মার্সি বেগুমার ‘মার্সিহীন’ মৃত্যু হোম অফিসের ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত
অনেকে ভাবতে পারেন বিশ্বের ৬ষ্ট বিত্তশালী দেশ হিসেবে ব্রিটেনে ক্ষুধা ও অপুষ্টি এখন অতীতের বিষয়। কিন্তু সম্প্রতি ব্রিটেনের গ্লাসগোর একটি ফ্লাটে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জনৈক অভিবাসন প্রত্যাশীর অসহায় মৃত্যুর ঘটনা অনেকের এমন ধারনা পাল্টে দিয়েছে। চলতি সপ্তাহে উক্ত ফ্লাটে অভিবাসন প্রত্যাশী উগান্ডার নাগরিক মার্সি বেগুমার মৃতদেহ পাওয়া যায়। তার মরদেহের পাশে কাঁদছিলো তার অপুষ্টির শিকার শিশু। শিশুটির কান্নার আওয়াজ শুনে লোকজন উক্ত নারীর মৃতদেহ দেখতে পান।
জানা গেছে, স্বল্প সময়ের জন্য প্রদত্ত অভিবাসন স্ট্যাটাসের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর বেগুমা চাকুরী হারান। এ অবস্থায় খাবারের জন্য তিনি বন্ধুবান্ধব ও দাতব্য সংস্থাগুলোর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। দুঃখজনকভাবে, এধরনের চিত্র আমার কর্মক্ষেত্রসহ যুক্তরাজ্য ব্যাপী সচরাচর পরিদৃষ্ট।
এই অবর্ণনীয় ও অপিরাহারযোগ্য ট্রাজেডি এমন অমানবিকতার ইংগিত প্রদান করে, যা আমাদের অভিবাসন পদ্ধতির মধ্যে নিহিত। সহজ কথায়, এধরনের মৃত্যু আমাদের সামগ্রিক সত্তায় একটি ক্ষতিচিহ্ন রেখে যায়। যখন বিলিয়ানরগণ ও বড়ো কর্পোরেশনসমূহ রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা করছে, তখন এটা লজ্জাজনক যে, আমাদের লোকজন ক্ষুধায় মৃত্যুবরণ করছে।
করোনাভাইরাস মহামারি যুক্তরাজ্য জুড়ে অনেক ব্যক্তি ও কমিউনিটির জন্য ব্যাপক দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। দু’দিক দিয়েই আমাদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপঃ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় করোনায় মৃত্যু হার যেমন বেশী, তেমনি মন্দাও ভয়াবহ, যা অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় দ্বিগুন। যখন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কর্মচারীদের জন্য সরকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে, তখন অনেক অরক্ষিত লোকজন সংকট মোকাবেলায় এই সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যুক্তরাজ্যের হাজারো বাসিন্দার কোন বৈধ কাগজপত্র নেই, তাই তারা কোন সরকারী সহায়তাও পাচ্ছে না (এনআরপিএফ)। এই সংকটকালে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।
হোম অফিসের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এনআরপিএফ অর্থাৎ ‘নো রিকোর্স টু পাবলিক ফান্ড’-এর আওতাধীন অসহায়দের তহবিলের জন্য আবেদনকারী অভিবাসীর সংখ্যা করোনাভাইরাস সংকটকালীন সময়ে শতকরা ৫৭২ ভাগ বৃদ্ধি পায়। এর অর্থ হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার অভিবাসী মারাত্মক দারিদ্র্য এড়াতে সক্ষম হবে কি-না, তা শোনার অপেক্ষায়। এদের মধ্যে সীমিত সংখ্যক অভিবাসী রয়েছেন, যারা অভিবাসীদের জন্য প্রদত্ত ‘বৈরী পরিবেশে’র দরুন অসহায়ত্ব তহবিলের নেতিবাচক বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন, অনেকে এটা জানেন না যে, তারা আদৌ কোন রাষ্ট্রীয় সহায়তা পাওয়ার যোগ্য কি-না। পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায় যে, এসব জীবন-মৃত্যুর প্রশ্নজড়িত আবেদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে হোম অফিসের গড়ে ৩০দিন লেগে যায়। এটাও দুঃখজনক যে, এনআরপিএফ সম্পৃক্ত যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের সংখ্যার ব্যাপারে হোম অফিসের কোন রেকর্ড বা তালিকা নেই।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, এসব রাষ্ট্রীয় সহায়তাবঞ্চিত বাসিন্দা ফারলো এবং আত্মকর্মসংস্থান স্কীমের সুযোগ-সুবিধা পেতে ব্যর্থ, যদিও তারা সব সময় যোগাযোগ রাখছেন। এসব স্কীম ঐসব লোকজনকেও কোন সহায়তা প্রদান করছে না, যাদের চুক্তি শেষ হয়ে গেছে কিংবা কর্মঘন্টা হ্রাস পেয়েছে।
কথা হচ্ছে, মহামারি এসে চোখে আঙ্গুল দিয়ে এটা দেখিয়ে দিয়েছে যে, লোকজন যারা আমাদের সমাজকে জীবন্ত রেখেছে তারা বিলিয়নার কিংবা অতি বিত্তবান শ্রেণী নয়, বরং নার্স, সেবাদানকারী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, চেক আউট অ্যাটেন্ডেন্ট এবং অধিকতর আব্যশকীয় সম্মুখসারির শ্রমিককর্মীরা সমাজকে সজীব রেখেছেন। আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, সকল সম্মুখ সারির কর্মীরা মূল্যবান ও সংরক্ষণযোগ্য, যখন আমরা অর্থনীতি ও সমাজ পুনর্গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা এই অস্বভাবিক অবদান রাখছি অভিবাসন অধিকারসমূহের একটি স্থায়ী বর্ধিতকরনের জন্য, যার অর্থ হচ্ছে, বৈরী পরিবেশের অবসান, ডিটেনশন কেন্দ্রগুলো বন্ধকরণ এবং যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রত্যেকের জন্য অনির্দিষ্টকালীন থাকার অনুমতি প্রদান।