গর্ভবতী নারী ও অক্ষম আশ্রয় প্রার্থী
লকডাউনে হোটেলে অবস্থানরত কয়েকশ’ আশ্রয় প্রার্থী মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত
গত মার্চ থেকে যুক্তরাজ্যে অরক্ষিত আশ্রয়প্রার্থীদের (এসাইলাম সেকার) প্রায় এক ডজন হোটেলে রাখা হয়েছে, যেখানে তাদেরকে নির্দিষ্ট কিছু খাবার দেয়া হলেও টয়লেট্রিজে ও শিশু দুগ্ধের মতো আবশ্যকীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে না। গর্ভবতী নারী, অক্ষম লোক ও ছোট্ট ছেলেমেয়েসহ কয়েকশ’ লোক দেশটির হোটেলগুলোতে গত কয়েকমাস যাবৎ বসবাস করছেন। এখানে চলাফেলা কিংবা মৌলিক চাহিদা পূরণে কোন আর্থিক সহায়তাও দেয়া হচ্ছে না।
আশ্রয় দাবির সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষমান লোকজনকে মার্চের শেষে ডজনখানেক হোটেলে স্থান শুরু করা হয়। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আশ্রয় উচ্ছেদ সাময়িক স্থগিতের পর সিস্টেমের ব্যাকলগের কথা ভেবে অতিরিক্ত স্থান সংকুলানের ব্যবস্থা করার জন্য এসাইলাম হাউজিং কন্ট্রাক্টরদের নির্দেশ প্রদান করে হোম অফিস।
দাতব্য সংস্থাসমূহ দেশব্যাপী কন্ট্রাক্টরদের সংগৃহীত ৩৩টি হোটেলে বিদ্যমান মানসিক স্বাস্হ্য ও কল্যাণমূলক সুযোগ সুবিধার অবনতির ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে। হোটেলের অবস্থানকালে আশ্রয়প্রার্থীরা তাদের জন্য দৈনিক বাবদ ৫.৩৯ পাউন্ড থেকে বঞ্চিত হন এই চুক্তিতে যে তাদেরকে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে তারা টয়লেট্রিজ ও বেশী মিল্কের মতো অতিরিক্ত সামগ্রী ক্রয়ে ব্যর্থ হচ্ছেন।এমনকি তারা সরকারী পরিবহন ব্যবহারেও ব্যর্থ হচ্ছেন।
গত বুধবার হোম অফিস স্বীকার করে যে, গত ৩ মাস যাবৎ আর্থিক সহায়তাহীন লোকজনের সমস্যা হতে পারে। সেকেন্ড পারমান্যান্ট সেক্রেটারী এমপিদের বলেন যে, ইমিগ্রেশন মিনিস্টার বিষয়টি দেখছেন। তিনজন ঠিকাদারের সকলেই, মেয়ার্স, সার্কো ও ক্লিয়ারস্প্রিংসগণ আশ্রয় সহায়তা কর্তনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
কভেন্ট্রির একটি হোটেলে বসবাসকারী হুইল চেয়ারে থাকা জনৈক আশ্রয় প্রার্থী বলেন, তিনি কদাচিৎ প্রাঙ্গনের বাইরে যেতে সক্ষম হন। ট্যাক্সিতে চড়ার মতো অর্থ তার নেই। গত মার্চ থেকে হোটেলে বসবাসকারী এই চল্লিশোর্ধ ব্যক্তি বলেন, তিনি এখনে নিজেকে ‘খাঁচার জন্তু’র মতো অনুভব করছেন।
মিডল্যান্ডস-এর হোটেলে থাকা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত অপর একজন আশ্রয় প্রার্থী বলেন, আমাকে বলা হয়েছিলো হোটেলটি একটি প্রাথমিক থাকার জায়গা এবং এখানে বড়ো জোর ৬ সপ্তাহ রাখা হবে। শুরুতে ভালোই ছিলো। আমিও তা মানিয়ে নিয়েছিলাম কিন্তু সপ্তাহ যায়, মাস যায়। এটা মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে।
হোম অফিসের জনৈক মুখপাত্র বলেন, একটি হেলপ্ লাইন রয়েছে, যাতে মানসিক স্বাস্থ্য কিংবা অন্যান্য বিষয়ে পরামর্শের জন্য কল করা যাবে। প্রত্যেক হোটেলে একজন ওয়েলফেয়ার অফিসার রয়েছেন। আশ্রয় প্রার্থীরা চাইলে এনএইচএস-এর সেবা ও পেতে পারেন।
রিফিউজি এট অ্যাকশন-এর হেড অব এসাইলাম টিম লায়র হিল্টন বলেন, দাতব্য সংস্থাটির জানা মতে বর্তমানে হোটেলসমূহে অনেক গর্ভবতী নারী রয়েছেন। এছাড়া একজন প্রসুতি আছেন, যিনি তার সদস্যজাত সন্তানের জন্য ফর্মূলা কিংবা টয়লেট্রিজ কিনতে পারছেন না অর্থের অভাবে।
রিফিউজি কাউন্সিল-এর এডভোকেন্সী প্রধান এন্ডি হিউয়েট বলেন, আমরা স্বীকার করছি যে,হোম অফিসকে সময়ের প্রয়োজনে অস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে ব্যবহারের জন্য হোটেল নিতে হয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এসব হোটেলে লোকজনের অবস্থানের সময়সীমা এবং তারা যে পর্যায়ের সহায়তা পেতে সক্ষম হচ্ছে ,তা নিয়ে।
তিনি বলেন, হোটেল অবস্থানের সময়সীমা দীর্ঘ হলে, লোকজনের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও নির্ভরতার বিষয়টি বৃদ্ধি পাবে। এসব আশ্রয় প্রার্থী লোকজন বাইরে যেতে এবং মৌলিক চাহিদা সামগ্রী ক্রয়ে সক্ষম হচ্ছে না। এবং আমাদের মতো এনজিওগুলোর পক্ষে ঐসব লোকের মেটানো অত্যন্ত কঠিন, কারণ কোন জায়গায় তাদের অবস্থান আমরা সবসময় সে ব্যাপারে নজর দিতে পারছি না। এটা একটি বড়ো সুযোগ সুবিধা হারানোর বিষয়।
হোম অফিসের মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাজ্যের অন্য সকল জনগনের মতো আশ্রয়প্রার্থীদেরও করোনাভাইরাস বিস্তার প্রতিরোধে ঘরের অভ্যন্তরে থাকতে বলা হয়েছে, এর ফলে বাসস্থানের চাহিদা বেড়েছে। যেহেতু ট্যাক্সপেয়াররা অর্থ পরিশোধে অর্থ পরিশোধ করছেন, তাই এখানে ব্যক্তির কোন ব্যয় নেই।