নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণে দগ্ধ ১৮ জনের মৃত্যু
ঘুষের টাকা না পেয়ে মসজিদ কমিটির আবেদনে সাড়া দেয়নি তিতাস
নারায়ণগঞ্জের বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রথম মৃত্যু হয় জুয়েল নামে এক শিশুর। এরপর রাতে ও আজ সকালে বাকিদের মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশের পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিমতল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে মসজিদের ছয়টি এসি পুড়ে গেছে। জানালার কাচ উড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে ৯ মাস আগেই গ্যাস লাইন লিকেজ মেরামতের জন্য লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হলেও ৫০ হাজার টাকার জন্য কাজ করেনি তিতাস। এমনটাই অভিযোগ নারায়ণগঞ্জ পশ্চিম তাল্লা বায়তুল সালা জামে মসজিদ কমিটির। এবিষয়ে তদন্ত চলছে, কেউ দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এদিকে, বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
লাইনের লিকেজ থেকেই গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয় নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা বাইতুল সালাহ জামে মসজিদটি। শুক্রবার রাতে এশার নামাজের সময় বিকট শব্দে মসজিদের পর পর ছয়টি এসিই বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। দগ্ধ হন মসজিদের অর্ধ শতাধিক মুসল্লী।
বিস্ফোরণে মসজিদের সবগুলো জানালার কাচ উড়ে যায়। দগ্ধ মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বাইরে ছুটে এসে রাস্তায় জমে থাকা পানিতে গড়াগড়ি খেতে শুরু করে।
আজ শনিবার সকালে মসজিদ পরিদর্শনে যান তিতাসের এমডি, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। গ্যাস লিকেজের লাইন ঠিক করতে ৯ মাস আগে তিতাসকে জানানো হলেও ৫০ হাজার টাকা ঘুষ না দেয়ার কারণে কাজ হয়নি বলে দাবি মসজিদ কমিটির সভাপতির।
নারায়ণগঞ্জ পশ্চিম তল্লা বাইতুল সালাহ জামে মসজিদের সভাপতি আব্দুল গফুর মেম্বার বলেন, যখন থেকেই গ্যাস লাইন লিকেজ হতে থাকে এটি মেরামত করার জন্য আমরা সাথে সাথেই কিন্তু তিতাসকে জানিয়েছি। তখন তারা আমাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাইছিল, আমরা টাকাটা যোগাড় করতে পারি নাই বলে সেটী আর মেরামত করা হয়নি।
এবিষয়ে তদন্ত চলছে, কেউ দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মোহাম্মদ আল মামুন। তিনি বলেন, কমিটি এই বিষয়ে তদন্ত করবে।যদি কেউ বিষয়ে গাফিলতি করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, গ্যাস লিকেজ ধরেই তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক ও তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব নূর হাসান। তিনি বলেন, আমরা আলামত সংগ্রহ করছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। গ্যাস লিকেজ এবং বিদ্যুৎ এর বিষয় মাথায় রেখেই আমরা তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি।
ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্য প্রতিবেদন জমা দেবে তারা। এছাড়া, তিতাস ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে।