ব্রেক্সিটে শেষ মুহূর্তে বোঝাপড়ার আশা
ব্রেক্সিট পুরোপুরি কার্যকর হবার পরেও ইউরোপের সাথে বাণিজ্য চুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বরিস জনসনের সরকার। তবে চুক্তি হওয়ার কোন আশা দেখছে না ইইউ। অক্টোবরের মধ্যে বোঝাপড়া না হলে চুক্তি কার্যকর করা সম্ভব হবে না। ব্রেক্সিটসংক্রান্ত প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপই একেবারে শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রেও তেমনটাই হবে বলে আশা করছে বরিস জনসনের সরকার। অথচ চলতি সপ্তাহের আলোচনার শেষে ইইউ-র প্রধান মধ্যস্থতাকারী মিশেল বার্নিয়ে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে, বর্তমানে এমন বোঝাপড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, পুলিশ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সহযোগিতার প্রশ্নে অগ্রগতি হলেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঐকমত্যের কোনো সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
অথচ ২০২১ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে পণ্য ও পরিষেবার ক্ষেত্রে সীমান্তে শুল্ক ও অন্যান্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়াতে ব্রিটেন ও ইইউ-র মধ্যে আলোচনার গতি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দুই পক্ষের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু বার্নিয়ে বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেন যে, ইইউ গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্রের চেষ্টা করলেও ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্যের প্রশ্নে নিজস্ব অবস্থানে অটল রয়েছে।
বিশেষ করে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বা প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে দুই পক্ষের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য ন্যায্য সুযোগ=সুবিধা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ব্রিটেন অত্যন্ত অনমনীয় অবস্থান আঁকড়ে ধরে রয়েছে। ব্রিটেনের জলসীমার মধ্যে ইইউ জেলেদের মাছ ধরার অধিকারের প্রশ্নেও বরিস জনসনের সরকার নিজস্ব অবস্থান থেকে নড়তে প্রস্তুত নয়।
মিশেল বার্নিয়ে এমন নেতিবাচক পরিস্থিতি তুলে ধরলেও ব্রিটেনের মধ্যস্খতাকারী ডেভিড ফ্রস্ট এখনো হাল ছাড়তে প্রস্তুত নন। তার মতে, বেশ কিছু মৌলিক প্রশ্নে মতপার্থক্য সত্ত্বেও একেবারে শেষ মুহূর্ত – অর্থাৎ, সেপ্টেম্বর মাসে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তির সম্ভাবনা অবশ্যই রয়েছে। তাই ততদিন পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হবে, বলেন ফ্রস্ট। তিনি ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার উপর জোর দিয়ে বলেন, ইইউ কিছুতেই এই বাস্তব মেনে নিতে চাইছে না।
ব্রিটেনের শিল্প-বাণিজ্য মহল প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উপর ইইউ-র সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। ইইউ-র সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের প্রশ্নে ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের ঐক্যে চিড় ধরার আশঙ্কাও দেখা যাচ্ছে। তার উপর করোনা সংকটের ফলে বিপর্যস্ত অর্থনীতির সমস্যা তো রয়েছেই। এই অবস্থায় ২০২১ সাল থেকে ইইউ-র সঙ্গে বাণিজ্যের পথে বাধা সৃষ্টি হলে ব্রিটেন বাড়তি চাপের মুখে পড়বে, এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জুলাই মাসে গ্রীষ্মকালীন বিরতির কারণে আপাতত দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বন্ধ থাকবে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে শেষ পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবার কথা। সেই আলোচনায় ব্রিটেন কোনো সামগ্রিক বোঝাপড়ার বদলে বিচ্ছিন্ন কিছু চুক্তির আশা করছে। বার্নিয়ে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, অক্টোবর মাসের মধ্যে বোঝাপড়া সম্ভব না হলে ঠিক সময়ে সেটি কার্যকর করা সম্ভব হবে না। ১৫ ও ১৬ই অক্টোবর ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা সেই বোঝাপড়া মেনে নিলে সেটি অনুোমদনের জন্য ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পাঠাতে হবে।