শেষ হলো ঐতিহাসিক হেরা গুহার সংস্কার
মসজিদে হারাম থেকে দুই মাইল দূরে অবস্থিত হেরা গুহা। গুহাটি দৈর্ঘ্যে ১২ ফুট ও প্রস্থে ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। যেখানে শেষ নবি মুহাম্মদ রাসুল সা. নবুওয়তের আগে ধ্যানমগ্ন ছিলেন এবং নবুওয়তপ্রাপ্ত হন। যেখানে অহি নিয়ে হজরত জিবরাইল (আ.) প্রথম আগমন করেন। সেই ঐতিহাসিক হেরা গুহার সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। হেরা গুহার আসল নাম জাবালে নূর। তবে বিশ্ববাসী এই পাহাড়কে গারে হেরা বা হেরা গুহা নামেই বেশি চেনে বা জানে।
করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন থাকায় হেরা গুহার সংস্কারের জন্য এপ্রিলের মাঝামাঝিতে মক্কা প্রদেশের শাসক যুবরাজ খালেদ আল ফয়সাল অনুমোদন দেন। সউদীর রাজকীয় কমিশন ও মক্কা প্রদেশের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে ও মক্কার ভারপ্রাপ্ত আমির যুবরাজ বদর বিন সুলতানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সংস্কার কাজ শেষ হয়।
বিগত বছরগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজের অভাবে হেরা গুহার ব্যাপক সৌন্দর্যহানি হয়। দর্শনার্থীদের মাত্রাতিরিক্ত চলাচল ও ফেলে আসা বিভিন্ন জিনিসের কারণে মূল অবয়বও অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কারের পরিকল্পনা থাকলেও স্বাভাবিক সময়ে হেরা গুহায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হাজিদের ভীড়ের কারণে তা সম্ভব হয়নি। এবার লকডাউনের সময় সেই সংস্কার করা হলো।
সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে সিঁড়ি সম্প্রসারণ ও রাস্তা বড় করা হয়েছে। গুহার আশেপাশে থাকা অবাঞ্চিত পাথর সরিয়ে ফেলাসহ, বিভিন্ন পাথরের গায়ের লেখা মুছে ফেলা হয়েছে। গুহার পাশে হাজিদের ফেলে আসা নানা জিনিসপত্র, পুঁতে রাখা তাবিজ-কবজ ও অস্থায়ীভাবে নির্মিত অবকাঠামোগুলো অপসারণ করা হয়েছে।
এখন আর হেরা গুহায় কোনো লেখা বা অঙ্কন নেই। এতদিন অনেকে বিভিন্ন মান্নত পূরণের জন্য পাথরে কালি দিয়ে বিভিন্ন কিছু লিখে আসতো।
হেরা গুহায় উঠতে শক্তিশালী ও সামর্থ্যবান মানুষদের প্রায় ১ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। উচ্চতা ২ হাজার ১০০ ফুট। যে হেরা গুহায় পবিত্র কোরআন নাজিল হয় সেটি পর্বতের ৮৯০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এর দৈর্ঘ্য ১২ ফুট ও প্রস্থ ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি।
হেরা গুহা পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় না হলেও সেখানে যেতে হলে পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠতে হয়। সেখানে ওঠা ছাড়া হেরা গুহায় যাওয়ার কোনো বিকল্প পথ নেই। পাহাড়ের চূড়া থেকে বিপরীত দিকে একটু নিচে অবস্থিত হেরা গুহায় যাওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ভয়ঙ্কর এমন পথ পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের হেরা গুহায় পৌঁছতে বেশ কয়েকবার বিশ্রাম নিতে হয়।
পাহাড়ের ওপর থেকে মসজিদে হারামের মিনার দেখা যায়। পাহাড়ের বড় বড় পাথরের ছোট ছোট ফাঁক দিয়ে লোকজন গুহার ভেতরে প্রবেশ করেন। গুহার প্রবেশপথ ছাড়া সবদিক পাথরবেষ্টিত। মেঝেতে রয়েছে পাথর খণ্ড, যাকে জায়নামাজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
হেরা গুহার পাশাপাশি গারে সাওরেও সংস্কার কাজ চলছে। হিজরতের সময় মক্কার কোরাইশ গোষ্ঠীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নবী করিম (সা.) হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-কে নিয়ে সাওর গুহায় আত্মগোপন করেছিলেন। আল্লাহতায়ালার প্রতি নবী করিম (সা.)-এর অবিচল বিশ্বাস এবং হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর অসীম ধৈর্য ও প্রেমের অনন্য সাক্ষী এই পাহাড় ও গুহা।