিছুই ঠিকমতো চলবে না। রাজনীতি সুন্দর না হলে আর কোনো কিছুর পথই মসৃণ থাকবে না। সেই জন্যই বলছি, আমাদের রাজনীতি হতে হবে সঠিক ও সুন্দর। রাজনীতি হতে হবে যুক্তিনির্ভর ও মেধাচর্চিত।
এই সমস্যা-সংকটের দেশে অতীতমুখী রাজনীতি কেবল আমাদের পেছন দিকেই ঠেলতে পারে। আমাদের রাজনীতি হতে হবে সমাঝোতার ও ঐক্যের, ঘৃণা-বিদ্বেষ-বিভাজনের নয়।”
খালেদা জিয়া বলেন, রাজনীতি হতে হবে মানুষকে ও দেশকে ভালোবাসার। রাজনীতি হবে দেশের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে। রাজনীতি হবে মানুষের সমস্যা ও সংকট নিরসনের জন্য। তাদের পথ করে দেয়ার জন্য। রাজনীতি হতে হবে ভবিষ্যতের লক্ষ্যাভিসারী। উন্নয়ন ও উৎপাদন হতে হবে রাজনীতির মূলমন্ত্র।
স্লোগান ও আবেগনির্ভর অতীতমুখী সস্তা রাজনীতির বিলাসিতা আমাদের সাজে না। আমাদের দেশে এখনো বহু মানুষকে ক্ষুধার্ত থাকতে হয়। তাদের পরনে শীতবস্ত্র থাকে না। শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকে। অনেকের বাসযোগ্য আবাসস্থল নেই। সুচিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয়। বিশুদ্ধ খাবার পানি পায় না সবাই। বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
আমাদের নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদী ভাঙ্গনে লাখ লাখ মানুষ নিরাশ্রয় ও ভূমিহীনে পরিণত হচ্ছে। আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশ নানা দিক থেকে আক্রান্ত। নগরে মহাসংকটাপন্ন যান চলাচল ব্যবস্থা আমাদের জাতীয় জীবনের সব তৎপরতার গতি মন্থর করে দিচ্ছে।
আমাদের কৃষি জমি কমে যাচ্ছে আবাসন প্রকল্পের অপরিকল্পিত বিস্তারে। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংকট আমরা কাটিয়ে উঠতে পারছি না। শিল্পায়ন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। লাখ লাখ বেকার তরুণের চোখে হতাশার কালোছায়া। মাদকের ভয়াবহ বিস্তারে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষা ব্যবস্থাকে এখনো আমরা মানসম্পন্ন ও কর্মমুখী করতে পারিনি। শান্তি-স্থিতি-নিরাপত্তা-সুবিচার এখনো সাধারণ নাগরিকের কাছে অলীক কল্পনা হয়ে আছে। এরকম হাজারো অভাব-অনটন ও সমস্যা-সংকটে জাতি হিসেবে জর্জরিত আমরা।
এসবের সমাধানই আমাদের রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। যদি তা না হয়, তাহলে প্রতিযোগিতাময় এই বিশ্বে আমাদের একটানা আরো পিছিয়ে পড়তে হবে। তাই আজ সময় এসেছে অতীতমুখী, আবেগাশ্রয়ী, স্লোগানসর্বস্ব ভুল রাজনীতিকে বর্জন করার।
সময় এসেছে হানাহানি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, ঘৃণা-বিদ্বেষের রাজনীতি পরিহার করার। সময় এসেছে রাজনীতির নামে কুৎসা, শঠতা, প্রবঞ্চনা, প্রতারণা, অসত্য প্রচারণা ও হিংসা-বিদ্বেষকে ‘না’ বলার। মানুষকে যারা সম্মান করতে জানে না তাদের মর্যাদার আসন থেকে নামিয়ে দেয়ার সময় এসেছে। ”
তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে আমরা আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনের চলার পথ হিসেবে বেছে নিয়েছি। সেই গণতন্ত্র আজ চোরাবালিতে হারিয়ে যেতে বসেছে। সবার মিলিত চেষ্টায় রুগ্ন গণতন্ত্রকে সারিয়ে তুলতে হবে। শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ উন্মুক্ত করতে হবে।
পছন্দের প্রতিনিধিকে বেছে নেয়ার যে অধিকার জনগণ অর্জন করেছে তা নিরঙ্কুশ রাখতে হবে। তাদের ভোট আজ বিপন্ন। জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে শাসনতন্ত্র কেটেছিঁড়ে কলঙ্কের নতুন অধ্যায় রচনা করা হয়েছে। এ কলঙ্ক মুছতে হবে। এর জন্য সবাইকে এক হতে হবে।
আমাদের সম্ভাবনার উজ্জ্বল দিগন্তে যে কালো মেঘ ছড়িয়েছে তা দূর করতে হবে। একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আজ সময়ের চাহিদা ও জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।
আসুন, সবাই মিলে সোচ্চার হই। ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করে মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করি। আজকের দিনে এটাই প্রধান জাতীয় কর্তব্য।”
বিএনপি চেয়ারপারসনে বলেন, “ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে অর্থনীতির যে চিত্র তুলে ধরেছেন, তাতে কোনো আশার আলো নেই। গত পাঁচটি বছর ধরে উঁচুগলায় উন্নয়নের কাল্পনিক প্রচারণা শুনতে শুনতে সবার কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সবকিছু ডুবে যাচ্ছে সংকট ও অনিশ্চয়তার আবর্তে। আপনারা ভুক্তভোগীরা আমার চেয়ে কম জানেন না। তাই আমি বেশি পরিসংখ্যান দেবো না। কয়েকটি মাত্র দৃষ্টান্ত তুলে ধরবো।”
তিনি বলেন, “প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। সাধারণ মানুষের দুর্গতি ও দুর্দশা বেড়েছে একই হারে। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণেও। অথচ সেই হারে মজুরি বাড়েনি। ফলে মানুষের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।”
দারিদ্র্য হ্রাসের গতিও ধীর হয়ে গেছে উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্য হ্রাসের হার ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। গরিব মানুষের শতকরা ৪৮ দশমিক ৯ থেকে শতকরা ৪০ জনে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। আর ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সালে হতদরিদ্র হ্রাসের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।”
তিনি বলেন, “কৃষক এখন ফসলের ন্যায্য দাম পায় না। তাদের শস্য উৎপাদনের অনেক খরচ বেড়ে গেছে। পণ্যের দাম বাড়লেও সে টাকা কৃষকের হাতে পৌঁছায় না। পরিবহনের খরচ বেড়েছে একদিকে, অন্যদিকে শাসক দলের লোকজন তাদের অঙ্গদল ছাত্রলীগ-যুবলীগ মিলে মধ্যস্বত্বভোগী চক্র গড়ে তুলেছে। এরা চাঁদাবাজি করছে। কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে মিলারদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছে। কৃষক ফতুর হয়ে যাচ্ছে।”
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “এখন প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণ দেয়ার এক অলিখিত প্রথা চালু করা হয়েছে। এই দলীয় লোকের ঋণের নামে ব্যাংক লোপাট করছে। সুদের হারও অনেক চড়া। ফলে বিনিয়োগ কমে গেছে। বিনিয়োগ কমেছে দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার ও অপশাসনের কারণেও। বাড়ছে বেকারত্ব। পদ্মা সেুত প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে দাতাদের তহবিল প্রত্যাহার এবং বিদেশের আদালতে মামলা হওয়ার কারণে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগে এখন তাই প্রায় শূন্যের কোটায়।”
ব্যবসায়ী সংগঠন দলীয়করণ করা হয়েছে অভিযোগ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের নীলনকশা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘবদ্ধ অপরাধী গোষ্ঠী এখন নিয়ন্ত্রণ করছে বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন।”
শিল্প-বাণিজ্য বিরোধী বিভিন্ন আইন ও বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, “দলীয় লোকদের অবাধে ব্যাংক বীমা কোম্পানির লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এরা হঠাৎ করে এত টাকা কোথায় পেলো? তার জবাব নেই। এতে ব্যাংক বীমা খাতে বিশৃঙ্খলা এবং বিদেশে টাকা পাচারের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।”
এ সরকারের আমালে চার বছর ধরে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিল। আমাদের সময়ে শিল্পে কম দামে বিদ্যুৎ দেয়ার জন্য ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টের অনুমোদন দেয়া হয়। এতে শিল্পে কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হয়েছিল।
কিন্তু বর্তমানে স্বচ্ছতাহীন কুইক রেন্টাল পদ্ধতির নামে জাতীয় অর্থনীতির ওপর বিরাট বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। সমস্যার মূল কারণ হলো সরকারি দলের লুটপাট ও দুর্নীতি।
ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা জানেন, দেশে আজ কতটা গণতান্ত্রিক ও সহিষ্ণু পরিবেশ বলবৎ আছে। আমরা বিরোধী দল হিসাবে কিভাবে নানান পন্থায় আক্রান্ত হয়েছি তা-ও আপনারা দেখছেন। এ আক্রমণাত্মক পরিবেশেও আমরা ধৈর্য, সংযম ও সহনশীলতা হারাইনি। আমরা দেশের স্বার্থে সংঘাত-হানাহানিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি। কারণ, আল্লাহর ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা এবং জনগণের প্রতি সম্পূর্ণ নির্ভরতা রয়েছে। দেশের মানুষ আজ তাদের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সাদা আর কালো, ভালো আর মন্দের তফাৎ পরিষ্কার বুঝতে পারছেন।
তিনি বলেন, আমাদের চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করেছি বাংলাদেশের এবং আমাদের জনগণের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কল্যাণ ও স্বার্থকে। আমরা নতুন ধারার রাজনীতি ও যুগের চাহিদার আলোকে নতুন ধারার সরকার গঠনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কেবল কথামালা নয়, কাজের মাধ্যমেই আমরা তার প্রমাণ দিতে চাই। মেধা ও যোগ্যতাকে আমরা সর্বোচ্চ মাপকাঠি বলে বিবেচনা করবো।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। দেশের মানুষ যেকোনো মূল্যে তা প্রতিহত করবে। এ জন্য তিনি দলের নেতাকর্মীদের একদলীয় নির্বাচন প্রতিহতের জন্য সর্বত্র সংগ্রাম কমিটি গঠনের আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় লোকেরা ঋণের নামে ব্যাংক লুটপাট করেছে। তাদের এ লুটপাটে বেশির ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকই দেউলিয়া হওয়ার পথে। দেশের গার্মেন্টস সেক্টর ধ্বংসে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সব অর্জন ধ্বংস করে দিয়ে বাংলাদেশকে রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশি অর্থনীতি বিদেশিদের কাছে জিম্মি করে রেখেছে। বাংলাদেশকে যারা ধ্বংস করতে চায় তাদের পরাজিত করতে হবে উল্লেখ করে মির্জা আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য নির্দলীয় সরকারের বিকল্প নেই। সবইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন করার আহ্বান জানান।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা বরকত উল্লাহ বুলু, বাংলাদেশ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক জালাল উদ্দিন, বাংলাদেশ এঙপোর্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি সালাম মোর্শেদী, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আব্দুল মোতালেব, বাংলাদেশে টেঙটাইল মিলস এসোসিয়েশনের সহসভাপতি আব্দুল মান্নান, ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি শফিউজ্জামান খান, রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোকাররম হোসেন খান, উত্তরবঙ্গ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুর রশিদ তাপস, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এসোসিয়েশনের লুৎফর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আফজাল হোসেন, ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আওলাদ হোসেন বাবর, বায়রার সহসভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, বিজিএমইএর সাবেক সভপাতি এসএম ফজলুল হক, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ, ব্যসায়িক নেতা শাহেদুর রহমান, সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সভাপতি জাকির হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, দেশে ক্রান্তিকাল চলছে। অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। মানুষ আজ উদ্বিগ্ন। প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ করা হয়েছে, দেশ চাঁদাবাজির কারখানা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের নেতৃত্বদানের দায়িত্ব নিতে হবে বিএনপিকে।
তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই, তরুণরা মুক্তি চায়, তরুণ উদ্যোক্তারা মুক্তি চায়।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরছে না। শিল্প-কারখানা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। শেয়ারবাজার লুটপাট করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে লুটপাটের আখড়া বানানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় আমরা ব্যবসায়ীরা চুপ থাকতে পারি না। নির্বাচন নিয়ে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার সমাধান চাই। দুই দলকে বসেই এর সমাধান করতে হবে।
বায়রার সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর মধপ্রাচ্যসহ মুসলিম দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানির ঐতিহাসিক সূচনা করেন। যার ধারাবাহিকতায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ খাতকে এগিয়ে নিয়ে যান। প্রবাসীদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে তিনি ২০০১ সালে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় নামে একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করেন। সে সময় বিদেশে ১ কোটি বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছিল।
এ খাত থেকে বাৎসরিক আয় হতো ১৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নামে। বর্তমানে এ খাতে ভয়াবহ সংকট চলছে। সরকার এ খাত থেকে ৭শ’ কোটি টাকা লুট করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বলছে জনশক্তি রপ্তানি খাতের ধারাবাহিকতা বজায় আছে। কিন্তু তাদের এ কথা শুভঙ্করের ফাঁকি। তাদের আমলে জনশক্তি রপ্তানি কমেছে ৬৮ শতাংশ। এ সরকার জনশক্তি রপ্তানির নামে ১৪শ’ জনের নাম নিবন্ধন করে বিদেশে পাঠিয়েছে মাত্র ৪৫৫ জনকে। বাদবাকি নিবন্ধনকারীদের টাকা সরকারের পেটোয়া বাহিনীর পকেটে গেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান কমেছে। এ খাত দুর্নীতিতে ভরে গেছে। তিনি খালেদা জিয়ার প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আপনি সরকার হটানোর ডাক দিন। জনশক্তি রপ্তানি খাত থেকে আমরা আপনার সঙ্গে আছি।
এছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গনি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এম ওসমান ফারুক, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আব্দুল্লাহ আল নোমান, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুক, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ীগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।