২২ হাজার চাকরির প্রতিশ্রুতি

শুরু হলো ব্রিটেনের দ্রুতগতির রেল প্রকল্প এইচএসটু’র নির্মাণকাজ

অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো যুক্তরাজ্যের বিতর্কিত দ্রুতগতির রেল প্রকল্প এইচএসটুর নির্মাণকাজ। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো বলছে, এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে আগামী কয়েক বছরে ২২ হাজারের মতো চাকরি সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, এইচএসটু দেশের অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার করবে। সহায়তা করবে দেশজুড়ে পুনরায় সুযোগের ভারসাম্য সৃষ্টি করতে।
বরিস জনসন গত ফেব্রুয়ারিতে এইচএসটু প্রকল্পে সম্মতি জানান। এরপর লকডাউনের মধ্যেই এপ্রিলে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক সরকারি অনুমোদন দেয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা একে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্য যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বললেও প্রকল্পটির বিরুদ্ধে সমালোচনাও নেহাত কম হচ্ছে না।

সমালোচকদের মতে, এ প্রকল্পের ফলে কর্মসংস্থান হারাবে অনেক মানুষ। এইচএসটু মূলত লন্ডন, বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টার ও লিডসের মধ্যে সরাসরি রেল সংযোগ স্থাপন করবে। সরকার আশা করছে, ২০ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প যুক্তরাজ্যে অতিরিক্ত যাত্রী ভিড় হ্রাসের পাশাপাশি লন্ডনের বাইরে পরিবহন সংযোগে বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।
এ বিষয়ে এইচএসটু লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মার্ক থার্সটন বলেন, এ প্রকল্প ব্রিটেনের বৃহত্তম শহরগুলোর মধ্যে দ্রুতগতির ভ্রমণের বস্তবতাকে আরো এক ধাপ সামনে এগিয়ে নিল। ২০০৯ সালে প্রকল্পটি নিয়ে যখন আলোচনা শুরু হয়, তখন এর আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৭৫০ কোটি পাউন্ড। কিন্তু ২০১৫ সালের বাজেটে দাপ্তরিকভাবে এ ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৫ হাজার ৬০০ কোটি পাউন্ড। কিন্তু তখন থেকেই সরকারি এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, প্রকল্পটির ব্যয় ১০ হাজার কোটি পাউন্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি করতে হতে পারে প্রকল্পের মেয়াদ।
কিছু সমালোচকের মতে, এইচএসটু হলো একটি আত্মম্ভরী ও অন্তঃসারশ‚ন্য প্রকল্প। এর বিপরীতে বরং প্রকল্পের বিপুল অর্থ উত্তর ইংল্যান্ডের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে ব্যয় করা অধিকতর যুক্তিসংগত। অন্যদের মতে, এ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাবে।
কিন্তু সমালোচকের এ অবস্থানের বিপরীতে এইচএসটুর সপক্ষে বরাবরই নিজের অবস্থান ও মত প্রকাশ করে আসছেন বরিস জনসন। তিনি জানান, এ প্রকল্প যুক্তরাজ্যকে পুনরায় সার্বিকভাবে শক্তিশালী করার পরিকল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে। তাছাড়া এটি দেশের পরিবহন ব্যবস্থার মেরুদন্ড হিসেবে কাজ করবে। তবে অর্থনীতির ইতিবাচক রূপান্তরে এইচএসটুর সম্ভাবনা কিন্তু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়।
বরিস জনসনের মতে, প্রকল্পটি শিক্ষানবিশ ও দক্ষ কর্মী হিসেবে কয়েক হাজার মানুষের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে। দেশজুড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতর পাশাপাশি আগামী বছরগুলোয় সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে।
ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসে প্রকল্পটির কাজের প্রধান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বালফোর বিটি জানিয়েছে, প্রকল্পকে কেন্দ্র করে আগামী দুই বছরে ওয়েস্ট মিডল্যান্ডে বেশ বড় ধরনের নিয়োগ হবে। এক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেয়া হতে পারে সাত হাজার পর্যন্ত। আরেক জয়েন্ট ভেঞ্চার অংশীদার ইকেএফবি জানিয়েছে, তারা তাদের অংশের কাজে নিয়োগ দিতে পারে চার হাজারের মতো কর্মী। এছাড়া বৃহত্তর লন্ডনভিত্তিক স্কানস্কা কোস্টেইন ট্রাবাগ, বালফোর বিটি ভিঞ্চি সিস্ট্রা, অ্যালাইন জেভি ও মেইস ড্রাগাডোস জেভি সম্মিলিতভাবে ১০ হাজারের বেশি কর্মী নিয়োগের কথা জানিয়েছে।
এইচএসটু লিমিটেড নিজেই এরই মধ্যে আগামী তিন মাসে ৫০০ জনকে নিয়োগ দেয়া শুরু করেছে। কিন্তু চাকরি সৃষ্টির এ সম্ভাবনার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন সমালোচকরা।
আন্দোলনকারী গোষ্ঠী স্টপ এইচএসটু বলছে, বরিস জনসন ও অন্য যারা ২২ হাজার চাকরি সৃষ্টির কথা বলছেন, তারা ভেতরের অনেক কিছুই উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকছেন। যেমন এ প্রকল্পে যত চাকরি সৃষ্টি হবে ঠিক সমপরিমাণ মানুষ যে স্থায়ীভাবে কর্মসংস্থান হারাবে, সেকথা উল্লেখ করা হচ্ছে না। স্টপ এইচএসটুর চেয়ারউইম্যান পেনি গেইনস এ প্রকল্পকে বন্যপ্রাণীদের জন্য পরিবেশগতভাবে ধ্বংসাত্মক বলে উল্লেখ করেন এবং ঠিক এজন্যই বর্তমানে হাজার হাজার আন্দোলন কর্মী প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তারা খুব সহজে হাল ছাড়ছেন না।
তবে আঞ্চলিক অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য আন্দোলনরত দ্য নর্দান পাওয়ারহাউজ পার্টনারশিপ (এনপিপি) বলছে, উত্তরের রেল যোগাযোগের সক্ষমতা বৃদ্ধি এ অঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মধ্য দিয়ে আমাদের মফস্বল ও শহরগুলোর মধ্যে যে সংযোগ সৃষ্টি হবে তা বর্তমানে ও ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক পুনরুৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মূলত তিন বছর ধরেই এ নতুন রেললাইনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। অনেক এলাকায় এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছিল নির্মাণকাজ। কিন্তু তার পরও সত্যিকার অর্থেই রেলপথ নির্মাণ করা হবে কি হবে না, তা নিয়ে বিতর্কের অবসান হচ্ছে না। সরকার বহু আগে থেকেই দেশের অর্থনীতির পুনর্গঠনে এ প্রকল্পের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। আর বর্তমানে বলছে যে প্রকল্পটি চাকরি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে কভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনর্গঠনেও সহায়তা করবে। -বিবিসি

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button