বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের নির্দেশ
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের নির্দেশ জারি করেছে দেশটির অভিবাসন ও কাস্টমস বিভাগ (আইসিই)। গতকাল সোমবার (৬ জুলাই) এই নির্দেশ জারি করা হয়।নির্দেশনায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র’র প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতি চালু করায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের আর ক্যাম্পাসে থাকা প্রয়োজন নেই।
এদিকে এ সিদ্ধান্তকে একেবারেই অমানবিক, অবিবেচনাপ্রসূত এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থী হিসেবে মন্তব্য করেছেন আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. গোলাম মাতবর।
অনলাইনে কোর্স চালুর বিরূপ প্রভাব পড়বে যুক্তরাষ্ট্রে আসা হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর ওপর। যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি, বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম, কিংবা নন-একাডেমিক কাজে অথবা কারিগরী শিক্ষার জন্য এসেছিলেন তাদের যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসছে না। নিউইয়র্কসহ অন্যান্য কয়েকটি রাজ্যে করোনার প্রকোপ কমলেও বাড়তে শুরু করেছে প্রায় ৩০টি রাজ্যে। সে কারণে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে রেকর্ড সংখ্যক। করোনার এমন পরিস্থিতিতে নিয়মিত ক্লাসে ফিরছে না যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সে কারণে তারা বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে অনলাইনে কোর্স চালু করার পরিকল্পনা করছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সবগুলো কোর্স অনলাইনে চলবে। এমনকি যেসব ছাত্রছাত্রী ক্যাম্পাসে বসবাস করেন তাদের জন্যও। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের দেশে ফিরে যেতে হতে পারে।
এ বিষয়ে অভিবাসন ও কাস্টম বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের কোর্স অনলাইনে চলবে কিংবা যারা অনলাইনের কোর্সের জন্য ভর্তি হয়েছেন তাদের ভিসা দিবে না যু্ক্তরাষ্ট্র। অন্যান্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতিও দিবে না।
নিউ জার্সির মনমাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ড. গোলাম মাতবর ৬ জুলাই বলেন, আমরা ভেবেছিলাম, সেপ্টেম্বরে শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে যারা আসার কথা তাদেরকে আপাতত: আসতে মানা করা হবে। তবে যারা ইতিমধ্যেই কয়েক বছর কাটিয়েছেন ক্যাম্পাসে থেকেই তাদেরকে অবস্থানের সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু যে ধরনের নির্দেশ জারি করা হলো, সেটি কারোর জন্যেই সুখকর হবে না। ভবিষ্যতে মেধাবিরা আর যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চাইবেন না।
ড. মাতবর উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের ৭৮০০ ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন আন্তর্জাতিক স্টুডেন্ট হিসেবে। তাদেরকে চলে যেতে হবে কোর্স অপূর্ণ রেখেই। ভারত, চীন, জাপান, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের ১২ লাখের মত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অধিকাংশ দেশেরই সময়ের ব্যবধান অনেক বেশি। তাই অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণ করতে সকলকেই কঠিন একটি পরিস্থিতির ধকল সইতে হবে। যেমন, বিকেল ৩ টার ক্লাসের জন্যে বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ছাত্র-ছাত্রীকে মধ্যরাত থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সন্ধ্যার ক্লাসের জন্যে ভোর বেলার ঘুম হারাম করতে হবে। এছাড়া, অনেক দেশেই ইন্টারনেট তেমন মানসম্পন্ন নয়। বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ না থাকলে সবকিছুই পণ্ড হয়ে যাবে। এজন্যে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে অনলাইনে ক্লাস করতে পারলে সবার জন্যেই তা মঙ্গলের হবে বলে মনে করেন ড. মাতবর।