পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন দুই বিজ্ঞানী
‘ঈশ্বর-কণা’ নামে পরিচিত রহস্যময় হিগস বোসন কণার অস্তিত্ব নিশ্চিত হয় গত বছর। সেই কণা গতকাল মঙ্গলবার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার এনে দিল দুই বিজ্ঞানীকে। অবশ্য যে বিজ্ঞানীরা একে আবিষ্কার করেছেন, তাঁদের ঝুলিতে যায়নি পদার্থবিজ্ঞানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি এই পুরস্কার। যাঁরা এই কণার অস্তিত্ব সম্পর্কে তত্ত্ব দিয়েছিলেন, পুরস্কার পেলেন তাঁরাই।
আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগের কথা। বেলজিয়ামের ফ্রাঁসোয়া ইংলার্ত ও যুক্তরাজ্যের পিটার হিগস প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অনুমান করেছিলেন, একটি কণার অস্তিত্বের কথা। হিগস বোসন সম্পর্কে তাঁদের তত্ত্বগুলো ব্যাখ্যা করে দেখাল, পৃথিবীর সব পদার্থের ভরের উৎস কোথায়। বিশ্বের সব বস্তুর প্রকৃতি সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পেতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করল তত্ত্বটি।
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে সুইডেনের রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস। অ্যাকাডেমি এক টুইটার বার্তায় বলেছে, যে তত্ত্বকে এই পুরস্কার দেওয়া হলো, তা কণা-সংক্রান্ত পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেলের একটা কেন্দ্রীয় অংশ। আমাদের এই পৃথিবী কীভাবে নির্মিত, তা বর্ণনা করে এই মডেল।
প্রথা অনুসারে, অ্যাকাডেমি পুরস্কার ঘোষণা করার সময় বিজয়ী দুই বিজ্ঞানীকে ফোন করে। তবে যাঁর নামে এই কণার নামকরণ, সেই হিগসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়নি তারা। বিজ্ঞানী ইংলার্তের সঙ্গে কথোপকথনটা ছিল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও আনন্দময়। তিনি এ সময় বলেন, ‘অবশ্যই খুবই ভালো লাগছে আমার। সত্যিই আমি খুশি।’
বিজ্ঞানী হিগস ও ইংলার্তসহ একদল কণাতত্ত্ববিদ ১৯৬০ সালে অতিপারমাণবিক কণার (সাব অ্যাটোমিক পার্টিকল) ভরের উৎস খুঁজতে গিয়ে একটি মডেল প্রস্তাব করেন। ওই মডেলে একটি অনুপস্থিত কণার কথা বলা হয়, যার নাম দেওয়া হয় হিগস বোসন। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী পিটার হিগস এবং এ নিয়ে কাজ করা বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন বসুর নামের অংশবিশেষ নিয়ে এই নামকরণ করা হয়। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান অনুসারে, আমাদের এই মহাবিশ্বের সবকিছুই ভর পেয়েছে এই হিগস বোসন কণার কাছ থেকে। তাই এই কণার সন্ধান পাওয়া মানে এক হিসেবে মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্য উন্মোচন করা। সে কারণে এটি পরিচিতি পেয়ে যায় ঈশ্বর-কণা নামে।
ষাটের দশক থেকেই হিগস বোসন কণার অস্তিত্ব আবিষ্কারে বিস্তর গবেষণা চালাতে থাকেন পদার্থবিদেরা। এই গবেষণায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ বা সার্নের বিজ্ঞানীরা।
অবশেষে ২০১২ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভার কাছে অবস্থিত মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য উন্মোচনে স্থাপিত সুবিশাল যন্ত্র লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয় ওই কণার অস্তিত্ব। বলা হয়, বিজ্ঞান গবেষণায় গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক অর্জন ছিল এটি।
তবে সুইডিশ রয়্যাল অ্যাকাডেমি প্রায়ই যিনি আবিষ্কার করেন, তাঁর চেয়ে যিনি ওই আবিষ্কারের তত্ত্ব দেন, তাঁকেই নোবেল পুরস্কার দেওয়ার জন্য বেছে নেয়। এ ক্ষেত্রেও সেই নীতিই গ্রহণ করল তারা। পদার্থে এবারের নোবেলজয়ী হিগস ও ইংলার্ত দুজনের বয়সই এখন আশির কোঠায়। দুজনই অধ্যাপক ইমেরিটাস—হিগস স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার আর ইংলার্ত ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলসের। সিএনএন, এএফপি ও বিবিসি।