অস্থায়ী ভিসা থাকায় মিলছে না সরকারি সহায়তা
চরম দারিদ্র্যে দিন কাটছে যুক্তরাজ্যের লাখো অভিবাসীর
লকডাউন জারি হওয়ার পর কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনানুষ্ঠানিক ও স্বল্প মজুরিতে কর্মরত যুক্তরাজ্যের লাখ লাখ অভিবাসী। করোনা ও লকডাউন বন্ধ করে দিয়েছে তাদের আয়ের সব পথ। অন্যদিকে এ অবস্থার মধ্যেও নো রিকোর্স টু পাবলিক ফান্ডস (এনআরপিএফ) নামে এক বিতর্কিত অভিবাসন নীতির কারণে দেশের অন্য কর্মীদের মতো তারা কোনো সরকারি সুবিধা বা সহায়তাও পাচ্ছেন না। ফলে বর্তমানে চরম দারিদ্র্যে তাদের দিন কাটছে অসহায় অবস্থায়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য মাইগ্রেশন অবজারভেটরির হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে আসা ১৪ লাখ অভিবাসী রয়েছে, যাদের ভিসা এনআরপিএফ নিয়মের আওতাভুক্ত। নিয়ম অনুযায়ী এসব অভিবাসী সরকারি কোনো তহবিল থেকে সহায়তা পাবে না। ফলে বাধ্য হয়ে বহু অভিবাসী সহায়তার জন্য এখন দাতব্য সংস্থাগুলোর দ্বারস্থ হচ্ছে।
দ্য জয়েন্ট কাউন্সিল ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অব ইমিগ্রান্টস (জেসিডব্লিউআই) বলছে, সংস্থাটির ৫৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো পরামর্শমূলক সেবার বাইরে সহায়তা হিসেবে অভিবাসীদের নগদ অর্থ, খাদ্য ও পোশাক দিতে হচ্ছে। জেসিডব্লিউআইয়ের প্রধান নির্বাহী সত্বীর সিং বলেন, মহামারীকালে লোকজন আগে যে কাজ করত, তা আর করতে পারছে না। যদি তাদের কাজ অনানুষ্ঠানিক কিংবা অপ্রাতিষ্ঠানিক হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই তারা চাকরি ধরে রাখা কিংবা স্বনির্ভর ব্যক্তিদের জন্য যেসব সহায়তা প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোর সুবিধা পাবে না। ফলে আমরা দেখছি, দিন দিন গৃহহীন, ভীষণ ক্ষুধার্ত ও সাধারণ চিকিৎসাসেবা গ্রহণে অক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছেই।
আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসী জেরেমিয়াহর (ছদ্মনাম) যুক্তরাজ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতে বসবাস ও কাজ করার অনুমতি রয়েছে। তিনি দেশটিতে ১৬ বছর ধরে বসবাসের পাশাপাশি লন্ডন ও আশেপাশে নতুন বাড়ি নির্মাণে সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে তার কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকেই তিনি তার স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। লকডাউনের শুরুতেই এনআরপিএফের কারণে তিনি কোনো সরকারি সুবিধা দাবি করতে পারেননি। এমনকি যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করলেও চাইল্ড বেনিফিটের আওতায় আসেনি তার তিন সন্তান। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে তিনি সরকারকে কর পরিশোধ করে আসছেন।
জেরেমিয়াহ জানান, এ বছরের মার্চ থেকে তিনি কোনো কাজ করতে পারেননি। এ অবস্থায় তাকে ও তার স্ত্রীকে প্রতিদিন একবেলা না খেয়ে থাকতে হয়েছে, যাতে তাদের সন্তানরা পর্যাপ্ত খাবার পায়। দুশ্চিন্তায় রাতের পর রাত তারা নির্ঘুম কাটিয়েছেন। তবে আশার কথা হলো, শেষ পর্যন্ত এনআরপিএফ তুলে নিতে তার আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। অবশেষে সরকারের আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। কিন্তু এর আগে চার মাস তার পরিবারকে যে কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তা তিনি ভুলতে পারছেন না।
মূলত জেরেমিয়াহর মতো লাখো অভিবাসী আবেদন করলেও পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে বেশ সময় লাগছে। এর মধ্যে ভুক্তভোগীদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে চরম দারিদ্র্যের। এ অবস্থায় বিভিন্ন দাতব্য ও স্থানীয় সরকার সংস্থা এবং দ্য ওয়ার্ক অ্যান্ড পেনশন কমিটি সরকারকে করোনা সংকটকালে এনআরপিএফ পুরোপুরি তুলে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ওয়ার্ক অ্যান্ড পেনশন কমিটির চেয়ারম্যান এমপি স্টিফেন টিমস বলেন, আমাদের এখন যেটা প্রয়োজন তা হলো, এ সংকটকালে নো রিকোর্স টু পাবলিক ফান্ডস স্থগিত করা। যাতে কঠোর পরিশ্রমী ও আইন মান্যকারী পরিবারগুলো সর্বজনীন ঋণের আবেদন করতে পারে।
সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, এ সংকটকালে কেউ যাতে নিজেকে রিক্ত কিংবা অসহায় মনে না করে, সেজন্য আমরা সচেষ্ট। এরই মধ্যে এনআরপিএফের আওতাধীনদের সহায়তায় বিস্তৃত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ৩২০ কোটি ও দাতব্য সংস্থাগুলোকে ৭৫ কোটি পাউন্ড বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক শরণার্থীদের সহায়তা প্রদানকারী দাতব্য সংস্থা খালসা বলছে, এ আর্থিক সহায়তা শেষ পর্যন্ত সব সমাজের নিচের তলার মানুষের কাছে এসে পৌঁছাচ্ছে না।