ব্রিটেনের ডকুমেন্টবিহীন অভিবাসীরা আতংকে
রোসা যুক্তরাজ্যে তার ১০ বছরের বসবাসকালীন সময়ে বেশ কিছু কেয়ারিং অর্থ্যাৎ সেবাযত্নকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেছে। কিন্তু লকডাউন তাকে চাকুরীচ্যুত করেছে। সে বিগত বছরগুলোতে কখনো কোন ডাক্তারের কাছে যায়নি। একজন জিপি সার্জারী চিকিৎসকের কাছে যাওয়া তার কাছে ভীতিকর।
ফিলিপাইনের নাগরিক রোসা বলেন, আমার একজন জিপি আছেন। কিন্তু আমি ভীত। আমি ভীত এজন্য যে, তারা আমার স্ট্যাটাসের প্রমান দেখানোর জন্য বলবেন। যদিও এটা খুব সিরয়াস কিছু নয়, তবু আমি যাইনি। আমি যাবো না। আমি আসলেই ভীত, আসলেই শংকিত। গত মার্চ মাসে রোসাকে তার চাকুরীদাতা চাকুরীচ্যুত করে। সে তাকে বলে দেয়, তোমার আর আসার প্রয়োজন নেই, তুমি ভাইরাস সংক্রমন ঘটাতে পারো।
রোসা বলে, আমাকে আমার অসুস্থ মা ও সন্তানদের ভরন-পোষন করতে হয়। অথচ আমার কোন আয় নেই। রোসা হচ্ছে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত কয়েক হাজার ডকুমেন্টবিহীন ফিলিপিনোর একজন। এদের অধিকাংশই কর্মরত এবং বেশীরভাগই গৃহস্থালী ও কেয়ার ওয়ার্কারের কাজে নিয়োজিত।
ফিলিপাইনের অভিবাসীদের সহায়তাকারী দাতব্য সংস্থা বলেছে, কমপক্ষে ৪ জন ডকুমেন্টবিহীন ফিলিপিনো সন্দেহজনক করোনা ভাইরাস থেকে মারা গেছে। কারন তারা স্বাস্থ্য সেবা গ্রহনে অত্যন্ত ভীত ছিলো। এদের একজন হচ্ছে এলভিস। সে ২ সপ্তাহ যাবৎ জ্বর ও কাশিতে ভুগছিলো। এলভিস গত ৪ এপ্রিল মারা যায়। অপর একজন অভিবাসী ক্রিস্টিনা (৬৮)। সে ফিলিপাইন থেকে এসেছে ২০০৪ সালে। তিনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আওতায় একজন সিনিয়র কেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ৩বছরের চুক্তিতে কাজ করছিলেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগই ক্রিস্টিনা ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তার আবেদন এই যুক্তিতে প্রত্যাখ্যান করা হয় যে, তিনি তার স্বাস্থ্যের এনভিকিউ এর লেভেল থ্রি পূরণ করেননি। ক্রিস্টিনা বলেন, তিনি শুধু এটা সমাপ্ত করার ক্ষেত্রে মাত্র এক ইউনিট দূরে ছিলেন। এভাবে তিন সন্তানের মা বিধবা ক্রিস্টিনা তার ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসের অভাবে এখন চাকুরীচ্যুত। তিনি আরো বলেন, নিয়োগকর্তারা কাগজপত্র চাইছে, এখন আমি কী করবো? আমি সামান্য অর্থ পাই। আমি ডকুমেন্টহীন, তাই অভিযোগ করতে পারি না ।
দিওয়াতা ১২ বছর আগে ফিলিপাইন থেকে যুক্তরাজ্যে আসেন একজন শিক্ষার্থী হিসেবে। ডকুমেন্টবিহীন হওয়ায় তার মনে উদ্বেগ ক্রমশ: বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি জানান, যুক্তরাজ্যে তিনি এখন নিজেকে ‘কারাবন্দী’র অনুভব করছেন। ৬৭ বছর বয়সী এই হিজড়া নারী বলেন, ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়া সত্বেও তিনি ব্রিটেনে বসবাস করছেন, কারণ তিনি জানেন যে, তার বয়স ও লিঙ্গ পরিচয় তার নিজদেশে জীবিকা অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। দিওয়াতা আরো বলেন, একটি ব্রিটিশ সংস্থা হেলথ এন্ড সোশ্যাল কেয়ারে ডিগ্রী লাভের পর তাকে চাকুরী দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর তিনি দেশ ছাড়েন। কিন্তু এটা কখনোই ফলপ্রসূ হয়নি। এর পরিবির্তে, পড়াশোনা শেষে এখন তিনি ডকুমেন্টবিহীন হয়ে পড়েছেন। তিনি বাধ্য হয়েছিলেন আন্ডাগ্রাউন্ডের একটি দোকানে ক্যাশ-ইন-হ্যান্ডে এবং নাইট ক্লাবে চাকুরী করতে, যা তাকে শোষনের ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।
তিনি বলেন, মজুরীর ক্ষেত্রে আমি শোষিত হয়েছি। দোকান মালিকেরাও আমার সাথে ভালো আচরণ করেনি। কী করবো। শেষ পর্যন্ত ধরে নিয়েছিলাম, কোন কিছু না পাওয়ার চেয়ে এইটাই ভালো। আমি ভাড়া ও খাবারের মূল্য পরিশোধে আমার সকল সঞ্চয় ব্যয় করে ফেলেছি। আমার ঘরের মালিককে ভাড়া দিতে হবে। তাই আমি ভীষণ উৎকন্ঠার মধ্যে আছি। আমি গৃহহীন হয়ে পড়তে পারি। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আমার চাকুরীদাতা বলেছেন যে, আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু আমি কীভাবে অপেক্ষা করবো তা ভাবতে পারছিনা।