আবের দেখানো পথেই তিনি চলবেন বলে ধারণা

জাপানে নতুন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা

প্রধানমন্ত্রিত্বের পাশাপাশি সুগা এলডিপির নেতৃত্বও দেবেন

জাপানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ইয়োশিহিদে সুগা। ক্ষমতাসীন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির ভোটে সোমবার তিনি দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। চলতি সপ্তাহের আরও পরের দিকে তিনি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। ৭১ বছরের সুগা এর আগে মন্ত্রিসভার ‘চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি’ (মুখ্য সচিব) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ইয়োশিহিদে সুগাই যে দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হবেন, তা অনেকটাই নিশ্চিত ছিল। যদিও তিনি ছাড়াও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিগেরু ইশিবা, আবের মন্ত্রিসভার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী তারো কোনো, বর্তমান উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালনকারী তারো আসোর নামও শোনা যাচ্ছিল। তবে সবাইকে হারিয়ে ইয়োশিহিদে সুগাই শিনজো আবের উত্তরসূরি হলেন।

এর আগে ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে জাপানে ব্যাপক টানাপড়েন শুরু হলে পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। পরে মিত্রদের সঙ্গে জোট গড়ে ২০১২ সালে ফের শিনজো আবের ক্ষমতায় ফেরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ঝানু ও প্রভাবশালী রাজনীতিক এই ইয়োশিহিদে সুগা।
২০১২-২০২০ পর্যন্ত ৮ বছর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতা শিনজো আবের শাসনামলে ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ হিসেবে পরিচিত থাকলেও পদত্যাগের ঘোষণার সময় পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি শুধু বলেছিলেন, কে নেতা হবেন, তা পার্লামেন্ট ঠিক করবে। অবশেষে সোমবার পার্লামেন্টেই সুগাকে নির্বাচিত করা হলো। সোমবার তিনি ক্ষমতাসীন দলটির নেতৃত্ব নির্বাচনের ভোটে তিনি নিরঙ্কুশ জয় পান।
এলডিপির সভাপতি নির্বাচনে জাপানের স্থানীয় সময় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দলীয় এমপিদের ৩৯৪ ভোট আর ৪৭টি প্রদেশের তৃণমূল নেতাদের ১৪১টি ভোট গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি ভোট কম পড়ে। ভোটের ফল স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, মোট ৫৩৪ ভোটের মধ্যে ইয়োশিহিদে সুগা পেয়েছেন ৩৭৭ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা পেয়েছেন ৮৯। আর অপর প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিগেরু ইশিবা পেয়েছেন ৬৮ ভোট। নিয়ম অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচিত সভাপতিই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বুধবার পার্লামেন্টে আরেকটি ভোটে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়া হবে। পার্লামেন্টে এলডিপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের নতুন নেতাই নিশ্চিতভাবে জাপানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রিত্বের পাশাপাশি সুগা এলডিপির নেতৃত্বও দেবেন।
জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদের প্রধানমন্ত্রী আবের উত্তরসূরি হিসেবে মন্ত্রিসভাসহ বড় বড় গণমাধ্যমের সমর্থনও ছিল সুগার পক্ষেই। সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কোইচি নাকানো বলেছেন, গণমাধ্যম সুগাকে স্থলাভিষিক্ত করে আবের পুরনো মন্ত্রিসভা দিয়েই সরকার চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।’
২০১২ সালে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সুগাকে মন্ত্রিসভার তথা সরকারের শীর্ষপদ ‘চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি’ করেন আবে। প্রভাবশালী এ পদের মাধ্যমে তিনি নানামুখী ক্ষমতা পেয়েছেন। যেমন সরকারের শীর্ষ মুখপাত্র হিসেবে কাজ করা এবং নীতিনির্ধারণে সহায়তা ছাড়া আমলাদেরও নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর সুগা আবের দেখানো পথে চলবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ৭১ বছর বয়সী এই নেতা জানিয়েছেন, তিনি আবে প্রশাসনের অর্থনৈতিক নীতিমালা অনুসরণ করবেন। তিনি বলেন, ‘আমি আবের নীতিমালা অনুসরণ করতে চাই এবং অর্থনীতিকে আরও সম্প্রসারিত করতে চাই।’ নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি শিনজো আবের রেখে যাওয়া প্রধানমন্ত্রিত্বের ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ পূরণ করবেন।
অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে গত ২৮ অগাস্ট হঠাৎ করেই জাপানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন আবে। জাপানে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আবে বেশ কয়েক বছর ধরে ‘আলসারেটিভ কোলাইটিস’ রোগে ভুগছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button