মিথ্যা নিউজ শেয়ার দেওয়াও পাপ
মুফতি আতিকুর রহমান: মিথ্যা বলা যেমন পাপ ঠিক তেমনি তা প্রচার করাও একটি মারাত্মক অন্যায়। কুরআন- হাদীসে আসংখ্য বার এই গর্হিত কাজ থেকে মুমিনগণকে নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও মিথ্যা বলা বা প্রচার করা প্রমাণ করে, সে আর প্রকৃত মুমিন নয়। ফাসিক। সমাজে যত ধরনের অন্যায়, অবিচার, পাপাচার ও বিশৃঙ্খলা ঘটে, তার বেশিরভাগই এই মিথ্যার ফলে ঘটে। আর পরকালেও কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে এই মিথ্যা কথা বলার কারণেই। তাই ইসলামে এ জাতীয় গুনাহর কাজকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা মিথ্যাবাদীদের সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপীর জন্য।’ (সূরা জাসিয়া)।
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি তন্মধ্যে একটা হলো মিথ্যা বলা (বুখারি ও মুসলিম)। একসময় একটা নিউজ পেপার পড়ার জন্য কত কিছু করতে হতো। আজকাল ইন্টারনেটের সুবাদে আমাদের সামাজিক যোগাযোগের বড় মাধ্যম ফেসবুক যেমন আমাদের যোগাযোগকে সহজ করেছে, তেমনি ভুয়া সংবাদের অন্যতম উৎস হয়েছে এটি। এখানে সবাই এক একজন ‘সাংবাদিক’,আর টিভি চ্যানেলের মালিক।
লাইক, কমেন্ট, শেয়ার পেতে যেমন ধর্মীয় আবেগপূর্ণ ভিত্তিহীন ভূয়া পোস্ট করেন, তেমনি ব্যক্তিগত আক্রোশ বা স্বার্থ চরিতার্থের জন্য নিছক ফটোশপের কারসাজির মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ছড়ানো হয়।আক্কেল তখন গুড়ুম হয়, যখন দেখি একজন গ্রহনযোগ্য ব্যক্তি তাতে লাইক, শেয়ার করে মিথ্যার কাজে সহযোগিতা করেন।তার গ্রহনযোগ্যতা আর কি বাকি থাকলো?
মিথ্যা সংবাদ পোস্ট করা যেমন গুনাহের কাজ, তেমনি তা শেয়ার করে সহযোগিতা করাও গুনাহের কাজ। একজন মুসলমানের জন্য কারও কোনো খবর যাচাই-বাছাই না করে বিশ্বাস ও প্রচারের কোনো সুযোগ নেই। কোনো পোস্টে লাইক-কমেন্ট করার আগে জেনে নিতে হবে সংবাদটির উৎস কি? পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনগণ! কোনো পাপাচারী ব্যক্তি যদি তোমাদের কাছে কোনো খবর নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে দেখবে। যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’ (সূরা আহজাব)।
যাচাই না করে কোনো সংবাদ বলে বেড়ানো বা শেয়ার করে প্রচার করা মিথ্যার শামিল। নবীজি সা. বলেন, কোনো ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যাই শুনবে (সত্যতা যাচাই না করে) তাই বর্ণনা করবে।’(সহিহ মুসলিম)।
তাই নিছক লাইক পাওয়ার আশায় কারো পোস্টে লাইক করা অবশ্যই প্রশ্নবৃদ্ধ করে আপনার ব্যক্তিত্বকে। লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায় তখন, যখন দেখি লাইকনেশায় কেউ ফোনে লাইক ভিক্ষা করতে ।
মিথ্যা পোস্ট করা এবং তা শেয়ার করে ছড়ানো যেমন কবিরা গুনাহ, তেমনি কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে বিপদে ফেলতে বা তার সম্মানহানি করতে তার নামে ভুয়া আইডি খুলে সে আইডি থেকে পোস্ট করা আরও মারাত্মক অন্যায়। কাউকে বিপদে ফেলার জন্য এহেন কাজ করার পর সে নিরপরাধ ব্যক্তিটি হয়রানির শিকার হোক বা না হোক, তার জীবন ও ক্যারিয়ার নষ্ট হোক বা না হোক, ষড়যন্ত্রকারী ব্যক্তিটি কিন্তু নিশ্চিতভাবে ক্ষতির মুখোমুখি হবেন। ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার দুনিয়া ও আখেরাত।
আল্লাহ আমাদের এসব গুনাহের কাজ থেকে হেফাজত করুন, আমীন।