নানা টানাপোড়েন: ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে তুরস্ক

তুরস্কের ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার ও ইইউ বিষয়ক পরিচালক ফারুক কেইমাকস বলেছেন, তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চলেছে। তবে আংকারা ব্লকটির সাথে সম্পর্ক রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি আরো বলেন, ইইউ থেকে বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা বলছে, তুরস্ক ইইউ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, সরে যাচ্ছে ইউ’র মূল্যবোধসমূহ থেকে। আমি মনে করি, মূল সমস্যাটি হচ্ছে তুরস্ক ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এটা কিছু সদস্য দেশের সংকীর্ণমনা জাতীয় নীতিমালা দেখার ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ককে সহায়তা করে না, যেমনটি ইইউ’র অবস্থান। তা সত্বেও আমরা ইইউ’র সাথে আমাদের সম্পর্ক অব্যাহত রাখবো দৃঢ়ভাবে আমাদের স্বার্থরক্ষার রক্ষার্থে।

কেইমাকসি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, তুরস্কের ইইউ’তে প্রবেশে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিলো এবং তুরস্ক সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে। গুলেনিস্ট টেরর গ্রুপ (ফেটো)-এর ১৫ জুলাইয়ের ক্যু প্রচেষ্টার পর তুরস্ক কর্তৃক গৃহীত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্বাসের একটি মারাত্মক সংকট সৃষ্টির বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার দরুন আমরা কাস্টমস ইউনিয়ন আপডেট সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করতে পারিনি। যদিও এবিষয়ে আমরা জার্মানীর পিরিয়ডিক প্রেসিডেন্সীর সময় ইতিবাচক ও ত্যাৎপর্যপূর্ণ সিগনাল পেয়েছিলাম, কিন্তু পূর্ব ভূ-মধ্যসাগরীয় এলাকায় জটিলতার বিস্তৃতি ঘটায় আমরা অধিক অগ্রসর হতে পারিনি।
ভিসা বহির্ভূতের বিষয়ে কেইমাকসি বলেন, তুরস্ক ৭২ ইইউ শর্তাবলীর ৬৬টি পূরণ করেছে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারির কারণে অগ্রগতি লাভ করা যায়নি, যখন আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও ভিসা প্রক্রিয়া বিশেষভাবে সীমিত ছিলো।
ডেপুটি মিনিস্টার আরো বলেন, আমাদের জন্য বাকী ৬টি শর্ত পূরণ গুরুত্বপূর্ণ এবং এরপর আমরা ব্লকটির পদক্ষেপের জন্য অপক্ষো করবো।
পূর্ণ সদস্যপদের জন্য ইইউ’র তিনটি শর্ত বিদ্যমান। এগুলো হচ্ছে, সকল ইইউ স্ট্যান্ডার্ড ও বিধিমালার প্রতিপালন, ইইউ প্রতিষ্ঠানসমূহ ও সদস্য দেশগুলোর অনুমতি লাভ এবং জাতীয় পার্লামেন্ট কিংবা গণভোটের মাধ্যমে প্রার্থী দেশসমূহের নাগরিকদের অনুমতি লাভ। সদস্যপদের জন্য শর্তাবলীর মধ্যে আরো রয়েছে ডেমোক্রেটিক এন্ড স্ট্যাবল ইনস্টিটিউশন, আইনের শাসন, একটি ভালো কার্যকর বাজার অর্থনীতি এবং সদস্যপদের জন্য আবশ্যকীয়তা পূরনের ক্ষমতা।
মন্ত্রী বলন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে ব্লকটির সাথে কোন সন্তোষজনক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি।
তিনি বলেন, যদিও সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ইইউ-এর সাথে আমরা সহযোগিতা করেছি কিন্তু পিকেকে এবং ফেটো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে সন্তোষজনক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। অভিবাসনের বিষয়টি তুরস্ক ইইউ সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের মার্চে, ইইউ এবং তুরস্ক ঈজিয়ান সাগর দিয়ে অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং তুরস্কে অবস্থানরত ৩০ লাখ সিরীয় শরণার্থীর অবস্থার উন্নতি করা হয়। চুক্তিটি শরণার্থীর স্রোত থামাতে সফল হয়েছে। কিন্তু তুরস্ক থেকে শরণার্থী গ্রহণে ইইউ’র অনীহা এবং শরণার্থীদের জন্য প্রতিশ্রুত অর্থ স্থানান্তরে আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা তুরস্কের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি করে।
গত মার্চে ১০ হাজার শরণার্থী, অভিবাসী ও আশ্রয় প্রার্থী গ্রীসের সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করে যখন তুর্কী কর্তৃপক্ষ এই মর্মে ঘোষনা করে যে, তারা আর শরণার্থী ও অভিবাসদের ইউরোপে পৌঁছতে বাধা দেবে না।
ইদলিবের যুদ্ধবিরতি অঞ্চলে সিরিয়ার সরকারী বাহিনীর হামলায় ৩৪জন তুর্কী সৈন্য নিহত হওয়ার পর তুরস্ক এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষনা করে। নতুন করে হামলার ঘটনাবলী তুরস্কে আরেক দফা শরণার্থীর ঢল নামার আশংকা সৃষ্টি করে। তুরস্কে ইতোমধ্যে ৩০ লাখ সিরীয় শরণার্থী অবস্থান করছে এবং তুরস্ক জানিয়েছে, তারা আর কোন শরণার্থী গ্রহণ করবে না।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button