ব্রিটেনে অর্থনৈতিক মন্দা: আত্মবিশ্বাস সৃষ্টিই উত্তরণের প্রধান উপায়
যুক্তরাজ্যকে অন্যান্য জি-৭ ধনী দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশী খারাপ মন্দাবস্থা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সম্প্রতি এক নতুন উপাত্তে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। অথচ গত জুন মাসে যুক্তরাজ্যের কলকারখানা, নির্মাণ খাত ও হাইস্ট্রিট-এ শ্রমিক কর্মীরা ফিরে যাওয়ায় একটি স্পষ্ট অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন, একটি শোচনীয় অবস্থা থেকে নিজেকে টেনে তুলার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। তবে এখন এ অবস্থা কেনো?
দেখা গেছে যুক্তরাজ্যের ভোক্তা সেবার ওপর আস্থা, যাতে প্রায়ই মুখোমুখি যোগাযোগের প্রয়োজন হয়, এটা একটি ফ্যাক্টর যা প্রত্যাশিত সংক্রমণের চেয়েও গভীরতর প্রভাব রাখে। তবে এটাও যথেষ্ট ব্যাখ্যা নয় এই মন্দার ক্ষেত্রে। বোর্ডব্যাপী, সার্ভিসসমূহে, নির্মাণ ও উৎপাদন খাতগুলোতে গভীর পতন লক্ষ্য করা গেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের আরেকটি জবাব রয়েছে মোট দেশজ উৎপাদনে। যুক্তরাজ্যে অনেক বিলম্বে লকডাউন করা হয় এবং ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকার অতিশয় ভীত ছিলো। এর ফলে অন্যান্যের চেয়ে বিস্তৃতভাবে ঘটে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ। আর এ জন্য প্রয়োজন হয় দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন।
অর্থনীতিবিদদের অভিমত হচ্ছে, ব্রিটেনের গভীরতম অর্থনৈতিক পতনের আংশিক কারণ হচ্ছে দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জোর করে দীর্ঘসময় বন্ধ করে রাখা।
মার্চের প্রথমভাগে অন্যান্য দেশের মতো কঠোর অথচ প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নে ব্যর্থ হয় ব্রিটেন। সত্যি বলতে কি, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ফিলিপ স্কোফিল্ড ও হলি উইলোবির সাথে টিভিতে সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন। তখন ভাইরাস দেশটির থুতনিতে এসে পৌঁছে গেছে।
লোকজনের মাঝে সংক্রমণ ঘটছে দ্রুত। তবে ঐ সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি কঠিন ছিলো। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশী মৃত্যুহারের একটি নিয়ে এবং বর্তমানে গভীরতম অর্থনৈতিক মন্দা হেঁয়ালীতে ফেলেছে দেশটিকে। আসলে যতক্ষণ না জনস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে ততক্ষণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে না।
বৈপরীত্বক্রমে, চীন একটি মন্দাও পরিহারে সক্ষম হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংকট যখন জনগণ তেমন জানতে পারেনি, তখন তারা সম্ভবত: বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর লকডাউন আরোপ করেছিলো। তাই এখন তাদের অর্থনীতি আবার বিকশিত হতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্যের কী করণীয়?
সরকারের মধ্যে যারা আছেন, তারা অনেকে আশা করেন যে, পূর্বতন ভুল পদক্ষেপ ও বিলম্ব মুছে ফেলে অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হবে ব্রিটেন। কিন্তু অর্থনীতির পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত। লোকজনের মাঝে ভয় তারা বেরোলে ভাইরাসে মরবে, শ্রমিকদের উদ্বেগ তারা কাজ পাবে না, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্বিগ্ন যে তারা গ্রাহক পাবে না, তাই তারা ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে বা নতুন স্টাফ যোগাড় করতে রাজী নয়। এখন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট লোকজনের মাঝে আত্মবিশ্বাস ফিরেয়ে আনা। কিন্তু মন্ত্রীরা মনে করেন, তারা তাদের বোতল হারাতে যাচ্ছেন।