সাড়ে তিন হাজারের বেশি কর্মী চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত
বন্ধ হয়ে যেতে পারে ব্রিটেনের বৈদেশিক সহায়তা
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে চলমান ও ভবিষ্যৎ বহু উন্নয়ন কার্মসূচি হুমকি মুখে পড়তে পারে
সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগকে (ডিএফআইডি) পররাষ্ট্র বিভাগের (এফসিও) সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। একীভূতকরণের পর টেকসই উন্নয়নে বৈদেশিক সহায়তা সম্পর্কিত বিভাগটি কীভাবে পরিচালিত হবে সেটি এখনো অস্পষ্ট। সাড়ে তিন হাজারের বেশি কর্মী তাদের চাকরির নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত। এই পরিস্থিতিতে বিভাগটির অধীনে বিশ্বব্যাপী সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে চলমান ও ভবিষ্যৎ বহু উন্নয়ন কার্মসূচি হুমকি মুখে পড়তে পারে।
এদিকে ডিএফআইডিকে হঠাৎ করে একীভূত করার ঘোষণায় ডাউনিং স্ট্রিটেন বিরুদ্ধে বিভাগটির কর্মীদের ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। পররাষ্ট্র বিভাগের সঙ্গে এটিকে একীভূতকরণের জন্য মহামারী পরিস্থিতিকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অনেকে।
ব্রিটেনের এই দুই হোয়াইট হল বিভাগকে একীভূত করার পরিকল্পনা অবশ্য আকস্মিক নয়। বহুদিন ধরেই এ নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। কিন্তু কর্মচারী ইউনিয়নের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করে একীভূতকরণের ঘোষণার সময় এবং ধরন নিয়ে কর্মীরা আপত্তি তুলছেন। তারা এই খবর জানতে পেরেছেন সংবাদ মাধ্যমে তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর। এর আগে ঘুনাক্ষরেও কেউ কিছু জানতেন না।
ডিএফআইডির কর্মীরা এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলছেন, এই ঘোষণায় কর্মীরা বিধ্বস্ত, হতাশ, ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, বরিস জনসন তার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মহামারীর এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিকে বেছে নিয়েছেন। একটা স্বতন্ত্র বিভাগকে তিনি এক কোপে খতম করে দিলেন।
অনেক কর্মী বলছেন, এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক এবং সুবিধাবাদী। এটি কর্মীদের পায়ের নিচ থেকে কার্পেট টান দেয়ার সামিল। এখন অনেকেই তাদের চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
ডিএফআইডির সরকারি কর্মচারীদের প্রতিনিত্বকারী ইউনিয়নগুলো এরই মধ্যে পররাষ্ট্র বিভাগের কাছে চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক শলাপরামর্শ করার দাবি জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন হাউস অব কমন্সে দুই বিভাগের একত্রীকরণের ঘোষণা দেন গত মঙ্গলবার। এসময় তিনি ডিএফআইডির ১৫ বিলিয়ন পাউন্ড বাজেট অক্ষুণ্ণ রাখার প্রতিশ্রুতি দেন এবং এও বলেন যে, যুক্তরাজ্য সরকার সহায়তা কার্যক্রমের জন্য জিডিপির দশমিক ৭ শতাংশ ব্যয় অব্যাহত রাখবে।
তবে ডিএফআইডির বহু কর্মী এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই বিষয়টি বিবিসির রাজনীতি বিভাগের সম্পাদক লৌরা কুয়েনসবার্গের টুইটের মাধ্যমে জানতে পারেন।
ডিএফআইডি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ সালে। অবশ্য একই ধরনের কার্যক্রম ও ভাবাদর্শ আগের সরকারগুলোতেও ছিল। এ বিভাগের প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কর্মী লন্ডন ও ইস্ট কিলব্রাইডের কার্যালয় এবং বিশ্বজুড়ে কাজ করছেন।
এ বিভাগের মাধ্যমে মূলত টেকসই উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে বৈদেশিক সাহায্য সহায়তা দিয়ে থাকে ব্রিটিশ সরকার। ডিএফআইডির প্রধান হিসেবে থাকেন পররাষ্ট্র বিভাগের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী। ব্রিটেনের নাগরিকদের ট্যাক্সের টাকায় চলে এ বিভাগ।
ডিএফআইডির কাজের প্রধান ক্ষেত্র হলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সেবা, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, সরকার ও নাগরিক সমাজ, আর্থিক খাত (যেমন অবকাঠামো, উৎপাদন খাত ও উন্নয়ন পরিকল্পনা), পরিবেশ সুরক্ষা, গবেষণা এবং মানবিক সহায়তা।
এখন এ বিভাগটি আর আগের নামে থাকছে না। পররাষ্ট্র বিভাগের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পর নতুন নাম হতে পারে ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস। আগামী সেপ্টেম্বরেই নতুন বিভাগের যাত্রা শুরু হওয়ার কথা। যদিও এ উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করেছেন পূর্বের তিন জন প্রধানমন্ত্রী।