ব্রিটিশ আপীল আদালতের ঐতিহাসিক রায়

‘ব্রিটিশ পুলিশের ডিজিটাল চেহারা শনাক্তকরণ বেআইনীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে’

ব্রিটেনের আপীল আদালত এক ঐতিহাসিক রায়ে ফেসিয়েল রিকগনিশন অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে চেহারা শনাক্তকরণকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। রায়ে বলা হয়েছে, জনৈক ব্রিটিশ পুলিশ ফোর্স কর্তৃক বেআইনীভাবে ‘ফেসিয়াল রিকগনিশন’ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে এবং এতে মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে। বিচারকেরা ব্রিটেনের কার্ডিফে এই বিতর্কিত প্রযুক্তির দুটি ব্যবহার বিবেচনা করেন। তবে রায়টি যুক্তরাজ্যের অন্যান্য স্থানে এর ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রচারণাকারীরা বলেন, আদালতের রায়ের ফলে ‘হুমকি সৃষ্টিকারী’ ‘চেহারা শনাক্তকরণ’নিষিদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। তবে জাতীয় পুলিশ নেতৃবৃন্দ বলেন, এটা এর ব্যবহার প্রতিরোধ করবে না। জনৈক ওয়াচডগ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই বলে অভিযুক্ত করেন যে, আপীল আদালত পুলিশ কর্তৃক কীভাবে ক্ষমতা ব্যবহৃত হবে এর সীমা যথাযথভাবে নির্ধারণে বিদ্যমান নীতিমালা যে ব্যর্থ, এ ব্যাপারে তিনি নিদ্রামগ্ন।
তিনজন সিনিয়র জজ বলেন যে, সাউথ ওয়েলস পুলিশ ইউরোপিয়ান কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটস (ইসিএইচআর) -এর আওতাধীন ‘গোপনীয়তার অধিকার’ লংঘন করেছে একই সাথে ডাটা সুরক্ষা আইনসমূহ এবং বর্ণগত কিংবা লিঙ্গগত বৈষম্য সংক্রান্ত উদ্বেগ নিরসনে দায়িত্বের বিষয়টিও লংঘন করেছে।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক আদেশে বলা হয়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর এবং ২০১৮ সালের মার্চের দু’টি ঘটনাসহ অন্যান্য ঘটনায় আইনানুগ পন্থা অনুসৃত হয়নি। গত সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টের বিচারকেরা এই আইনী চ্যালেন্জ খারিজ করে দেন। তবে আপীল আদালত ক্যাম্পেইনার এড ব্রিজেস কর্তৃক দায়েরকৃত ৫টির মধ্যে ৩টি যুক্তিতে আপীল মন্জুর করেন।
মাস্টার অব দ্য রুলস-এর স্যার টেরেন্স ইথারটন, কুইন’স বেঞ্চ ডিভিশনের প্রেসিডেন্ট ড্যাম্প ভিক্টোরিয়া শার্প এবং লর্ড জাস্টিস সিং এই মর্মে সর্বসম্মতভাবে রাজী হন যে, ওয়াচলিস্টের স্ক্যানকৃত চেহারা ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুলিশকে ‘অতিমাত্রায় ব্যতিক্রমী ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে। তারা বলেন, এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ডাটা প্রোটেকশন অ্যাসেসমেন্ট নেই, যা ২০১৮ সালের ডাটা প্রোটেকশন আইনে আবশ্যক। বৈষম্যের বিরুদ্ধে সুরক্ষার লক্ষ্যে ‘পাবলিক সেক্টর ইক্যুয়েলিটি ডিউটি’ও এক্ষেত্রে লংঘিত হয়েছে।
বিচারকগণ সকল পুলিশ সদস্যকে ভবিষ্যতে ‘নভেল’ এবং বিতর্কিত ব্যবহারে যৌক্তিক সব কিছু করা এবং যাতে বর্ণগত কিংবা লিঙ্গগত পক্ষপাতিত্ব না থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য আহবান জানান। মিঃ ব্রিজেস বলেন, কার্ডিফে একটি প্রতিবাদ সভায় এবং ক্রিসমাসের কেনাকাটার সময় তার চেহারা স্ক্যান করায় ‘অনধিকার পর্যবেক্ষণ যন্ত্রে’র দ্বারা তার মানবাধিকার লংঘিত হয়।
প্রথম মোতায়েনে ২টি গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে এবং দ্বিতীয়টিতে একই ঘটনায় বোমা হামলার হুমকি দেয়ায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয় গত বছর। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত সাউথ ওয়েলস পুলিশ কর্তৃক ৫ লাখ লোককে স্ক্যান করা হতে পারে।
এই আইনী লড়াইয়ের জন্য মিঃ ব্রিজেস ৯ হাজার পাউন্ডের বেশী তহবিল সংগ্রহ করেন, যাকে হাইকোর্ট বিশ্বের কোন আদালত এই প্রথম স্বয়ংক্রিয় চেহারা শনাক্তকরণের বিষয়টি বিবেচনা করা হয় বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সাউথ ওয়েলস পুলিশ লোকজনের অনুমতি ব্যাতিরেকে হাজারো লোকের বিরুদ্ধে এই ‘হুমকি সৃষ্টিকারী ‘ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button