ফারলো শেষ হয়ে যাচ্ছে, বেকারত্ব উর্ধমুখী হওয়ার আশংকা
ব্রিটেনে ফুড ব্যাংকের চাহিদা বৃদ্ধির রেকর্ড
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাস মহামারিতে প্রথমবারের মতো ফুড ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হয়েছেন ১০ হাজার লোক। এতে দেখা যায়, ফুড পার্সেলের চাহিদা এই শীতে গতবারের এ সময়ের তুলনায় ৬১ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের সর্ববৃহৎ ফুড ব্যাংক প্রোভাইডার ট্রাসেল ট্রাস্ট-এর বিশ্লেষণ অনুসারে, চলতি বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৮৪৬০০০টি ফুড পার্সেল বিতরণ করা হবে। প্রতি মিনিটে ৬টি করে। কারণ, ফারলো শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং বেকারত্ব উর্ধমুখী হওয়ার আশংকা বিদ্যমান।
চ্যারিটির পক্ষে হোরিওট-ওয়াজ ইউনিভার্সিটি কর্তৃক পারিচালিত এই গবেষণায় আরো দেখা গেছে ,মহামারির শুরুতে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক লোক, যারা ট্রাসেল ট্রাস্ট নেটওয়ার্কের কোন ফুড ব্যাংক ব্যবহার করেন, এর আগে তাদের এ ধরনের কিছুর কখনো প্রয়োজন হয়নি ।আর ছেলেমেয়েসহ পরিবারগুলো সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় নিপতিত।
সর্বশেষ ডাটায় দেখা গেছে, প্রায় ১ লাখ গৃহস্থালী ট্রাসেল ট্রাস্ট নেটওয়ার্কের একটি ফুডব্যাংক থেকে সহায়তা গ্রহণ করেছে এই প্রথমবারের মতো চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে।
লন্ডনের ব্রেন্ট এলাকায় প্রয়োজন রয়েছে এমন স্থানীয় লোকজনের মাঝে ফুড পার্সেল ও তৈরী খাবার উভয় বিতরণকারী গ্রানভিল কমিউনিটি কিচেন-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডী উডস্,বলেন, লকডাউন শুরুর পর থেকে চাহিদা ৭০০ গুণ বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। এখন প্রতি সপ্তাহে ৭০০ লোককে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। গত মার্চে ছিলো মাত্র ১০০ জন।
তিনি বলেন, এই বৃদ্ধির জন্য চাকুরী হারানো লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি দায়ী, যারা ফারলোর সুবিধা পায়নি কিংবা সরকারী সহায়তা পাওয়ার যোগ্য নয় (এনআরপিএফ), কাজে আছে অথচ কর্মঘন্টা হ্রাস পেয়েছে কিংবা যাদের বেনিফিট তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না, এদের অনেককে লকডাউনের সময় হোটেলসমূহে নিয়ে রাখা হয়েছে কিন্তু এখন তাদের সেই স্থান ছেড়ে দিতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন,অনেকেই আগে কখনো একটি ফুডব্যাংক ব্যবহার করেনি। এখন তাদেরকে এদিকে তাকাতে হচ্ছে এবং তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। তারা কখনো ভাবতে পারেননি যে, খাবারের জন্য তাদেরকে সাহায্য চাইতে হবে। অনেক সময় তারা খাদ্য ছাড়াই থেকেছেন কয়েকদিন। আসলেই এটা হৃদয়বিদারক।
ট্রাসেল ট্রাস্ট এই বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে যে, কোন পদক্ষেপ না নিলে ২০২০ সালের শেষ নাগাদ ৬৭০০০০ অতিরিক্ত লোক অসহায় শ্রেণীভুক্ত হতে যাচ্ছে।
দাতব্য সংস্থাটির চীফ এক্সিকিউটিভ এমমা রেভি বলেন, ফারলো স্কীম যেহেতু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাই আমাদেরকে অবশ্যই পরস্পরের সুরক্ষার জন্য এখন নতুন কিছু করবে হবে। বাজেট এবং নিবিড় ব্যয় পর্যালোচনা সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি প্রধান সুযোগ হতে পারে।
অ্যাকশন ফর চিলড্রেন-এর ডেপুটি চীফ এক্সিকিউটিভ ক্যারল ইড্ডন বলেন, উক্ত পরিবারগুলোর জীবন হালকা সূতোর ওপর ঝুলছে কারণ তারা তাদের জীবণের সবচেয়ে শোচনীয় শীতকালের একটির মুখোমুখি।
তিনি আরো বলেন, সরকারকে সংগ্রামরত পরিবারসমূহকে এই মর্মে নিশ্চিত করতে হবে, নভেম্বরের বাজেট এটা স্পষ্ট করেছে যে,বসন্ত ইউনিভার্সেল ক্রেডিট সপ্তাহে ২০ পাউন্ড পর্যন্ত কর্তন করা হবে না।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফুড এইড নেটওয়ার্ক -এর সমন্বয়ক স্যাবাইন গুডউইন বলেন, সংখ্যার দিক দিয়ে ট্রাসেল ট্রাস্টের ১২০০ ফুড ব্যাংক শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে,কমপক্ষে ৯১৬টি স্বাধীন ফুড ব্যাংক প্রতি সপ্তাহে জরুরী ফুড পার্সেল বিতরণ করছে -যার সবগুলোরই ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি লক্ষণীয়।
সরকারের জনৈক মুখপাত্র বলেন, আমরা যাদের প্রয়োজন রয়েছে এমন লোকজনের সহায়তায় ৯.৩ বিলিয়ন অতিরিক্ত কল্যাণ সহায়তা প্রদান করেছি, যার মধ্যে সপ্তাহে ২০ পাউন্ড পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান ইউনিভার্সেল ক্রেডিট রয়েছে, এছাড়া আমরা ইনকাম প্রোটেকশন স্কীম, মর্গেজ হলিডে ও ভাড়াটেদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা চালু করেছি।
তিনি আরো বলেন, মধ্য মার্চ থেকে আমরা ইউনিভার্সেল ক্রেডিটের ৩.৯ মিলিয়ন দাবির সহায়তা প্রদান করেছি এবং ঐ সব লোকজনের মাঝে ১৩ লাখ আগাম পরিশোধ প্রদান করেছি, যাদের অপেক্ষা করার সুযোগ ছিলো না।