ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য ধরে রাখতে মরিয়া যুক্তরাজ্য

ব্রিটিশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বর্তমানে যেভাবে বাণিজ্য সম্পাদন করছে, তা চলতি বছরের শেষে একেবারে আমূল পাল্টে যাবে। গত ৩১ জানুয়ারি ইইউর সঙ্গে ৪৭ বছরের সম্পর্কের ইতি টানে যুক্তরাজ্য (ইউকে)। এরপর শুরু হয় ১১ মাসের ব্রেক্সিট-পরবর্তী রূপান্তরকাল, যা শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর। শর্ত অনুযায়ী যুক্তরাজ্য ইইউ ছাড়লেও রূপান্তরকালে তাদের মধ্যে বেক্সিট-পূর্ববর্তী বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন হবে না। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কোনো নতুন চুক্তি না হলে পরবর্তীতে ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে উভয় পক্ষকেই।

মূলত রূপান্তরকালের পর যুক্তরাজ্যের ওপর সরাসরি আর ইইউর আইন প্রয়োগ করা যাবে না। একই সঙ্গে উভয় পক্ষের মধ্যে পণ্য বাণিজ্যের জন্য প্রয়োজন হবে নতুন আইন। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্য চাইছে রূপান্তরের পরও ইইউর সঙ্গে আগের বাণিজ্য সম্পর্ক অব্যাহত থাকুক। গত সপ্তাহেই ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা দেয়, ইইউ থেকে ইউকেতে পণ্য প্রবেশের জন্য শিথিলকৃত নিয়ন্ত্রণ-নিয়ম ছয় মাসের জন্য জারি থাকবে। ইউকে ও ইইউ মুক্ত বাণিজ্য নিয়ে বছর শেষের আগে চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলেও এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না।
সরকার ঘোষিত এ সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে ডোভারের মতো বন্দর দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী পণ্যের জন্য। একই সঙ্গে শুধু গ্রেট ব্রিটেন ও ইইউর মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই এ নিয়ম মানা হবে, বাদ পড়বে উত্তর আয়ারল্যান্ড। কারণ উত্তর আয়ারল্যান্ড সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্যের জন্য একটি পৃথক চুক্তি রয়েছে।
সাধারণত যুক্তরাজ্যে ব্যবসায়ীদের আমদানি কার্যক্রমের জন্য শুল্ক বিভাগে পণ্যের বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হয়। কিন্তু সরকারের নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী আমদানির পর সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা যাবে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই তাদের আমদানীকৃত পণ্যের একটি তালিকা তৈরি করে রাখবেন এবং পরবর্তীতে এ-সংক্রান্ত শুল্ক পরিশোধ করবেন। ব্রিটিশ সরকার বলছে, মূলত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করার জন্যই এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এ প্রক্রিয়া সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাধারণত উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ পণ্যের আমদানিতে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করা হয়। কারণ এসব পণ্যের মাধ্যমে বৃহত্তর স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তবে রূপান্তরকালের ঠিক পর পরই যুক্তরাজ্য বন্দর দিয়ে উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ পণ্যের আমদানিতে এ কড়াকড়ি আরোপ করবে না। কেবল উচ্চঝুঁকি রয়েছে এমন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেই আগে থেকে জানিয়ে রাখতে হবে। পরবর্তীতে এপ্রিল থেকে মাংসসহ প্রাণিজ ও সব উদ্ভিজ্জ পণ্যের জন্য এ নিয়ম জারি থাকবে। মূলত ইইউ থেকে আমদানীকৃত পণ্যকে এই প্রথম এ ধরনের চেকিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জেরে মুখোমুখি হবে পুরো সরবরাহ ব্যবস্থা।
দ্য ফুড অ্যান্ড ড্রিংক ফেডারেশনের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের প্রধান ডমিনিক গাউডি বলেন, পোলট্রি, মাছ ও পশুখাদ্যের মতো স্পর্শকাতর পণ্যের ক্ষেত্রে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এজেন্টরা লরি খুলে দেখবেন। একই সঙ্গে তারা পণ্যগুলোর পরীক্ষাও করবেন। এতে পণ্য খালাসের জন্য বেশ সময় লাগবে, যা সরবরাহ শৃঙ্খলের সময়ানুবর্তিতাকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।
অন্যদিকে ইইউতে উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ পণ্যকে বর্ডার কন্ট্রোল পোস্টের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। যুক্তরাজ্যও পণ্য আমদানির জন্য একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে চাইছে। এ লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে বেশ সময় লাগবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচনের পাশাপাশি পরিকল্পনা অনুমোদনেরও প্রয়োজন রয়েছে। তাছাড়া প্রয়োজন হবে আরো প্রায় ৫০ হাজার কাস্টমস এজেন্ট। পর্যাপ্ত কাস্টমস এজেন্ট ছাড়া পুরো প্রক্রিয়ায় শ্লথগতি দেখা দেবে বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেইট অ্যাসোসিয়েশনের মহাপরিচালক রবার্ট কিন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button