তুরস্ক-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের কাছাকাছি পৌঁছেছে
যুক্তরাজ্য হচ্ছে জার্মানীর পরেই তুরস্কের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার
তুরস্ক ও যুক্তরাজ্য বেক্সিট-উত্তর যুগের জন্য একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের অত্যন্ত কাছাকাছি পৌঁছেছে। তথ্যটি জানিয়েছেন তুর্কী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত ক্যাভুসগলু বলেন, দুই দেশের মধ্যে পণ্য সামগ্রী, কৃষি ও সেবা সংক্রান্ত একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা খুব ভালোভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং আমরা এটা চূড়ান্তকরণের কাছাকাছি রয়েছি। ক্যাভুসগলু গত বুধবার লন্ডন সফর করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাবের সাথে আলোচনা অনুষ্ঠানের জন্য।
ক্যাভুসগলু আরো বলেন, কেউ যদি আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের দিকে তাকান তবে দেখতে পাবেন, এর শতকরা ৯৫ ভাগই শিল্পজাত পণ্য এবং শতকরা ৫ ভাগ কৃষি ও সেবা।আমরা চুক্তির বিষয়ে সম্মত হয়েছি।
যুক্তরাজ্য হচ্ছে জার্মানীর পরেই তুরস্কের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার, যার সাথে তার বাণিজ্যের পরিমাণ ১৮.৮ বিলিয়ন পাউন্ড এবং তার আড়াই হাজারেরও বেশী কোম্পানী তুরস্কে পরিচালিত হচ্ছে। যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিপি, শেল, ভোদাফোন, ইউনিলিভার, বিএই সিস্টেমস্, এইচএসবিসি, আভিভা ও দিয়েগিয়ো।
তুরস্ক ও যুক্তরাজ্য বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে আসছে যা ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ব্রিটেনের ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার পর গতি লাভ করে এবং যুক্তরাজ্য যখন বেরিয়ে আসার সময়সীমার পর কিছু তৃতীয় বিশ্বের দেশের সাথে বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষ্যরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, যে বেরিয়ে আসার সময়সীমা এ বছরের শেষ সীমা পেরিয়ে বর্ধিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
জানা গেছে, তুরস্ক হচ্ছে ইইউ ইউনিয়ন কাস্টমস-এর একটি দেশ, যার মানে হচ্ছে, যুক্তরাজ্যের সাথে একটি চুক্তি হতে পারে তখনই যখন ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্লক বা জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য একটি চুক্তি লাভ করে। যুক্তরাজ্য ও তুর্কীর মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে। আলোচনার সর্বশেষ রাউন্ড এ সপ্তাহে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়।
আরো জানা গেছে, যদি দুই পক্ষ বছরের শেষে চুক্তি করতে অক্ষম হয় তবে আংকারা ব্রিটেনের সাথে চুক্তি এগিয়ে নেবে ও ইইউ বিধিমালার লংঘনের ঝুঁকি নেবে কি-না, এ নিয়ে গোলক ধাঁধাঁয় পড়তে হবে। জনাব ক্যাভুসগলু একথা স্বীকার করেন সেটা একটি ‘বিদঘুটে পরিস্থিতি’হতে পারে! যুক্তরাজ্য তুরস্কের একটি কৌশলগত মিত্র।
ক্যাভুসগলু বলেন, আমরা যুক্তরাজ্যের সাথে এই মর্মে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি যে, ব্রেক্সিট উত্তর যুগে আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা বৃদ্ধি করবো,আমরা এর লক্ষ্য মাত্রা ঠিক করেছি ২০ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড-এর কর্মকর্তারা বলেন, আলোচনা ‘ভালোই এগোচ্ছে’এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড মিনিস্টার রানিল জয়বর্ধন আগামী সপ্তাহে তাদের তু্র্কী প্রতিপক্ষের সাথে আলোচনায় বসবে।
তিনি আরো বলেন, আংকারা একটি আলাদা অভিবাসন চুক্তি সম্পাদনের প্রত্যাশা করছে, যা তুর্কীকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করবে,যখন যুক্তরাজ্য নতুন অভিবাসন আইন বাস্তবায়ন করবে।
ক্যাভুসগলু বলেন, আমরা দু’টি আলাদা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আলোচনা করছি, এর একটি হচ্ছে, এফটিএ (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট), অপরটি আংকারা চুক্তির ন্যায়, যা ব্রিটেনের ইইউ-তে যোগ দেয়ার আগে তুর্কী ব্যবসায়ীদের জন্য একটি ভিসা স্কীম সংক্রান্ত।
গত বুধবার রাব ও জনসনের সাথে বৈঠককালে ক্যাভুসগলু মহামারি উত্তর সম্পর্ক, একটি দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতা, স্বাস্হ্য পর্যটন, প্রতিরক্ষা শিল্প এবং লিবিয়া, সিরিয়া ও ন্যাটোসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
তিনি আরো বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির পাশাপাশি তারা কোন সম্ভাব্য ব্রেক্সিট্রের সংকটে তুর্কী নাগরিকদের জন্য সৃষ্ট বিপত্তি প্রতিরোধে আংকারা চুক্তির ভবিষ্যতের দিকটিও দেখবে।